আন্দামানে লঘুচাপ : দুই দিনের মধ্যে ঘূর্ণিঝড়ের আশঙ্কা

আন্দামানে লঘুচাপ : দুই দিনের মধ্যে ঘূর্ণিঝড়ের আশঙ্কা

সংগৃহীত

আন্দামান সাগর ও সংলগ্ন দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগরে একটি লঘুচাপের সৃষ্টি হয়েছে। আগামী রোববারের মধ্যে তা থেকে নিম্নচাপ হতে পারে এবং আগামী মঙ্গলবারের মধ্যে ঘূর্র্ণিঝড়ে পরিণত হয়ে এটা উপকূলে উঠে আসতে পারে। এই প্রক্রিয়াটি থেকে ঝড় হলে এর নাম হবে সিত্রাং। এটি থাইল্যান্ডের দেয়া নাম। সিত্রাং শব্দটি থাইল্যান্ডের মানুষের পদবি হিসেবে ব্যবহার করা হয়।

মার্কিন নৌবাহিনীর জয়েন্ট টাইফুন ওয়ার্নিং সেন্টার (জেটিডব্লিউসি) সম্ভাব্য এই ঝড়টির নাম দিয়েছে ইনভেস্ট-৯২বি। বাংলাদেশের আবহাওয়া অফিস গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে লঘুচাপ সৃষ্টির তথ্য দিয়েছে।

কানাডায় গবেষণারত আবহাওয়া বিশেষজ্ঞ মোস্তফা কামাল পলাশ আমেরিকান, কানাডিয়ান ও ইউরোপিয়ান আবহাওয়া দফতরের উপগ্রহের তথ্য বিশ্লেষণ করে জানান, ইতোমধ্যে প্রক্রিয়াটি শক্তিশালী হয়ে উঠছে। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে এর গতিবেগ ঘণ্টায় ৪১ থেকে ৫২ কিলোমিটার (২২ থেকে ২৮ নটিকেল মাইল) পর্যন্ত উঠেছে। নিম্নচাপটির কেন্দ্র প্রায় ৯ ডিগ্রি উত্তর অক্ষাংশ ও ৯২ ডিগ্রি পূর্ব দ্রাঘিমাংশে অবস্থান করছে। এটা ঘণ্টায় প্রায় ১৫ কিলোমিটার বেগে উত্তর-পশ্চিমে অগ্রসর হচ্ছে। নিম্নচাপটির গতিবেগ ঘণ্টায় ৩৪ নটিকেল মাইল (৬২.৯৭ কিলোমিটার) পর্যন্ত পৌঁছালে এটাকে সিত্রাং বলে অভিহিত করা হবে।

মোস্তফা কামাল ১০ অক্টোবর ঘূর্ণিঝড়টির প্রথম পূর্বাভাস দেন, যা নয়া দিগন্তে ১১ অক্টোবর ছাপা হয়েছে। তখন থেকেই তিনি ঘূর্ণিঝড়টির শক্তিশালী হওয়ার সাথে জেট স্ট্রিমের একটি সম্পর্কের কথা বলে আসছিলেন। জেট স্ট্রিম বাংলাদেশ থেকে যত কাছে থাকবে ঘূর্ণিঝড়টি তত শক্তিশালী হবে এবং তা বাংলাদেশ উপকূলে আঘাত হানার আশঙ্কা তত বেশি হবে।

তিনি গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় ভারতীয় উপমহাদেশের ঊর্ধ্বাকাশে প্রবাহিত জেট স্ট্রিমের গতিপথের সর্বশেষ অবস্থান ও জেট স্ট্রিমে অবস্থিত বায়ুপ্রবাহের গতিবেগের চিত্র বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে যে, সম্ভাব্য ঘূর্ণিঝড় ‘সিত্রাং’-এর কেন্দ্রটি সরাসরি বাংলাদেশের খুলনা ও বরিশাল বিভাগের উপকূলীয় এলাকার উপর দিয়ে স্থলভাগে প্রবেশ করার আশঙ্কা সবচেয়ে বেশি। ঘূর্ণিঝড়টি আগামী ২৪ অক্টোবরের সন্ধ্যার পর থেকে ২৫ অক্টোবর দুপুরের মধ্যে স্থলভাগে আঘাত করার আশঙ্কা রয়েছে। আগামীকাল শনিবার সিত্রাং স্থলভাগে আঘাতের স্থান ও সময় ৮০ শতাংশ নিশ্চিত করে বলা সম্ভাব্য হবে।

