আল জাজিরার নিহত সাংবাদিকের শেষকৃত্যের সময় ইসরাইলি পুলিশের লাঠিপেটা

আল জাজিরার নিহত সাংবাদিকের শেষকৃত্যের সময় ইসরাইলি পুলিশের লাঠিপেটা

ছবি: সংগৃহীত

পশ্চিম তীরে ইসরাইলি বাহিনীর গুলিতে নিহত আল জাজিরার সাংবাদিক শিরিন আবু আকলেহের শবযাত্রায় অংশ নেয়া মানুষজনের ওপর লাঠিপেটা করেছে ইসরাইলি পুলিশ।

শেষকৃত্যানুষ্ঠানে যারা সমবেত হয়েছিলেন, তাদের ওপর লাঠি নিয়ে হামলা চালায় পুলিশ। সেই সময় তার কফিনটি প্রায় মাটিতে পড়ে যাচ্ছিল।

পুলিশ দাবি করেছে, তাদের ওপর ইট-পাটকেল ছোড়ার কারণে তারা ওই অভিযান চালিয়েছে।

বুধবার আবু আকলেহ ইসরাইলি সৈন্যদের গুলিতে নিহত হন। তার মৃত্যুর কারণ নিয়ে ইসরাইলি ও ফিলিস্তিনি বাহিনী পরস্পরকে দায়ী করছে। বিশ্বজুড়ে এই হত্যাকাণ্ডের নিন্দা জানানো হয়েছে।

ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, হাসপাতাল কম্পাউন্ডে শিরিন আল আকলেহের কফিন ঘিরে দাঁড়িয়ে রয়েছে ইসরাইলি পুলিশ আর ফিলিস্তিনিরা। এরপর পুলিশের লোকজন ভিড়ের মানুষজনকে হটিয়ে দেয়ার চেষ্টা করে। পুলিশের সদস্যরা তাদের লাঠিপেটা করে এবং লাথি মারতে দেখা যায়।

বিবিসির মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক সংবাদদাতা টম বেটম্যান বলছেন, সেই সময় তিনি সেন্ট জোসেফ হাসপাতালে কার পার্কে দাঁড়িয়ে ছিলেন। শত শত ফিলিস্তিনি আবু আকলেহের কফিন ঘিরে মাতন করছিলেন।

‘ফিলিস্তিনি ক্রিশ্চিয়ান শিরিন আবু আকলেহের কফিনে শোকবার্তা ঝুলছিল, ফুলে সাজানো ছিল। অনেকেই কাঁদছিলেন।

‘হঠাৎ করে কম্পাউন্টের গেট আটকে দেয়া হয়। অন্যদিক থেকে ভারী অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত ইসরায়েলি সীমান্তরক্ষী বাহিনী আসে। তাদের কেউ কেউ ঘোড়ায় বসা ছিল।’

‘হঠাৎ করে ইসরাইলি পুলিশ শোকার্ত লোকজনকে ধাক্কা দিতে শুরু করে। কফিন যারা বহন করছিলেন, তাদেরও ধাক্কা দেয়া হয়। তারা শোকার্ত মানুষজন এবং সাংবাদিকদের ওপর শব্দ গ্রেনেড ছুঁড়ে মারে। পুরো ঘটনাটি প্রায় ১০ মিনিট ধরে চলে,’ বলছেন টম বেটম্যান।

জাতিসঙ্ঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের একজন মুখপাত্র বলেছেন, যেভাবে ইসরাইলি নিরাপত্তা বাহিনী এবং ফিলিস্তিনিদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটছে, তাদের তিনি খুবই অস্বস্তি বোধ করছেন। সেই সঙ্গে কিছু পুলিশের আচরণেও তিনি বিরক্ত।

হোয়াইট হাউজের মুখপাত্র জেন সাকিও বলেছেন, শবযাত্রায় অংশ নেয়া মানুষের ওপর যেভাবে পুলিশ আঘাত করেছে, তা খুবই অস্বস্তিকর।

