প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফর : রাজনৈতিক হিসাব-নিকাশ

প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফর : রাজনৈতিক হিসাব-নিকাশ

ছবি: সংগৃহীত

প্রায় তিন বছর পর বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দিল্লি সফর করছেন। আওয়ামী লীগের রাজনীতির জন্য নির্বাচনের আগের বছরে শেখ হাসিনার এই সফরের গুরুত্ব নিয়ে চলছে নানা আলোচনা।

বিগত দু'টি নির্বাচন অর্থাৎ ২০১৪ ও ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত নির্বাচনগুলো নিয়ে ওই সময় প্রশ্ন উঠেছিল, তখন আওয়ামী লীগের পাশে ছিল ভারত।

টানা ১৩ বছর ক্ষমতায় থেকে আওয়ামী লীগ ভারতকে বাংলাদেশের জন্য স্পর্শকাতর চট্টগ্রাম এবং মোংলা বন্দর ব্যবহারের সুযোগ বা ট্রানজিট- ট্রান্সশিপমেন্টের সুবিধা দিয়েছে।

কিন্তু যেসব বড় ইস্যুতে বাংলাদেশের স্বার্থ জড়িত- সেগুলোর মীমাংসা হচ্ছে না। তিস্তা নদীর পানিবণ্টন নিয়ে চুক্তি ঝুলে রয়েছে লম্বা সময় ধরে।

অন্যদিকে, ভারতের প্রতিশ্রুতির পরও সীমান্তে মানুষ হত্যা থামছে না।

ফলে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর এবারের ভারত সফরকে ঘিরে প্রত্যাশা এবং প্রাপ্তির প্রশ্নে চুলচেরা বিশ্লেষণ চলছে বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে।

বিশ্লেষকদের অনেকে বলেছেন, বাংলাদেশের স্বার্থের ইস্যুগুলোতে মীমাংসা না হওয়ায় যেহেতু অনেক সমালোচনা রয়েছে, সেকারণে শেখ হাসিনার এবারের সফর তার সরকার এবং আওয়ামী লীগের জন্য রাজনৈতিক দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ বলে তারা মনে করেন।

যদিও ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় শীর্ষ এই সফরকে রাজনৈতিক দিক থেকে দেখতে নারাজ।

কিন্তু সরকার এবং আওয়ামী লীগের একাধিক সিনিয়র নেতার সাথে কথা বলে মনে হয়েছে, সফরের রাজনৈতিক গুরুত্ব তাদের বিবেচনায় রয়েছে।

রাষ্ট্রীয় সফর কিন্তু থাকে রাজনৈতিক হিসাব-নিকাশ
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সর্বশেষ ভারত সফর করেন ২০১৯ সালের অক্টোবরে।

এরপর ২০২১ সালের মার্চে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ঢাকা সফরে এসেছিলেন বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী এবং মুজিববর্ষ উপলক্ষে।

মোদির আমন্ত্রণে শেখ হাসিনা এখন ভারতে 'রিটার্ন ভিজিট' বা 'ফিরতি সফর' করছেন বলে ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়েছে।

এই সফরকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের দলীয় বা সরকারের জন্য রাজনৈতিক দিক থেকে দেখতে রাজি নন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম।

তবে তারা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এই ভারত সফরকে অত্যন্ত গুরুত্ব দিচ্ছেন।

এর ব্যাখ্যায় প্রতিমন্ত্রী আলম বিবিসিকে বলেছেন, এটি রাষ্ট্রীয় সফর এবং বাংলাদেশ-ভারত, দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীদের মধ্যে যখন সফর বিনিময় হয়, তখন তা দুই রাষ্ট্রের বা দ্বিপক্ষীয় সমস্যা সমাধানের জন্য অত্যন্ত গুরুত্ব বহন করে।

তিনি উল্লেখ করেন, তারা এই সফরকে দেশের জন্য তাৎপর্যপূর্ণ এবং গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন।

তবে একাধিক সিনিয়র মন্ত্রী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, যেহেতু আগামী বছর নির্বাচন হওয়ার কথা রয়েছে- তাই তার আগে শেখ হাসিনার এই সফরে অমীমাংসিত বড় ইস্যুগুলোর সমাধান না হলে তাদের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ ওই সুযোগ নেবে এবং সমালোচনা বাড়বে।

