যশোরে লেখক ও গবেষক বেনজীন খানকে সংবর্ধনা

যশোরে লেখক ও গবেষক বেনজীন খানকে সংবর্ধনা

যশোরে লেখক ও গবেষক বেনজীন খানকে সংবর্ধনা

বাংলাদেশ ও ভারতের বিভিন্ন সংগঠন থেকে সম্মাননা পাওয়ায় যশোরে প্রাচ্যসংঘের প্রতিষ্ঠাতা লেখক, গবেষক, অ্যাক্টিভিস্ট বেনজীন খানকে সংবর্ধনা দিয়েছে প্রাচ্য সাহিত্যসংঘ।

শুক্রবার সন্ধ্যায় ওবায়দুল বারী হলে অনুষ্ঠিত সংবর্ধনা সভা চলে রাত সাড়ে ১০টা পর্যন্ত।অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন যশোর মাধ্যমিক উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান শিক্ষাবিদ, কলামিস্ট প্রফেসর আমিরুল আলম খান। এছাড়া অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন গল্পকার অধ্যক্ষ পাভেল চৌধুরী।

সাহিত্যসংঘের পরিচালক সেলিম রেজা সেলিমের সভাপতিত্বে এবং নিত্যানন্দ পালের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে প্রাচ্যসংঘের কর্মী ও বিশিষ্টজনেরা আলোচনায় অংশ নেন।

অনুষ্ঠানে বেনজীন খানের কবিতা, অনুগল্প পঠিত হয়। এছাড়া তার জীবন-দর্শন উপস্থাপন এবং তাকে নিয়ে রচিত কবিতা পড়া হয়।

পরে প্রাচ্য সুরসংঘের শিল্পীরা সঙ্গীত পরিবেশন করেন। 

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে লেখক বেনজীন খানকে উত্তরীয় পরিয়ে দেন প্রফেসর আমিরুল আলম খান। 

প্রফেসর আমিরুল আলম খান তার বক্তব্যে বলেন- বাহান্নতে রাষ্ট্র ভাষার দাবিতে লড়াই হয়েছিল সত্যি। কিন্তু এ লড়াই এজন্য হয়নি যে আমি আরবি আর ফারসি’র মত সমৃদ্ধ ভাষা থেকে নিজেকে বিচ্যুত করে নেব। কিন্তু গত পঞ্চাশ বছরের ইতিহাস অথবা তারও আগে যদি বিশ বছরের ইতিহাস দেখি অর্থাৎ  সত্তর বছরের ইতিহাসে আমরা খুব লজ্জার সাথে  লক্ষ্য করবো এই জনপদের মানুষ যে ভাষায় কথা বলে, এই জনপদের মানুষ যে ধর্মে বিশ্বাস করে তাকে অস্বীকার করার নামই হচ্ছে প্রগতিবাদ। বেনজীন খান সেখানে আঘাত করে। না প্রগতিবাদ এর নাম নয়। আমাকে মানতে হবে যে বাংলাদেশের পচানব্বই ভাগ মানুষ ইসলাম ধর্মাবলম্বী। তাকে আমরা অস্বীকার করতে পারবো না। কিন্তু যদি এটি হয় যে পচানব্বই ভাগ মানুষের মুখের জবানকে বিদেশী বলে, মোল্লার ভাষা বলে ত্যাগ করি তাহলে আমি তার প্রতিবাদ করবো। 

তিনি তার বক্তব্যে আরও বলেন, ভাষা মানুষ তৈরি করে তার অভ্যাস এবং চর্চার মধ্য দিয়ে। যদি আমার ভাবনার সাথে বুদ্ধিজীবীর ভাবনা মিলে না যায় যদি তিনি আমার মধ্যে তার বুদ্ধি আবাদ করতে না পারেন তাহলে আমি তার শিষ্যত্ব গ্রহণ করবো কি করে?