‘যা একটি শান্তিপূর্ণ শবযাত্রা হওয়া উচিত ছিল, সেখানে এভাবে হস্তক্ষেপ করার আমরা নিন্দা জানাচ্ছি,’ তিনি বলেছেন।

ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ আর আল জাজিরা দাবি করেছে আবু আকলেহ ইসরাইলি বাহিনীর গুলিতে নিহত হয়েছেন। তবে ইসরাইলি বাহিনীর দাবি করেছে, কীভাবে তার মৃত্যু হয়েছে, তা তারা এখনো নিশ্চিত হতে পারেনি। তবে তিনি হয়তো ফিলিস্তিনিদের গুলিতে নিহত হয়ে থাকতে পারেন।

৫১ বছর বয়সী ফিলিস্তিনি-আমেরিকান সাংবাদিক শিরিন আবু আকলা আল জাজিরা নিউজের জন্য একজন যুদ্ধ সংবাদদাতা হিসাবে কাজ করছিলেন। গত দুই দশক ধরে তিনি ইসরাইল-ফিলিস্তিন লড়াই নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করে আসছেন।

ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের বাড়ির উঠোনে বৃহস্পতিবার তার শেষকৃত্যানুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। সেখানে তার কফিন ফিলিস্তিনি পতাকায় মুড়িয়ে আনা হয়।

মাহমুদ আব্বাস তার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেছেন, তার হত্যার জন্য ইসরাইল পুরোপুরি দায়ী। তিনি এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনাকে ইন্টারন্যাশনাল ক্রিমিনাল কোর্টে তুলবেন।

তবে ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী নাফতালি বেনেত বলেছেন, কোনোরকম ভিত্তি ছাড়াই ইসরাইলকে দোষারোপ করছেন আব্বাস।

বুধবার জেনিন শরণার্থী শিবিরে কাজ করছিলেন শিরিন আবু আকলেহ। সেই সময় অভিযান চালায় ইসরাইলি সামরিক বাহিনী। তাদের দাবি, 'সন্দেহভাজন সন্ত্রাসীদের' ধরতে তারা অভিযান চালিয়েছিল।

‘এই অভিযানের সময় ফিলিস্তিনি বন্দুকধারীরা সৈন্যদের দিকে গুলি চালায়ে এবং বোমা নিক্ষেপ করে। সৈন্যরা তখন বন্দুকধারীদের দিকে গুলি চালায় এবং হামলার কিছু লক্ষ্যবস্তু চিহ্নিত করা হয়।’

কাতার-ভিত্তিক টেলিভিশন নেটওয়ার্ক আল জাজিরা জানায়, ইসরাইলি বাহিনী 'ঠাণ্ডা মাথায়' এবং 'ইচ্ছেকৃতভাবে' ৫১ বছর বয়সী শিরিন আবু আকলেহকে গুলি করে। একই ঘটনায় তার প্রযোজকও গুলিবিদ্ধ হন।

ইসরাইলি সামরিক বাহিনী সাংবাদিকদের টার্গেট করে গুলি চালানোর কথা অস্বীকার করেছে।

ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী দাবি করেছেন, গোলাগুলি চলার সময় 'সম্ভবত' ফিলিস্তিনি বন্দুকধারীদের গুলি লেগেছিল এদের গায়ে।

এই ঘটনা এমন সময় ঘটলো যখন প্রায় দুই মাস ধরে চলা সহিংসতার পর ইসরাইল এবং ফিলিস্তিনিদের মধ্যে চরম উত্তেজনা চলছে।

ছুরিকাঘাত, গুলি, গাড়ি চাপা বা কুঠার হামলায় ১৭ জন ইসরাইলি এবং দু’জন ইউক্রেনিয়ান নিহত হয়েছেন। একই সময় গুলি অথবা ইসরাইলি অভিযানে অনেক ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।

সূত্র : বিবিসি