'কাশ্মীর ফাইলস্' ছবির সমালোচনা করে বিতর্কে ইসরায়েলি পরিচালক

'কাশ্মীর ফাইলস্' ছবির সমালোচনা করে বিতর্কে ইসরায়েলি পরিচালক

'কাশ্মীর ফাইলস্' ছবির সমালোচনা করে বিতর্কে ইসরায়েলি পরিচালক

ভারত-শাসিত কাশ্মীরে ১৯৯০ এর দশকে অত্যাচারের শিকার হয়ে হিন্দুদের ভিটেমাটি ছাড়তে বাধ্য হবার ঘটনা নিয়ে তৈরী একটি সিনেমাকে 'প্রচারমূলক' আর 'অশ্লীল' বলে মন্তব্য করেছেন ভারতের আন্তর্জাতিক ফিল্ম উৎসবের জুরি বোর্ডের চেয়ারম্যান নাদাভ লাপিড।গোয়াতে ৫৩ তম ফিল্ম উৎসবের সমাপ্তি অনুষ্ঠানে ইসরায়েলি চলচ্চিত্র পরিচালক মি. লাপিড 'কাশ্মীর ফাইলস' নিয়ে এই মন্তব্য করে ভারতে ব্যাপক বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন।

কাশ্মীর ফাইলস্ নিয়ে কী বলেছেন ইসরায়েলি পরিচালক

"আমরা প্রথম চলচ্চিত্র বিভাগের প্রতিযোগিতায় সাতটি আর আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতা বিভাগে ১৫টি সিনেমা দেখেছি। এগুলির মধ্যে ১৪টি সত্যিই সিনেমার দিক থেকে যোগ্য। ওগুলো নিয়ে যথেষ্ট আলোচনাও হয়েছে। কিন্তু ১৫ নম্বর চলচ্চিত্র, 'কাশ্মীর ফাইলস' দেখে সবাই আশ্চর্য হয়ে গেছে। একটা প্রচারধর্মী আর অশ্লীল ছবির মতো লেগেছে সবার। এরকম একটা প্রতিষ্ঠিত ফিল্ম উৎসবের প্রতিযোগিতায় স্থান পাওয়ার কথাই নয় এটির," - মন্তব্য করেন মি. লাপিড।যে মঞ্চে দাঁড়িয়ে মি. লাপিড ওই মন্তব্য করেন, সেখানে হাজির ছিলেন কেন্দ্রীয় তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী অনুরাগ ঠাকুরও।

সিনেমাটির প্রশংসা মোদীর

হিন্দুত্ববাদীরা সিনেমাটি সাধারণ মানুষকে দেখানোর জন্য সামাজিক মাধ্যমে অনেক প্রচার চালিয়েছিলেন। বিজেপি শাসিত একাধিক রাজ্য ওই সিনেমা প্রদর্শনের ওপর থেকে কর মওকুফ করে দিয়েছিল।প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী মন্ত্রীসভার এক বৈঠকে মন্তব্য করেছিলেন, "কাশ্মীর ফাইলসে যা দেখানো হয়েছে, সেই সত্য বহু বছর ধরে লুকিয়ে রাখার চেষ্টা করা হয়েছিল।"আরএসএস প্রধান মোহন ভাগবতের জন্য দিল্লির একটি পাঁচতারা হোটেলে ওই সিনেমাটির বিশেষ শো করা হয়েছিল।

মন্তব্যের পরের সামাজিক মাধ্যমে বিতর্ক

মি. লাপিডের মন্তব্য সামনে আসার পরেই সামাজিক মাধ্যমে বিতর্ক শুরু হয়ে গেছে।চলচ্চিত্রটির পরিচালক বিবেক অগ্নিহোত্রী সরাসরি এ নিয়ে কোনও মন্তব্য করেন নি, কিন্তু মঙ্গলবার যে টুইট তিনি করেছেন, মনে করা হচ্ছে মি. লাপিডের ওই মন্তব্যেরই প্রতিক্রিয়া সেটা।

মি. অগ্নিহোত্রী লিখেছেন "সত্যই সব থেকে বিপজ্জনক বিষয়। সেটা মানুষকে মিথ্যা বলাতে পারে।"জ্যোত জিৎ নামে একজন টুইট করেছেন, "তার মন্তব্য জেনোসাইডের শিকার হওয়া মানুষের অপমান। ভারতীয়দের অনুভূতিতে আঘাত।"অশোক পণ্ডিত নামে একজন টুইট করে নাদাভ লাপিডের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আবেদন জানিয়েছেন।

তবে মি. লাপিডকে সবথেকে বড় সমালোচনাটা করেছেন ভারতে ইসরায়েলের রাষ্ট্রদূত নর গিলোন।তিনি টুইটে নাদাভ লাপিডকে এক খোলা চিঠিতে লিখেছেন, "আমি এই চিঠিটা হিব্রুতে লিখছি না, যাতে আমার ভারতীয় ভাইবোনরা আমার কথা বুঝতে পারেন।"

দীর্ঘ ওই খোলা চিঠির শুরুর দিকেই ইসরায়েলি রাষ্ট্রদূত লিখেছেন, "আপনার লজ্জা হওয়া উচিত। ভারতীয় সংস্কৃতিতে অতিথিকে ঈশ্বর বলে মনে করা হয়। বিচারকদের প্যানেলের নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য ভারতীয়দের নিমন্ত্রণের অপব্যবহার করেছেন আপনি।"আবার কংগ্রেস নেত্রী সুপ্রিয়া শ্রীনান্তে টুইট করেছেন, "প্রধানমন্ত্রী মোদী, তার সরকার আর বিজেপি 'কাশ্মীর ফাইলস' নিয়ে খুব প্রচার করেছিল। এমন একটা চলচ্চিত্র, যেটাকে আন্তর্জাতিক ফিল্ম উৎসবের জুরি প্রধান অযোগ্য বলে মন্তব্য করেছেন। ঘৃণা বেশি দিন টেঁকে না, তা বেরিয়ে আসবেই।"

'কাশ্মীর ফাইলস' নিয়ে কেন বিতর্ক

এবছর মার্চ মাসে মুক্তি পাওয়া ছবি কাশ্মীর ফাইলস নিয়ে শুরু থেকেই বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছিল। অনেকেই মনে করেন যে ছবিতে যেসব ঘটনার কথা দেখানো হয়েছে, সেগুলোতে কিছু কিছু বিকৃতি ঘটানো হয়েছে।তাদের অভিযোগ এই ছবিটা একটা প্রচারধর্মী ছবি এবং এমন একটা সময়ে ছবিটা বানানো হয়েছে, যখন দেশে মুসলমানদের ওপরে ঘৃণামূলক আচরণ ও অপরাধের খবর নিয়মিতই পাওয়া যায়।তবে অন্য অনেকেই মনে করেন যে ১৯৯০এর দশকে কাশ্মীরি পণ্ডিতদের ওপর যে অত্যাচার হয়েছে, ফিল্মে সেটাই দেখানো হয়েছে।

সূত্র : বিবিসি