তারা মনে করেন, সরকার এবং আওয়ামী লীগের জন্য রাজনৈতিক বাস্তবতা বিবেচনায় রেখে এবার অমীমাংসিত ইস্যুগুলোতে সমাধানের চেষ্টা থাকবে।

কূটনৈতিক বিশ্লেষকদের মধ্যেও এই সফরের রাজনৈতিক দিক নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন মত রয়েছে।

তাদের অনেকে শেখ হাসিনার ভারত সফরকে রাজনৈতিক দিক থেকে দেখতে রাজি নন।

বাংলাদেশের নির্বাচন বা রাজনৈতিক বিষয় আলোচনায় আসতে পারে বলে অনেকে যা বলছেন, এসব বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরকে সংকীর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি থেকে দেখা হচ্ছে বলে মনে করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক লাইলুফার ইয়াসমিন।

তিনি উল্লেখ করেন, বৃহৎ পরিসরে দুই দেশের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সমস্যাগুলো সমাধানের জন্য এই সফর গুরুত্বপূর্ণ।

কূটনৈতিক বিশ্লেষকদের অনেকে আবার বিষয়টাকে ব্যাখ্যা করেন ভিন্নভাবে ।

তারা বলেন, বাংলাদেশের নির্বাচনের সময় রাজনীতিতে ভারতের সাথে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক এবং সমস্যাগুলো ইস্যু হয়ে দাঁড়ায় বা আলোচনায় আসে।

এছাড়া আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ বা বিরোধীদল বিএনপি বিভিন্ন সময় ভারত ও আওয়ামী লীগকে ঘিরে নানা রকম বক্তব্য দিয়ে থাকে।

ফলে আওয়ামী লীগ সরকারের প্রধানমন্ত্রী যখন ভারতে রাষ্ট্রীয় সফরে যান, তখন দুই দেশের দ্বিপক্ষীয় ইস্যুগুলোতে প্রত্যাশা এবং প্রাপ্তির নানা হিসাব-নিকাশ নিয়ে আলোচনা চলে দেশের রাজনীতিতে।

সেজন্য সরকার প্রধানের ভারত সফর নিয়ে সরকারেরও একটা রাজনৈতিক হিসাব-নিকাশ থাকে।

কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, যেহেতু নির্বাচনের আগের বছর শেখ হাসিনা এই সফর করছেন, সেই পটভূমিতে তিস্তা নদীর পানিবন্টন চুক্তি এবং সীমান্তে মানুষ হত্যা বন্ধ করাসহ দ্বিপক্ষীয় মূল ইস্যুগুলোতে প্রাপ্তি কতটা হলো- আওয়ামী লীগ এবং সরকারের জন্য তার একটা রাজনৈতিক দিক রয়েছে।

সাবেক একজন রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন কবির বলেছেন, রাষ্ট্রীয় সফরেও রাজনৈতিক আলোচনার সুযোগ থাকে।

এর ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে তিনি বলেন, বাংলাদেশে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ টানা ১৩ বছর ধরে ক্ষমতায় রয়েছে এবং ভারতেও নরেন্দ্র মোদির সরকার রয়েছে লম্বা সময় ধরে।

'তারা (শেখ হাসিনার সরকার এবং মোদি সরকার) দীর্ঘ সময় দেশ দু'টিতে সরকারে থাকার কারণে দুই প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে একটা ভালো বোঝাপড়া হয়েছে এবং সেই পটভূমিতে তাদের একান্ত বৈঠকে রাজনীতি নিয়ে আলোচনা হতে পারে' বলে মনে করেন হুমায়ুন কবির।

তিনি উল্লেখ করেন, রাজনৈতিক আলোচনা কখনো লিখিত থাকে না। কিন্তু দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীদের একান্ত বৈঠকে রাজনীতি নিয়ে আলোচনার সুযোগ থাকে এবং আলোচনা হলে সেটা কখনো জানা যায় না। এছাড়া তা প্রমাণ করাও সম্ভব নয়।

আঞ্চলিক এবং বৈশ্বিক রাজনীতি
সাবেক রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন কবিরের বক্তব্য হচ্ছে, 'বাংলাদেশে যেহেতু নির্বাচন আসছে, ফলে নির্বাচন ঘিরে রাজনীতি নিয়ে দুই প্রধানমন্ত্রীর একান্ত বৈঠকে আলোচনা হতেই পারে।'

তবে তিনি মনে করেন, রাজনীতির আলোচনা বিস্তৃত হয়ে ভূ-রাজনীতি এবং বিশ্ব পরিস্থিতি পর্যন্ত গিয়ে ঠেকতে পারে।

