ডিলারদের পাওনা বুঝিয়ে না দিয়েই ইউনিভার্সাল ফুড বন্ধের ঘোষণা, দিশেহারা ব্যবসায়ীরা

ডিলারদের পাওনা বুঝিয়ে না দিয়েই ইউনিভার্সাল ফুড বন্ধের ঘোষণা, দিশেহারা ব্যবসায়ীরা

ছবি- নিউজজোন বিডি

পাবনা প্রতিনিধি: সারাদেশে ছড়িয়ে থাকা ডিলারদের পাওনা কোটি কোটি টাকা পরিশোধ না করেই পাবনার টেষ্টি স্যালাইন খ্যাত ইউনিভার্সাল ফুড লিমিটেড বন্ধ ঘোষণা করা করা হয়েছে। ফলে বিপাকে পড়েছেন এর সাথে সংশ্লিষ্ট শতশত শ্রমিক-কর্মচারী, কর্মকর্তারাসহ সংশ্লিষ্টরা। পাওনা টাকার দাবিতে দিশেহারা ডিলাররা প্রতিষ্ঠানটি ঘেরাও করেছেন।

ইউনিভার্সাল ফুড লিমিটেড সূত্রে জানা যায়, ১৯৯০ সালের শুরুর দিকে পাবনা শহরের আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন শূটার মোবারক হোসেন রত্ব সিনেমা হল ব্যবসার পাশাপাশি ইউনিভার্সাল ফার্মাসিটিউক্যালস ও ফুড লিমিটেডের যাত্রা শুরু করেন। কয়েক বছরের ব্যাবধানেই ইউনিভার্সাল ফুড লিমিটেডের উৎপাদিত টেস্টি স্যালাইন নামের একটি পণ্য বাজারে ভোক্তাদের মধ্যে জনপ্রিয়তা পায়। এরপর ক্রমেই জনপ্রিয়তা পায় এই পণ্যটি।

২০০৭ সালের ১৯ মার্চ মোবারক হোসেন ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু বরণ করেন। তার মৃত্যুর পর প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব নেন মোবারক হোসেন রতœর ২য় স্ত্রী  সোহানী হোসেন। এ সময় মোবারক হোসেন রতœর পরিবারের ১ম স্ত্রী ও তার বোনদের বিতর্কিতভাবে প্রাপ্ত সম্পত্তি জোরপূর্বক দখলে নেয়ারও অভিযোগ ওঠে। এ নিয়ে আদালতেও দীর্ঘদিন মামলা মোকদ্দমাও চলছিল।

ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্ব নিয়েই সোহানী হোসেন বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ নিয়ে ব্যবসাটি সম্প্রসারণ করেন। স্যালাইনের পাশাপাশি গুড়া মসলা, চানাচুরসহ বিভিন্ন ভোগ্যপণ্য উৎপাদন ও বাজারজাত শুরু করেন। এ সময় তিনি এই ব্যবসার পাশাপাশি চলচ্চিত্র প্রযোজনাসহ বিভিন্ন ব্যবসায় বিনিয়োগ করেন।

গত বছরের মাঝামাঝি সময়ে ইউনিভার্সাল গ্রুপের ২৭০ কোটি টাকার রাজস্ব ফাঁকির ১২টি মামলা করেন তৎকালীন রাজশাহী বিভাগীয় কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেটের এক কর্মকর্তা। বিভিন্ন স্থানে তদবির করেও বিষয়টি নিষ্পত্তি না হওয়ায় এই জরিমানার টাকা কয়েক গুন বৃদ্ধি পায়।

এ সময় দেশের বিভিন্ন বড় বড় ডিলারদের নিকট থেকে প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক সোহানী হোসেন নিজে  ফোন করে প্রতিষ্ঠানটি বাঁচিয়ে রাখতে কোটি কোটি টাকার অগ্রিম টিটি গ্রহণ করেন। এসব টাকার বিনিময়ে প্রদেয় পণ্য বুঝিয়ে দিতে ব্যর্থ হয় প্রতিষ্ঠানটি। বিশেষ করে গত রমজান মাসে বাজারে টেষ্টি স্যালাইনের চাহিদা ব্যাপক আকারে বৃদ্ধি পাওয়ায় ডিলাররা বার বার পণ্যের জন্য চাপ দিয়েও ব্যর্থ হন। এ সময় প্রতিষ্ঠানটির আর্থিক অব্যবস্থাপনার বিষয়টি ডিলারদের কাছে প্রকাশ পায়।

