রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা নষ্ট হয় যে অভ্যাসে

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা নষ্ট হয় যে অভ্যাসে

টিকার কার্যকারিতাও কমিয়ে দিতে পারে ঘুমের ঘাটতি।

একাকিত্বের কারণেও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হতে পারে। চারপাশে নানান সংক্রামক রোগের প্রকোপ যেখানে লেগেই আছে সেখানে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা শক্তিশালী হওয়াটা খুবই জরুরি। যুক্তরাষ্ট্রের গ্লাসটোনবারি শহরের ‘প্রসপেক্ট ইসিএইচএন মেডিক্যাল ডিরেক্টর’ কেনেথ অ্যাব্রিওলা বলেন, ‘রোগ সৃষ্টিকারী জীবাণু, ভাইরাস, ব্যাক্টেরিয়া সব কিছুর বিরুদ্ধে লড়াই করে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা।’

তিনি আরো বলেন, শরীরের রক্তপ্রবাহ আর ‘লিম্ফ্যাটিক সিস্টেম’-এর পুষ্টি উপাদানের ওপর নির্ভরশীল এই রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা। তাই স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রা মেনে চলাই একে শক্তিশালী রাখার প্রধান উপায়।

মদ্যপান : একবার মদ্যপানেই শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত দুর্বল থাকে। যুক্তরাষ্ট্রের ডা: হিথার মোডে বলেন, ‘রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সৃষ্টিকারী যে কোষগুলো যেকোনো পরিস্থিতির সাথে মানিয়ে নিয়ে রোগ সৃষ্টিকারী জীবাণুর বিরুদ্ধে লড়াই করে সেগুলোর ওপরই ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে অ্যালকোহল।’ নিয়মিত মদ্যপান অন্ত্রের অভ্যন্তরীণ আস্তরের ক্ষতি করে। পাশাপাশি অন্ত্রে থাকা সুরক্ষা প্রদানকারী ‘টি সেল্স’ ও ‘নিউট্রোফিলস’-এরও ক্ষতি করে মদ্যপান।

ধূমপান : যুক্তরাষ্ট্রের ‘সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান প্রিভেনশন’ জানাচ্ছে, ধূপমানের অভ্যাস রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে দুর্বল করে দেয়ার কারণে জীবাণুর সাথে লড়াই করে সেগুলোকে ধ্বংস করতে পারার সম্ভাবনা কমে যায়। ফলে সাধারণ সর্দিজ্বর থেকে ক্যান্সার পর্যন্ত সব কিছুরই আশঙ্কা বেড়ে যায়। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার ভারসাম্যও নষ্ট করে ধূমপান। যে কারণে ‘অটোইমিউন ডিজিজ’-এর আশঙ্কাও বেড়ে যায়।

ঘুমের অভাব : ইউডব্লিউ মেডিসিন স্লিপ সেন্টার অ্যাট হার্বারভিউ মেডিক্যাল সেন্টারের সহ-পরিচালক ডা: নেথানিয়েল ওয়াটসন বলেন, ‘প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণে নির্ভেজাল ঘুম হওয়া স্বাস্থ্যকর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার জন্য অত্যন্ত জরুরি। ঘুম ভালো হলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সক্রিয় থাকে। আর তার জন্য প্রতিদিন ন্যূনতম সাত ঘণ্টা ঘুম আবশ্যক।’

টিকার কার্যকারিতাও কমিয়ে দিতে পারে ঘুমের ঘাটতি। কারণ করোনাভাইরাসের টিকা নিয়েছেন এমন মানুষকে পর্যালোচনায় দেখা গেছে এদের মধ্যে যাদের ঘুমের ঘাটতি আছে তাদের শরীরে ‘অ্যান্টিবডি’ তৈরি হয়েছে কম। আবার ঘুমের কমতি আছে এমন একজন যদি ‘রাইনোভাইরাস’-এর সংস্পর্শে আসে তাহলে তার সংক্রমণের শিকার হওয়ার সম্ভাবনা যার পর্যাপ্ত ঘুম হয় তার তুলনায় বেশি।

নিঃসঙ্গতা : একাকিত্ব আর মানসিক চাপ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার ওপর ভয়াবহ প্রভাব ফেলে। ইউভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়ার ‘জিনোমিকস’ বিষয়ক গবেষক স্টিভ কোল বলেন, নিঃসঙ্গ মানুষ কেন ক্যান্সার, ‘নিউরোডিজেনেরেটিভ ডিজিজ’ ও অন্যান্য ভাইরাসবাহী রোগে বেশি আক্রান্ত হয় তার কারণ এটাই। এ জন্য আমি বিশ্বাস করি মানুষের জন্য সবচাইতে ভয়াবহ অনুভূতি হলো নিঃসঙ্গতা।

অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস : ক্লিভল্যান্ডের অস্টেওপ্যাথিক মেডিসিনের চিকিৎসক ডা: ক্যাসান্ড্রা ক্যালাব্রেস বলেন, ‘স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসের জোরেই কাজ করে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা। তাই পুষ্টিকর খাবার খেলে তা যে আরো শক্তিশালী হবে তাতে সন্দেহের অবকাশ নেই।’