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্ব অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। এই পটভূমিতে বিশ্ব রাজনীতি এবং আঞ্চলিক রাজনীতি দুই প্রধানমন্ত্রীর আলোচনায় আসতে পারে। এমনটা মনে করছেন বাংলাদেশের কর্মকর্তারা।

পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেছেন, কোভিড পরিস্থিতি এবং তারপর ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে বিশ্বে একটা মন্দা পরিস্থিতি চলছে। দক্ষিণ এশিয়ায়ও অনেক দেশে অর্থনীতি শ্লথ হয়েছে। ফলে অর্থনীতি নিয়ে আলোচনা হতে পারে।

চীনের দিকে ঝুঁকে পড়ার ইস্যু

আঞ্চলিক রাজনীতির আলোচনায় এই অঞ্চলে চীনের প্রভাবের বিষয়ও উঠতে পারে বলে বিশ্লেষকদের ধারণা।

তারা বলেন, বাংলাদেশের আওয়ামী লীগ সরকার বিভিন্ন সময় চীনের দিকে ঝুঁকে পড়ছে, ভারতে এমন একটি মনোভাব তৈরি হয়েছে।

সাবেক পররাষ্ট্র সচিব তৌহিদ হোসেন মনে করেন, ভারতের কাছ থেকে প্রাপ্তি নিয়ে বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে যে ক্ষোভ রয়েছে, সেটা তাতে চীনের দিকে ঝুঁকে পড়ার বাস্তব ভিত্তি রয়েছে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, ভারতের দিক থেকে বিষয়টা আলোচনায় উঠতে পারে। বাংলাদেশও ভারতের সেই মনোভাব দূর করার উদ্যোগ নিয়েছে।

প্রতিরক্ষা সহযোগিতার প্রশ্ন
ঢাকায় কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, বাংলাদেশে চীনের প্রভাব কমাতে এবার নয়াদিল্লী ঢাকার সাথে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা বাড়ানোর ব্যাপারে জোর দিতে পারে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৯ সালে যখন ভারত সফরে গিয়েছিলেন, তখন প্রতিরক্ষা সহযোগিতা বিষয়ক একটি ফ্রেমওয়ার্ক এগ্রিমেন্টের প্রাথমিক সমঝোতা হয়েছিল।

সেই সমঝোতার ভিত্তিতে এ ব্যাপারে সামরিক সরঞ্জাম কেনাসহ প্রতিরক্ষা সহযোগিতার ব্যাপারে চুক্তি করার জন্য ভারতের দিক থেকে তাগিদ আসতে পারে। এমন ইঙ্গিত রয়েছে বলে বাংলাদেশের কর্মকর্তারা বলছেন।

আগে ২০১৯ সালে যে সমঝোতা হয়েছিল, তার ভিত্তিতে ভারত বাংলাদেশকে ৫০০ মিলিয়ন ডলার ঋণ দেবে। আর সেই ঋণের আওতায় ভারত থেকে বাংলাদেশ সামরিক সরঞ্জাম কিনবে।

এ ব্যাপারে এবার চুক্তি সই হতে পারে।

ঝুলে আছে তিস্তা ইস্যু
তিস্তা নদীর পানিবন্টন নিয়ে চুক্তির বিষয় ঝুলে রয়েছে এক দশকেরও বেশি সময় ধরে। এর মীমাংসা না হওয়ার বিষয়টি বাংলাদেশের রাজনীতিতেও বড় ইস্যু হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এবারের ভারত সফরের আগে এক যুগ পর দিল্লীতে দুই দেশের মন্ত্রী পর্যায়ে যৌথ নদী কমিশনের বৈঠক হয়।

বৈঠকে তিস্তা নদীর পানি বণ্টন চুক্তি করার ব্যাপারে বাংলাদেশে তাগিদ দিয়েছে। অগাষ্টের শেষে সেই বৈঠকের পর ঢাকায় ফিরে কর্মকর্তারা এমন বক্তব্য দিয়েছেন।

এখন শেখ হাসিনার ভারত সফরে তিস্তার পানিবন্টন নিয়ে চুক্তি স্বাক্ষরের ব্যাপারে কোন সম্ভাবনার কথা বলতে পারছেন না বাংলাদেশের কর্মকর্তারা।

পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেছেন, তিস্তা নদীর পানি বন্টন নিয়ে চুক্তি স্বাক্ষরের বিষয়টি বাংলাদেশের অগ্রাধিকার তালিকায় এক নম্বরে থাকবে।

'এটি (তিস্তা নদীর ইস্যু) আমাদের টপ প্রায়োরিটি হবে।'

আলম আরো বলেন, 'যদিও আমরা বিভিন্ন সময় জেনেছি যে এ ব্যাপারে ভারতের অভ্যন্তরীণ চ্যালেঞ্জ রয়েছে। কিন্তু সেটি তাদের বিষয় এবং তাদের ওপর আমরা ছেড়ে দিয়েছি।'

একইসাথে তিনি বলেন, বাংলাদেশ বিশ্বাস করে, যেভাবে ভারত অতীতে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, একটা সুবিধাজনক সময়ে ভারত তা বাস্তবায়ন করবে।

বাংলাদেশ এবং ভারত-দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীরা তিস্তা নদীর পানি বণ্টনের চুক্তি স্বাক্ষরের ব্যাপারে একমত হয়েছিলেন ২০১১ সালে।

ওই চুক্তির খসড়াও চূড়ান্ত করা হয়েছিল। তবে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির আপত্তির কারণে তা ঝুলে রয়েছে।

বাংলাদেশের সাবেক পররাষ্ট্রসচিব তৌহিদ হোসেন মনে করেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এবারের সফরেও তিস্তা নিয়ে আশান্বিত হওয়ার কিছু নেই।

যদিও বাংলাদেশ তিস্তাসহ অভিন্ন ৫৪টি নদীর পানি বণ্টন প্রশ্নে আলোচনায় অগ্রাধিকার দেবে। কিন্তু এবার শুধু সিলেট অঞ্চলের কুশিয়ারা নদীর পানি বণ্টন নিয়ে চুক্তি সই হতে পারে।

গত অগাষ্টের যৌথ নদী কমিশনের বৈঠক থেকে সেই ইঙ্গিত মিলেছে।

শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ যখন প্রথম দফায় ক্ষমতায় এসেছিল, সে বছরই ভারতের সাথে গঙ্গার পানি বন্টনের ব্যাপারে ৩০ বছরের চুক্তি সই হয়েছিল।

এই চুক্তির মেয়াদ ২০২৬ সালে শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।

কর্মকর্তারা বলেছেন, গঙ্গা নদীর পানি বন্টন নিয়ে চুক্তি নবায়নের প্রশ্নে আরো চার বছর সময় পাওয়া যাবে। ফলে এই চুক্তির নবায়ন যথাসময়ে করা সম্ভব হবে বলে বাংলাদেশ বিশ্বাস করে।

সীমান্তে মানুষ হত্যা, বড় ইস্যু বাংলাদেশে
যদিও ভারত বিভিন্ন সময় সীমান্তে মানুষ হত্যা বন্ধের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, কিন্তু এরপরও তা বন্ধ না হওয়ায় বাংলাদেশে উদ্বেগ রয়েছে।

এবারও দুই দেশের শীর্ষ আলোচনায় সীমান্তে মানুষ হত্যা বন্ধের বিষয়কে বাংলাদেশ অগ্রাধিকার দেবে বলে বলা হচ্ছে।

পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেছেন, সীমান্ত সমস্যাগুলোতে সমাধানের বিষয়ে বাংলাদেশ গুরুত্ব দেবে।

সীমান্তে মানুষ হত্যা বন্ধের ব্যাপারে ভারতের সদিচ্ছার ঘাটতি দেখেন বিশ্লেষকরা।

বাংলাদেশের সাবেক পররাষ্ট্র সচিব তৌহিদ হোসেন বলেন, 'বাংলাদেশ ভারত সীমান্ত হচ্ছে পৃথিবীর একমাত্র দ্বিপক্ষীয় সীমান্ত, যেখানে দু'টি দেশ শত্রু না হওয়া সত্বেও অবিরাম মানুষ হত্যা চলছে।'

এর ব্যাখ্যায় তিনি বলেন, দিল্লি বারবার সীমান্ত হত্যা বন্ধ করা বা শূন্যে নামিয়ে আনার কথা বলছে, কিন্তু মাঠে তার বাস্তবায়ন নেই।

হোসেন উল্লেখ করেন, সম্প্রতি সীমান্তে হত্যাকাণ্ডের সপক্ষেই যুক্তি তুলে ধরার একটা চেষ্টা করা হচ্ছে ভারতের পক্ষ থেকে।