কাজেই বুদ্ধিজীবী যদি হতে হয়, তার জন্য প্রথম শর্ত যে তিনি কথা বলবেন আমার ভাষায়। কারণ আমাকে বোঝাবার জন্য তিনি বুদ্ধিজীবী হয়েছেন। পবিত্র কুরআনে খুব চমৎকার একটি উক্তি আছে ‘হে আরবের বাসিন্দাগণ! তোমরা জেনে নাও, আমি আরবিতে কুরআন নাযিল করেছি, কেননা তোমরা আরবি ভাষায় কথা বলো। আর যদি আমি আরবিতে কুরআন নাযিল না করতাম তাহলে তোমরা বলতে, হে মুহাম্মদ তুমি কি বলো আমরা বুঝি না।’ 

তাহলে আমি কার ভাষায় কথা বলবো? পরিস্কারভাবে আমি কথা বলবো আম জনতার ভাষায়। বেনজীন তার লেখার মধ্যে আম জনতার সেই ভাষাকে মূর্ত করে তোলে প্রকাশ করে। আমি আবারও তাকে অনুরোধ করবো এ চর্চাটি যেনো সে আরও বেগবান করে। আমরা ক্রমশ সাধারণ মানুষের কাছ থেকে দুরে সরে যাচ্ছি।

ভাষার ক্ষেত্রে বেনজীনের একটি লড়াই আছে। সে লড়াইটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বেনজীন সাংবাদিকতা করেছেন। সে যদি তাই করতো তাহলে দেশের সেরা সাংবাদিকদের একজন হতে পারতো। বেনজীন সামাজিক শিক্ষার ক্ষেত্রে নিজেকে সমার্পন করেছে। প্রতিষ্ঠান নির্মাণ করেছে। সহযোগী তৈরি করেছে। তার অসংখ্য শিষ্য আছে। তার একটি আন্দোলন আছে। তার সেই আন্দোলনের ঢেও শুধু এদেশে নয়, আমাদের সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে গেছে। অন্তত পশ্চিম বাংলায় তো গেছে। বেনজীন দুই চোখ দিয়ে দেখে না। তার অনন্ত দশটি চোখ আছে বলে মনে হয়।

বেনজীন হচ্ছে আমাদের যুগে বাংলাদেশের অন্যতম সেরা একজন দার্শনিক। তার সমস্ত লেখার মধ্যে, তার সমস্ত প্রকাশের মধ্যে যে বার্তাটি সবচেয়ে বড় হয়ে আসবে সেটি হচ্ছে এই যা কিছু প্রচলিত তাই মানতে হবে তেমন কথা নেই, আবার এমনটিও নয় যা প্রচলিত তা সম্পূর্ণ অস্বীকার করতে হবে। মার্কসিও দ্বন্দ্ববাদের বা দ্বান্দ্বিকতার এই যে আধুনিক একটি প্রয়োগ সেটি তার মধ্যে আছে বলে মত দেন তিনি। 

সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন কবি কাসেদুজ্জামান সেলিম, মুনির আহম্মেদ সিদ্দিকী বাচ্চু, প্রাচ্য সংঘের প্রবীন সদস্য ইকবার আখতার টিয়া, আহসান কবীর, প্রফেসর কার্তিক চন্দ্র, সাইফুল ইসলাম সজলসহ বিশিষ্ট জনেরা। এছাড়া প্রাচ্যসংঘের বিভিন্ন শাখার পরিচালক এবং সদস্যবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

উল্লেখ্য, সম্প্রতী ভারতের কলকাতার দত্তপুকুর কাব্যকথা থেকে পশ্চিমবঙ্গের বাংলা একাডেমী সভা মঞ্চে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বেনজীন খানকে সম্মাননা প্রদান করা হয়। এছাড়া বিভিন্ন সময় তিনি ভারতের বিভিন্ন সংগঠন এবং দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে লেখক গবেষক বেনজীন খানকে তার সাহিত্যকর্মের জন্য সম্মাননায় ভূষিত করা হয়।

প্রধান অতিথি তার বক্তব্যে আরও বলেন-আমরা আনন্দ প্রকাশ করতে এ জন্য যে প্রাচ্য সাহিত্য সংঘ এই সংবর্ধনার আয়োজন করেছে। সংবর্ধনার আয়োজন করে বেনজীন খানকে যতটা সম্মানিত করেছি আমরা নিজেরা তার চেয়ে বেশি সম্মানিতবোধ করেছি। এটি আমাদের গৌরব। 

আমরা আশা করবো যে, যশোরে কৃতিজনদের সম্মাননা দেয়ার একটি রেওয়াজ তৈরি হবে। যদি রেওয়াজটা তৈরি হয় তাহলে হয়তো আগামীতে আরও অনেক বেনজীন তৈরি হবে।