৮ মাসে ধর্ষণের শিকার ৫৭৪ কন্যাশিশু

৮ মাসে ধর্ষণের শিকার ৫৭৪ কন্যাশিশু

প্রতীকী ছবি

চলতি বছরের প্রথম আট মাসে সারা দেশে ৫৭৪ কন্যাশিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে। সেই হিসাবে প্রতি মাসে ধর্ষণের শিকার হয়েছে ৭১ শিশু। এ সময়ে ২৮ জেলায় দু’হাজার ৩০১ জন কন্যাশিশু বাল্যবিয়ের শিকার হয়। এছাড়াও অপহরণ ও পাচার হয়েছে ১৩৬ জন।

এক জরিপে এ তথ্য তুলে ধরেছে জাতীয় কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরাম। সংগঠনটি জানায়, ধর্ষণের বিচার ১৮০ দিনের মধ্যে শেষ করার বিধি থাকলেও কার্যকর হয় না।

শুক্রবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া মিলনায়তনে কন্যাশিশু পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদন-২০২২ উপস্থাপনকালে ফোরামের পক্ষ থেকে এসব জানানো হয়। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত ২৪টি জাতীয়, স্থানীয় দৈনিক ও অনলাইন পত্রিকা থেকে এসব তথ্য সংগ্রহ করা হয়।

ফোরাম জানায়, ৩৬৪ কন্যাশিশু একক ধর্ষণের শিকার হয়েছে। দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার ৮৪ জন। বাদ যায়নি বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন (প্রতিবন্ধী) ৪৩ কন্যাশিশুও। এ ছাড়া ৮৭ কন্যাশিশুকে ধর্ষণের চেষ্টা করা হয়েছে।

গত আট মাসে ১৮৬ জন কন্যাশিশুকে হত্যা করা হয়েছে। আত্মহত্যা করেছে ১৮১ কন্যাশিশু।

এছাড়া ১৩৬ কন্যাশিশু আট মাসে পাচার হয়েছে। যাদের মধ্যে ৭৪ জনকে অপহরণ করা হয়েছে। যৌতুকের কারণে নির্যাতনের শিকার হয়েছে ১৩ জন। যৌতুক দিতে না পারায় পাঁচজন কন্যাশিশু আত্মহত্যা করেছে।

অনুষ্ঠানে কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরামের পক্ষ থেকে কিছু সুপারিশ তুলে ধরা হয়। সেগুলো হলো-
১. শিশু নির্যাতন, ধর্ষণ ও হত্যার সব ঘটনাকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দিয়ে দ্রুততম সময়ের মধ্যে বিচারিক কার্যক্রম শেষ করতে হবে।

২. ‘যৌন হয়রানি প্রতিরোধ ও প্রতিকার আইন' নামে একটি আইন জরুরিভিত্তিতে প্রণয়ন করতে হবে।

৩. ঘটনার শিকার কন্যাশিশু ও নারীর পরিবর্তে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে প্রশ্নবিদ্ধ করা হবে ও আইনের আওতায় আনতে হবে। এ সম্পর্কিত প্রচলিত আইনের বিধান সংশোধন করতে হবে।

৪. উচ্চপর্যায়ের আইসিটি বিশেষজ্ঞদের সহযোগিতায় সব ধরনের পর্নোগ্রাফি সাইট বন্ধসহ পর্নোগ্রাফির বিরুদ্ধে আইনের কঠোর প্রয়োগ করতে হবে।

৫. কন্যাশিশু নির্যাতনকারীদের রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক আশ্রয়-প্রশ্রয় দেওয়া বন্ধ করতে হবে।

৬. শিশু সুরক্ষায় শিশুদের জন্য একটি পৃথক অধিদপ্তর গঠন করতে হবে।

৭. বাল্যবিয়ে বন্ধের লক্ষ্যে সামাজিক সুরক্ষার বাজেট বাড়িয়ে অগ্রাধিকারভিত্তিতে কন্যাশিশু ও তাদের অভিভাবকদের এর আওতায় আনতে হবে। বাল্যবিয়ে বন্ধে প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নজরদারি বৃদ্ধির পাশাপাশি সামাজিক এবং রাষ্ট্রীয়ভাবে ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা চালাতে হবে।

৮. সাইবার সচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনা, জাতীয় বাজেটে সাইবার সচেতনতায় গুরুত্ব দেওয়া, বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সিএসআরে সাইবার সচেতনতা বাধ্যতামূলক করা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সাইবার পাঠ অন্তর্ভুক্ত করা দরকার।

৯. নির্যাতন বন্ধে বিদ্যমান আইনসমূহের সঠিক ও কঠোর প্রয়োগ বাস্তবায়ন করতে হবে।

১০. কন্যাশিশুর প্রতি সমাজের মনোভাব বদলাতে নারী-পুরুষ, সরকার, প্রশাসন, নাগরিক সমাজ, মিডিয়া এবং পরিবার সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।

অনুষ্ঠানে কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরামের সভাপতি ড.বদিউল আলম মজুমদার উপস্থিত ছিলেন।