বাংলাদেশে আসা নতুন মাদক কুশ সম্পর্কে কী জানা যাচ্ছে

বাংলাদেশে আসা নতুন মাদক কুশ সম্পর্কে কী জানা যাচ্ছে

বাংলাদেশে আসা নতুন মাদক কুশ সম্পর্কে কী জানা যাচ্ছে

বাংলাদেশের ঢাকায় আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অগাস্টের গোড়ার দিকে এক ব্যক্তিকে আটকের পর জানা গেছে যে তিনি নিজের বাড়িতেই একটি বিশেষ মাদক তৈরি করে বাজারজাত শুরু করেছিলেন, যা বাংলাদেশেই নতুন। এর আগে বাংলাদেশে এই মাদক ব্যবহারের কোন খবর পাওয়া যায়নি বলে জানা গেছে।

অপ্রচলিত অর্থাৎ নতুন এই মাদকটির নাম কুশ। একই সাথে তিনি বাজারজাত করছিলেন হেম্প, মলি, এডারল ও ফেন্টানিল সহ আরও কয়েকটি অপ্রচলিত ধরনের মাদক।মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর বলছে বিদেশ থেকে পড়ালেখা করে আসা ওই ব্যক্তি নিজের বাড়িতে কুশ তৈরির জন্য একটি পূর্ণাঙ্গ স্থাপনা তৈরি করেছিলেন।

অধিদপ্তর বলছে কুশের মতো অপ্রচলিত ধরনের কিছু মাদক বাংলাদেশে আসা শুরু হয়েছে, যদিও সাম্প্রতিক সময়ে বেশি উদ্বেগের কারণ হয়ে দেখা দিচ্ছে ক্রিস্টাল মেথ বা আইস।সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের পরিসংখ্যান অনুযায়ী চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত তাদের হাতেই ধরা পড়েছে প্রায় ৫৮ কেজি আইস, যার প্রতি কেজিই অপরাধ জগতে এক কোটি টাকার বেশি দামে বেচাকেনার কথা শোনা যায়।

এর মধ্যে শুধু জানুয়ারিতেই ধরা পড়েছিল ২২ কেজির বেশি আইস। যদিও ২০১৯ সালে যখন প্রথম আইস উদ্ধার হয়েছিলো ঢাকার ধানমন্ডির একটি বাসা থেকে তখন সেটি ততটা পরিচিত মাদক ছিল না।এখন আইসের বিস্তার অনেক বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি যোগ হচ্ছে নতুন নতুন মাদক। এরই একটি হলো কুশ।

'কুশ বেশি ভয়ংকর ক্ষতিকর'

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের প্রধান রাসায়নিক পরীক্ষক ড. দুলাল কৃষ্ণ সাহা বলছেন মাদক হিসেবে ''কুশ বেশি ভয়ংকর ও ক্ষতিকর''।

"এটি একটি সিনথেটিক মারিজুয়ানা, যা বাংলাদেশের প্রচলিত গাজা থেকে অন্তত একশগুণ বেশি শক্তিশালী। ঢাকায় যাকে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আটক করেছে তিনি গাজার সাথে অতিরিক্ত টেট্রাহাইড্রো ক্যানাবিনল (রাসায়নিক) মিক্স করে ট্যাবলেট ও লিকুইড আকারে কুশ তৈরি করছিলেন," বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন তিনি।

কর্মকর্তারা বলছেন যাকে আটক করা হয়েছে তিনি নিজের বাড়িতেই গ্রিন হাউজ তৈরি করে গাজার চাষ করছিলেন। পাশাপাশি সেই গাজার সাথে রাসায়নিক মিশিয়ে কুশ উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি বসিয়েছিলেন।ইউরোপ আমেরিকায় এটি মাদকসেবীদের কাছে বেশ জনপ্রিয় হলেও সেখানে এর আছে ভিন্ন ভিন্ন নাম। আর উপমহাদেশে এর পরিচিতি হলো কুশ নামে।

ড. দুলাল কৃষ্ণ সাহা বলছেন হিন্দুকুশ পর্বতমালা পাকিস্তান ও আফগানিস্তান অঞ্চলের একটি দুর্গম ও বিপদসঙ্কুল পর্বত এলাকা এবং কুশ মাদকে ব্যবহৃত গাজার চাষ বেশি হয় এই অঞ্চলে।তিনি বলছেন হিন্দুকুশ পর্বতমালা যেমন বৈরী, বিপদসঙ্কুল আর ভয়ংকর, এই কুশ মাদকটিও তেমনই ভয়ংকর।

"এ মাদকের প্রতিক্রিয়া অনেক বেশি। এটি সেবন করলে কোন বোধশক্তি থাকে না এবং নিজের ওপর নিয়ন্ত্রণ রাখা যায় না। অন্য মাদকের চেয়ে দ্রুতগতিতেই লিভার ও কিডনি বিকল করে দিতে পারে কুশ নামের এই মাদকটি," বলছিলেন তিনি।

গত ২রা অগাস্ট রাতে ঢাকার গুলশান থেকে এক ব্যক্তিকে আটকের পর দেশে প্রথমবারের মতো কুশ উদ্ধারের খবর দিয়েছিলো র‍্যাব।পরে র‍্যাবের সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয় যে যাকে আটক করা হয়েছে তিনি নিজে মাদক সেবন করেন না।

তবে তিনি নিজে মাদক তৈরি করে বা বিদেশ থেকে এনে নানা মাধ্যমে মাদকসেবীদের কাছে তা সরবরাহ করতেন।বিশেষ করে ঢাকার অভিজাত এলাকার পার্টিগুলোতে এগুলো সরবরাহ করা হতো এবং সেখানকার সূত্র থেকেই ওই ব্যক্তি সম্পর্কে তথ্য পেয়ে অভিযান চালায় র‍্যাব।

র‍্যাব তখন জানিয়েছিলো যে আটক হওয়া ব্যক্তি রাজধানীর মোহাম্মদপুরে একটি ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে বাণিজ্যিকভাবে বাজারজাতকরণের উদ্দেশ্যে তাপ নিয়ন্ত্রিত গ্রো-টেন্ট (চাষের জন্য বিশেষ তাঁবু) এর মাধ্যমে অভিনব পন্থায় কুশ তৈরির প্লান্ট স্থাপন করেছিলেন।প্রসঙ্গত, বাংলাদেশের জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইন্সটিটিউটের হিসেবে দেশে মাদকাসক্ত মানুষের সংখ্যা প্রায় ৩৬ লাখ এবং সবচেয়ে বেশি মাদক ব্যবহারকারী আছে ঢাকা বিভাগে।

যদিও বেসরকারি হিসেবে, মাদক ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৭০ লাখের কাছাকাছি বলে দাবি করে বিভিন্ন সংস্থা।এদের বিরাট অংশের মধ্যে জনপ্রিয় মাদক হলো ইয়াবা। তবে সাম্প্রতিক সময়ে আইস বেশি আসছে আর নতুন করে পাওয়া যাচ্ছে কুশের মতো অপ্রচলিত নানা মাদক, যা উদ্বেগ তৈরি করছে মাদক নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের মধ্যেও।

সূত্র  : বিবিসি