তিনি জানান, বর্তমানে উত্তর বঙ্গোপসাগরের অর্থাৎ খুলনা ও বরিশাল বিভাগের উপকূলের পানির তাপমাত্রা বঙ্গোপসাগরের অন্যান্য স্থানের চেয়ে বেশি। উত্তর বঙ্গোপসাগরের উচ্চ তাপমাত্রা ঘূর্ণিঝড়টিকে আরো শক্তিশালী করবে। সম্ভাব্য ঘূর্ণিঝড়টি খুলনা ও বরিশাল বিভাগের উপকূলীয় এলাকা দিয়ে স্থলভাগে প্রবেশ করলে এটা হতে পারে ১০০ থেকে ১৩০ কিলোমিটার গতি সম্পন্ন।

তবে এটি নির্ভর করবে বায়ুমণ্ডলের বিভিন্ন উচ্চতায় বায়ুপ্রবাহের দিক ও মান, বায়ুচাপ, সমুদ্রপৃষ্ঠের তাপমাত্রা, সমুদ্রে জমা হয়ে থাকা ঘূর্ণিঝড়ের জন্য প্রয়োজনীয় তাপীয় শক্তির ওপর। সম্ভাব্য ঘূর্ণিঝড়টি ঠিক অমাবস্যার রাতে উপকূলে আঘাত করার সম্ভাবনা বেশি। অমাবস্যার কারণে আগামী সোম ও মঙ্গলবার খুলনা ও বরিশাল বিভাগের উপকূলীয় জেলাগুলো পাঁচ থেকে আট ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হওয়ার প্রবল আশঙ্কা রয়েছে যদি ঘূর্ণিঝড়টির কেন্দ্র খুলনা ও বরিশাল বিভাগের উপর দিয়ে স্থলভাগে প্রবেশ করে।

সম্ভাব্য ঘূর্ণিঝড়টির প্রভাবে আগামী রোববার থেকে বরিশাল ও খুলনা বিভাগের উপকূলীয় জেলায় হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টির আশঙ্কা রয়েছে। তবে ঘূর্ণিঝড়টির প্রভাবে মূল বৃষ্টিপাত শুরু হতে পারে সোমবার থেকে এবং তা চলবে আগামী বুধবার পর্যন্ত। এ ছাড়া ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের জেলাগুলোতে ভারী বৃষ্টিপাতের আশঙ্কা রয়েছে। রাজশাহী, রংপুর ও ময়মনসিংহ বিভাগের জেলাগুলোতে অন্যান্য বিভাগে অপেক্ষা কম বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে। ঘূর্ণিঝড়টি বাংলাদেশ ও ভারতের সুন্দরবন এলাকার উপর দিয়ে স্থলভাগে প্রবেশ করলে খুলনা, বরিশাল, রাজশাহী, ঢাকা, ময়মনসিংহ, ও সিলেট বিভাগের জেলাগুলোর ওপর বৃষ্টিপাত হবে।

উল্লেখ্য, বঙ্গোপসাগর ও আরবসাগরের তীরবর্তী দেশগুলো এই অঞ্চলের ঘূর্ণিঝড়ের নাম দিয়ে থাকে। এ দেশগুলো হলো- বাংলাদেশ, ভারত, ইরান, মালদ্বীপ, মিয়ানমার, ওমান, পাকিস্তান, কাতার, সৌদি আরব, শ্রীলঙ্কা, থাইল্যান্ড, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও ইয়েমেন।