সাওমের মিষ্টতা

সাওমের মিষ্টতা

সাওমের মিষ্টতা

প্রচণ্ড উত্তাপ শেষে একপশলা ঝুম বৃষ্টির মাঝে যেমন অদ্ভুত এক মাটির সোঁদা গন্ধের সাথে ঝিরিঝিরি শীতল বাতাস হৃদয়ে প্রশান্তির পরশ বুলিয়ে দেয় তেমনি খুব অল্প সময়ের জন্য সাওম অন্তরাত্মা প্রশান্তিতে ভরিয়ে দিতে পারে। কেউ এর মিষ্টি গন্ধ আর বাতাস গায়ে লাগাতে পারে আর কেউ তা থেকে নিজেকে বঞ্চিত করে।

কিভাবে সাওম অন্তরাত্মাকে মিষ্টতা দিতে পারে তা শুধু উপরের পর্যায়ের সাওম পালনকারীরাই অনুভব করতে পারে। নামাজ যেমন প্রিয় নবীজী সা:-এর অন্তর ও চক্ষু শীতলতাকারী তেমনি সাওম ও ঈমানের শক্ত ইমারত গড়তে সাহায্যকারী। সাওমের আনন্দের অনুভূতি কিছুটা ঈমানের স্তরের মতো।

ঈমানের যেমন শুরুর স্তর ইসলাম তারপর ঈমান তারপর ইহসান তেমন সাওমের উপরের স্তরে আছে সাওমকে উপভোগ করা এবং এর মাঝে আনন্দ খুঁজে পাওয়া। খুব কমসংখ্যক সাওম পালনকারীই এই উপরের স্তরে যেতে পারে। এই অনুভূতি তখনই অনুভব করা সম্ভব যদি কেউ মনে করে অন্ধকার ঘরেও আল্লাহ আমাকে দেখছেন এবং শুধু আল্লাহকে খুশি করার জন্যই আমি সাওম করছি। যেমন হাদিসে এসেছে ‘ইহসান হচ্ছে এমনভাবে আল্লাহর ইবাদত করা, যেন আপনি আল্লাহকে দেখছেন’ (বুখারি-৫০)।

আমাদের প্রিয় নবী সা: যখন তায়েফ গেলেন তখন তায়েফবাসী পাহাড়ের নিচে পর্যন্ত পাথর নিক্ষেপ করছিল আর নবীজীর শরীরে রক্ত ঝরছিল ক্লান্ত ও ভঙ্গুর হৃদয়ে তিনি বলেছিলেন ‘ও আল্লাহ আপনি যদি আমার ওপর অসন্তোষ না হন, তবে যা হয়েছে তা কিছুই না।’ তাঁর এই কৃতজ্ঞতাপূর্ণ প্রশান্ত হৃদয়ের উক্তি যেন ছিল বরফশীতল পানির মতো, যা কি না অসম্ভব পিপাসার্ত মানুষের পিপাসা মেটাতে সক্ষম। নবুওয়াতের যে উজ্জ্বল আলোর ঝলকানি এই উক্তি প্রকাশ করে ঠিক তেমনি অভুক্ত পাকস্থলী ক্ষুধা ও তৃষ্ণার্ত হয়ে ও শুধু আল্লাহকে খুশি করতে যে আনন্দ উপভোগ করে সেটাই সাওম পালনকারীর মিষ্টতা। হয়তো অনেকেই বলবে না খাওয়ার মধ্যে কিভাবে আনন্দ থাকতে পারে, যারা শুধু খাওয়ার জন্য বেঁচে থাকে আনন্দ ফুর্তি করে দিন পার করে তারা কখনো ঈমানের মিষ্টতা কিংবা সাওমের মিষ্টতা উপভোগ করতে পারে না। এখানে এদের বৈশিষ্ট্য চতুষ্পদ জন্তর মতো ‘যারা কুফরি করে আর ভোগ বিলাসে মত্ত থাকে এবং চতুষ্পদ প্রাণীর মতো ভক্ষণ করে’ (সূরা মুহাম্মদ-১২)।

অথচ একজন মুমিনের কাছে কখনো কখনো ক্ষুধার্ত থাকাটা ক্ষুধা নিবারণের চেয়েও অধিক আনন্দের। অল্প কিছু বান্দার পক্ষেই এটা অনুধাবন করা সম্ভব। সাওমের মাধ্যমে যে আনন্দ, মাধুর্য, স্নিগ্ধতা, উপভোগ্য ব্যাপার, উত্তেজনা এবং অপূর্ব সুবাস সেটা শুধু তখনই অনুভব করা সম্ভব যখন বুঝতে পারে যে, এই সাওম শুধুআল্লাহর জন্যই পালন করা হয়। হাদিসে কুদসিতে আল্লাহ বলেছেন, সাওম শুধু তাঁর জন্য। তিনি নিজেই এর পুরস্কার দেবেন। আর এটাই হচ্ছে ঈমান ও ইহতেসাব যেটা শুধু আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য করা হয়।

মানুষ তার প্রিয় মানুষের জন্য যেমন সবচেয়ে ভালো জিনিসটা উপহার দেয়, শুধু প্রিয় মানুষের মুখে হাসি দেখার জন্য, তেমন আল্লাহর খুশি দেখতেই ঈমানদার সাওম পালন করে। হয়তো কেউ মনে করবে তাহলে আল্লাহ কেন তাঁর বান্দাদের ভালোবাসার পরও এমন কষ্ট করে সাওম পালনের নির্দেশ দেন, তাহলে কিআল্লাহ আমাদের কষ্ট দিতে চান। আল্লাহর ইচ্ছা হচ্ছে এই এক মাস প্রশিক্ষণের পর তাঁর বান্দারা সারা বছর ঈমানের স্বাদ নিতে এভাবেই যেন কষ্ট করে যায়। যদিও এটা দেখতে আপেক্ষিক কষ্টের মনে হয় কিন্তু রোজাদারদের মনের খোরাক পূরণ হয় সাওম পালনের মাধ্যমেই।