'সীমান্ত অপরাধ থাকলে হত্যা হবে - এ ধরনের বক্তব্য দেয়া হচ্ছে ভারতের পক্ষ থেকে।'

'অপরাধ হলে তা আদালতে নেয়ার কথা। কিন্তু অপরাধী কিন - সেটা তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত নিয়ে গুলি করে মানুষ হত্যা করলেন - এটা সভ্য দেশে হতে পারে না'- বলেন সাবেক পররাষ্ট্র সচিব তৌহিদ হোসেন।

শীর্ষ বৈঠকে খাদ্য এবং জ্বালানি হবে বড় ইস্যু

পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেছেন, বাংলাদেশ এবার খাদ্যদ্রব্য এবং জ্বালানি সহযোগিতাকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেবে।

এর ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে তিনি বলেন, 'বিশ্বে এই দু'টি খাত সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।'

আলম বলেন, ভারত খাদ্য উদ্বৃত্ত একটি দেশ। ভারত থেকে বাংলাদেশ প্রচুর খাদ্যদ্রব্যের পাশাপাশি টেক্সটাইল এবং গার্মেন্টস এর কাঁচামাল আমদানি করা হয়।

'এসব আমদানিতে কিছুটা সমস্যা হচ্ছিল। তা সমাধানের ব্যাপারে আলোচনা হবে।'

তিনি উল্লেখ করেন, ভারতে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন হবে এবং সেই বিদ্যুৎ বাংলাদেশে আসবে।

সেজন্য দুই দেশের মধ্যে বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন বসানো হয়েছে।

এই বিষয়গুলোতে এবারের সফরের মধ্য দিয়ে ইতিবাচক ফলাফল পাওয়ার আশা করছে বাংলাদেশ।

অন্যদিকে ভারতের সাথে বাংলাদেশের বাণিজ্য ঘাটতি আছে এবং নানা রকম শুল্ক ও অশুল্ক বাধার মুখে পড়ছে বাংলাদেশের পণ্য ।

অধ্যাপক লাইলুফার ইয়াসমিন মনে করেন, বাংলাদেশের রফতানিযোগ্য পণ্যগুলোর শুল্ক কমানো এবং ভারতে বাজারে প্রবেশের সুযোগ সৃষ্টির জন্য দর কষাকষি করা প্রয়োজন।

কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ভারতের বাজারে বাংলাদেশি পণ্যের শুল্কমুক্ত প্রবেশে যাতে ইতিবাচক প্রভাব পড়ে, সেজন্য বাণিজ্য সম্পর্কিত সেপা চুক্তি বাংলাদেশ গুরুত্ব দেবে।

সোনালী সম্পর্ক, কিন্তু প্রাপ্তি কী

আওয়ামী লীগ বাংলাদেশে ১৩ বছর ধরে ক্ষমতায় রয়েছে। এই সময় ভারতের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্ক অন্য যে কোন সময়ের তুলনায় ঘনিষ্ঠ বা ভালো বলে বলা হয়ে থাকে।

সে কারণে বাংলাদেশের স্বার্থের ইস্যুতে মীমাংসা না হওয়ায় আওয়ামী লীগ সরকারকে রাজনৈতিকভাবে সমালোচনার মুখোমুখি হতে হয়।

এর একটা নেতিবাচক প্রভাব দুই দেশের সম্পর্কের ক্ষেত্রেও পরে বলে বিশ্লেষকরা মনে করেন।

সাবেক পররাষ্ট্র সচিব তৌহিদ হোসেন বলেন, 'ভারত যা চায়, তা পায়। কিন্তু আমরা যা চাই, তা পাই না। এই সমালোচনা বাংলাদেশে রয়েছে।'

ফলে নির্বাচনের আগের বছরে এই সফরে বাংলাদেশের প্রাপ্তি কতটা হলো, সেটা আওয়ামী লীগ সরকারের জন্য রাজনৈতিক দিক থেকে অনেক গুরুত্বপূর্ণ বলে বিশ্লেষকরা মনে করেন।

অবশ্য পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী এবং কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে এমন ধারণা পাওয়া যাচ্ছে যে দুই দেশের মধ্যে যে সর্বোচ্চ ভালো সম্পর্ক রয়েছে, সেটা নির্বাচনের আগে আরেকবার প্রমাণের চেষ্টা থাকবে এবারের সফরে।
সূত্র : বিবিসি