ফলে ঈদের পর ব্যবসায়ীরা পাওনা টাকা ফেরত নিতে চাপ প্রয়োগ করলে তারা নানা প্রকার তালবাহানা শুরু করেন।

অতি গোপনে ইউনিভার্সাল ফুড লিমিটেডটি বুধবার বন্ধ করে দেয়ার খবরে ছুটে আসেন দক্ষিণাঞ্চলের ১৬ জেলার ডিলাররা। তারা দুপুর থেকে ইউনিভার্সাল ফুড লিমিটেডের প্রধান কার্যালয়, কারখানা ও ব্যবস্থাপনা পরিচালকের বাসভবনের সামনে অবস্থান নিলে বেকায়দায় পড়েন তারা।

কারখানা বন্ধের বিষয়ে জানতে প্রতিষ্ঠানটির প্রধান হিসাব কর্মকর্তা শাহীন আক্তার কারখানা বন্ধের বিষয়ে কোন মন্তব্য না করে এড়িযে যাওয়ার চেষ্টা করেন। তবে ডিলাররা এসে পাওনা টাকা চাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

অপরদিকে কারখানা ব্যবস্থাপক এমদাদ হোসেন ম্যাডামের সাথে রুপকথা ইকো রিসোর্টে আছি, পরে কথা বলছি বলেও দ্রুত ফোন রেখে দেন।

কুষ্টিয়া, রাজবাড়ি, চুয়াডাঙ্গা ও ঝিনাইদহের ডিলাররা সাংবাদিকদের বলেন, টেষ্টি স্যালাইনের মৌসুম শুরুর আগেই নানাভাবে কৌশলে কোটি কোটি টাকা নিয়ে তারা মালামাল সরবরাহ করেননি। এমডির স্বেচ্ছাচারীতায় ইউনিভার্সালের ব্যবসায়িক বিপর্যয় নেমে এসেছে। ইউনিভার্সাল ফুডের অর্থ অন্যত্র সরিয়ে ব্যবসায় লোকসান  দেখিয়ে আমাদের অর্থ আত্মসাতের পায়তারা করছেন। কারখানা বন্ধের খবর পেয়ে আমিসহ আমার এলাকার অনেক ডিলার টাকার জন্যে পাবনায় এসেছি।

গত ডিসেম্বরে ইউনিভার্সালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সোহানী হোসেন আমাকে টাকার কথা বললে আমি এক কোটি ১১ লক্ষ টাকার টিটি প্রদান করি। অথচ পুরো মৌসুমে আমাকে ১১ লাখ টাকারও মালামাল দেননি এই প্রতিষ্ঠান। আমি নিরুপায় হয়ে টাকার জন্যে পাবনায় এসেছি। আমার পথে বসার মতো অবস্থা হয়েছে।

এক পর্যায়ে পরিস্থিতি সামাল দিতে ইউনিভার্সেল গ্রুপের বাংলাবাজার এলাকার রুপকথা ইকো রিসোর্টে  বৈঠকে বসার জন্য ডেকে নেয়া হয়।  সেখানে ইউনির্ভাল ফুড লিমিটেড এর ব্যবস্থাপনা পরিচালকের সাথে ডিলারদের সমঝোতা  বৈঠক হয়। সেখানে ডিলারদের নিকট এক মাসের মধ্যে সকল পাওনাদি পরিশোধ করার প্রশ্রিুতি দেন সোহানী হোসেন। অধিকাংশ ডিলাররা তাদের পাওনা টাকা আদৌ ফেরত পাবেন কিনা সন্দিহান হলেও মানবিক বিবেচনায় সেখান থেকে বের হয়ে আসেন।

ইউনিভার্সাল ফুড লিমিটেড এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক সোহানী হোসেনের মুঠোফোনে বার বার চেষ্টা করেও এ বিষয়ে কথা বলা সম্ভব হয়নি।