উপর তলায় থাকেন প্রক্টর-নিরাপত্তা কর্মকর্তা, নিচতলায় চুরি!

উপর তলায় থাকেন প্রক্টর-নিরাপত্তা কর্মকর্তা, নিচতলায় চুরি!

উপর তলায় থাকেন প্রক্টর-নিরাপত্তা কর্মকর্তা, নিচতলায় চুরি!

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) শিক্ষকদের আবাসিক ভবনের গ্রীল কেটে ভেতরে ঢুকে নগদ অর্থ ও স্বর্ণালংকার চুরির ঘটনা ঘটেছে। যমুনা নামক ভবনের নীচতলায় ধর্মতত্ত্ব অনুষদের ডিন অধ্যাপক এইচ এন এম এরশাদউল্লাহর বাসকক্ষে এ ঘটনা ঘটে। ধারণা করা হচ্ছে গত ৩ জুলাই চুরির ঘটনা ঘটে থাকতে পারে। বুধবার (৬ জুলাই) বিশ্ববিদ্যালয়ের সিকিউরিটি ইনচার্জ আবদুস সালাম সেলিম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

জানা যায়, ঈদের ছুটিতে ওই শিক্ষকের পরিবার গ্রামের বাড়ি খুলনায় অবস্থান করছিলেন। এই সুযোগে চোর বেলকনির গ্রীল কেটে ভেন্টিলেটর ভেঙ্গে ভিতরে প্রবেশ করে চুরির ঘটনা ঘটায়। পানির ট্যাপগুলো চুরি করে নিয়ে যাওয়ায় পুরো বাসায় পানি ছড়িয়ে পড়ে। পরে ভবনে পানির সংকট পড়লে ও নিচতলায় পানি দেখা গেলে মঙ্গলবার (৫ জুলাই) বিষয়টি নজরে আসে বলে জানা গেছে। চুরির খবর পেয়ে বুধবার ওই শিক্ষকের স্ত্রীসহ পরিবারের কয়েকজন সদস্য ক্যাম্পাসে আসেন। তারা জানান, কক্ষ থেকে নগদ বিশ হাজার টাকা ও তিন ভরি পরিমাণের স্বর্ণালংকারসহ বিভিন্ন সামগ্রী চুরি হয়েছে। 

এদিকে, ওই ভবনের দ্বিতীয় তলায় বিশ্ববিদ্যালয় সিকিউরিটি ইনচার্জ ও চতুর্থ তলায়  প্রক্টরের দায়িত্বে থাকা সহকারী প্রক্টর ড. শফিকুল ইসলাম থাকেন। তারা সেখানে অবস্থান করা সত্ত্বেও চুরির ঘটনায় ক্যাম্পাস ও আবাসিক এলাকার নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। আবাসিক অন্য শিক্ষকরা নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কার কথা জানান। 

রিফাত ইয়ামিন নামের পরিবারের এক সদস্য বলেন, আমাদের কাছে মনে হয়েছে এটি একটি সংঘবদ্ধ চুরি। আর ভবনের দেয়াল ও বেলকনিগুলো এতটাই দূর্বল যে চোরের খুব একটা কষ্টও করতে হয়নি হয়তো। প্রক্টর ও নিরাপত্তা কর্মকর্তা উপরতলায় থাকতেও এমন ঘটনায় বোঝা যায় ক্যাম্পাসে কতটা নিরাপত্তা ব্যবস্থা আছে। 

ভুক্তভোগী অধ্যাপক এরশাদউল্লাহ বলেন, আমি গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বিষয়টি জেনেছি। আজ আমার স্ত্রী গেছে দেখতে। আমরা তো ভাড়া দিয়ে থাকি। এরকম ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিতরের নিরাপত্তা প্রশ্নবিদ্ধই থেকে যায়। বিশ্ববিদ্যালয় খোলার পর ক্যাম্পাসে ফিরে আইনী পদক্ষেপ নেব।

জানা গেছে, গত ৩ জুলাই ক্যাম্পাস থেকে চোর সন্দেহে দুইজনকে আটক করা হয়। পরে তাদের ইবি থানায় নেওয়া হলে থানা কর্তৃপক্ষ মামলা করতে চায়। এসময় প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যরা উপস্থিত হলে দায়িত্বে থাকা প্রক্টর শফিকুল ইসলাম তাদের বয়স কম হওয়ায় মামলা না দিয়ে মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করেন। নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের ধারণা ছাড়া পেয়ে তারাই চুরির ঘটনা ঘটিয়েছেন।

সহকারী প্রক্টর শফিকুল ইসলাম বলেন, আমরা ক্যাম্পাসের নিরাপত্তার জন্য আবাসিক হল ও অন্য দিকগুলোতে বেশি ফোকাস দিয়েছিলাম। এর মাঝেই আবাসিক এলাকায় এমন দুর্ঘটনা ঘটে গেল। বিষয়টি আমাদের সবাইকে ভাবিয়ে তুলেছে। আমদের মাঝেও শঙ্কা রয়েছে। আবাসিক এলাকার ভবনগুলো খুবই পুরাতন ও দূর্বল৷ এখানে আগে এমন ঘটনা ঘটেনি, ফলে কিছুটা নিরাপত্তা ঘাটতিও আছে। আমরা নিরাপত্তা নিয়ে নতুন করে কিছু পদক্ষেপ নিচ্ছি।

সন্দেহভাজনদের ছেড়ে দেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, তাদের একজন ক্যাম্পাসে দোকানীর ছেলে অন্যজন ভ্যানচালক। তারা ক্যাম্পাসে পরিচিত। তাদের বিষয়ে আমাদের কাছে কোন ডকুমেন্ট ছিল না। তাদের এলাকার চেয়ারম্যান মেম্বাররা এসে মুচলেকা দিয়ে ছাড়িয়ে নিয়ে গেছেন। অন্য একজন পালিয়ে গিয়েছিল, শুনেছিলাম তার কাছে কিছু নির্মাণসামগ্রী ছিল। থানা থেকে তদন্ত চলছে। 

এ বিষয়ে ইবি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তাফিজুর রহমান জানান, আটককৃতদের নামে মামলা হওয়ার কথা ছিল। পরে প্রক্টরিয়াল বড়ির চারজন এসে মুচলেকা দিয়ে তাদের ছাড়িয়ে নিয়ে যায়।

আবাসিক কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক মামুনুর রহমান বলেন, আবাসিক এলাকায় নিরাপত্তাকর্মী কম এবং ভবনগুলোও অনেকটা পরিত্যাক্ত হওয়ার মতো। চুরির ঘটনার পর আমরা আজ মিটিং করেছি। নতুন করে কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। 

এর আগে গত ২ জুলাই থেকে ঈদুল আজহা উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ হয়ে যায়। সেদিন থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়াতে মাইকিং করে বহিরাগত প্রবেশ নিষিদ্ধ করে প্রশাসন। ফলে বিশ্ববিদ্যালয় পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন এলাকায় অবস্থানরত শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে ঢুকতে চাইলেও নিরাপত্তার দোহায় দিয়ে তাদের ঢুকতে দেয়া হয়নি বলে অভিযোগ শিক্ষার্থীদের।