ঘরোয়া ক্রিকেটের সেরা পারফর্মার হয়েও সৈকত কেন নেই জাতীয় দলে

ঘরোয়া ক্রিকেটের সেরা পারফর্মার হয়েও সৈকত কেন নেই জাতীয় দলে

মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত

ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে আবাহনীর হয়ে সবচেয়ে বেশি রানের মালিক মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত। দলের বড় বড় তারকা ক্রিকেটাররা যখন ছিলেন জাতীয় দলের খেলায়, এমন সময় দেশের ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সফল এই ক্রিকেট ক্লাবকে প্রায় একাই টানেন সৈকত।

গেল ম্যাচেও আবাহনী অলআউট হয়ে গেল ১৩১ রানে মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত ৫৭ বলে ৬৫ রান তুলেছেন। চলিত মৌসুমে ৫৪ গড় ও ৯৪ স্ট্রাইক রেটে ৫৪২ রান তুলেছেন সৈকত। তিনি দেশের হয়ে তিনটি টেস্ট ম্যাচ ও ৪০টির মতো ওয়ানডে ম্যাচ খেলেছেন। এর আগে ৪ ম্যাচে তিনি ১৪৮ রান তুলেছিলেন ঘরোয়া ওয়ানডে লিগ বিসিএল-এ।

টানা পারফর্ম করেও মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত জাতীয় দলে কোনো এক কারণে ডাক পান না।

এ প্রসঙ্গে জাতীয় দলের নির্বাচন কমিটির সদস্য হাবিবুল বাশার বলেন, এখন এটা একটা মধুর সমস্যা। আপনি মোসাদ্দেক বলেন আর বিজয়, এখানে আমাদের পারফর্ম করছে এমন ক্রিকেটার আছেন। যারা আফগানিস্তান সিরিজে ভালো করেছে, যারা দক্ষিণ আফ্রিকায় প্রথমবারের মতো সিরিজ জিতে এসেছে এই কিছুদিন আগে।

কিন্তু যারা ঘরোয়া ক্রিকেটে ভালো করছে তাদের কি বিবেচনায় রাখা হচ্ছে?

হাবিবুল বাশার বলেন, বিবেচনায় না রাখার তো প্রশ্নই আসে না। এরা সবাই বিবেচনায় আছে। যখন কোনো সিরিজ সামনে আসে তখন আমরা ভাবি কাকে রাখা যায়। কিন্তু এখন তো ওয়ানডে ফরম্যাটে খুব একটা বদলের জায়গা নেই। দলের বাইরে যারা আছেন সবাই বিবেচনায় আছেন, এর পরও আমাদের তো নির্দিষ্ট ক্রিকেটারকে নিতে হবে।

ক্রিকেট বিশ্লেষক সৈয়দ আবিদ হুসেইন সামির মতে, সৈকত ডমেস্টিকে পারফর্মার, কোন পজিশনে খেলেছেন এটাও গুরুত্বপূর্ণ। তিনি মূলত ওয়ানডে ফরম্যাটের দিকে জোর দিয়েছেন, মোসাদ্দেক একদিনের ক্রিকেটে সাত বা আট নম্বর পজিশনে ব্যাট করেন। সামি এখানে দেখিয়েছেন কিভাবে গত ৩ বছরে এই জায়গাটা পাকা করেছেন আফিফ হোসেন ধ্রুব।

তিনি বলেন, টেকনিক্যাল জায়গাটা যদি দেখি সেখানে আফিফ ও মিরাজ খেলছেন। আফিফ কিন্তু ওই জায়গায় আস্থার প্রতিদান দিচ্ছেন। মিরাজের বোলিংয়ের জায়গাটা শক্তিশালী।

এই ক্রিকেট বিশ্লেষক আরো বলেন, ২০১৯ সালের ওয়ানডে ক্রিকেট বিশ্বকাপে মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত খেলেছেন, কোনো ম্যাচেই ৩০ রানও তুলতে পারেননি। এরপর মোসাদ্দেক হোসেন সৈকতকে শ্রীলঙ্কা সফরেও নিয়ে যাওয়া হয় ২০১৯ সালেই। সেখানে তিনি ১২ ও ১৩ রান করেন দুই ওয়ানডে ম্যাচে। মোসাদ্দেকের বিশ্বকাপ এবং তার পরের ব্যর্থতায় আফিফ দলে সুযোগ পেয়েছেন এবং তা কাজে লাগিয়েছেন।

সামি বলেন, মোসাদ্দেক নিজেও অনেক সুযোগ হেলায় হারিয়েছেন। গত আট-দশ ইনিংসে মাত্র একটা হাফ সেঞ্চুরি। এখানে এই ক্রিকেটারের পেছনে বিনিয়োগ করতে গেলে অনেকগুলো ফ্যাক্টর ভাবে ক্রিকেট বোর্ড। যদিও অফিসিয়াল নয় কিন্তু মোসাদ্দেকের ব্যক্তিগত জীবনের কিছু ঘটনা এখানে প্রভাব ফেলেছে। মোসাদ্দেক হোসেন সৈকতের জাতীয় দলে সুযোগ না পাওয়াটা টেকনিক্যাল না, এটা ডিসিপ্লিনারি। পেস বল খেলতে সমস্যা হচ্ছিল, চোখের অপারেশন হয়েছে, সুযোগ দেয়া হয়েছে কিন্তু মুগ্ধ করতে পারেননি তিনি।

ওয়ানডে ফরম্যাটে আসলেই কঠিন, তবে টেস্ট ফরম্যাটে একটা সুযোগ পেতে পারেন বলেই মনে করেন আবিদ হুসেইন সামি। মাত্র তিনটি টেস্টের একটিতে ম্যাচ উইনিং একটা নকও আছে, যেখানে তিনি বাংলাদেশের টেস্ট ইতিহাসের শততম ম্যাচে ৭৫ রানের একটি ইনিংস খেলে সাকিব আল হাসানের সাথে জুটি বেঁধে ম্যাচ জেতান। এরপর মাত্র দুটি টেস্ট ম্যাচে দলে ডাক পান মোসাদ্দেক যার মধ্যে একটি ২০১৯ সালে আফগানিস্তানের সাথে যে টেস্টে বাংলাদেশ হেরে গিয়েছিল।

এ প্রসঙ্গে মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত বলেন, জাতীয় দলের বাইরে মানে বাইরেই। তবে জাতীয় দলের হয়ে খেলার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। ‘আমার কাজ ভালো খেলা। বাকিটা ঠিক করবেন নীতি নির্ধারকরা, তারা সিদ্ধান্ত নেবেন কখন কাকে দলে নেয়া হবে এবং হবে না।’

সূত্র : বিবিসি