আরো একটি বিশ্বকাপ ফাইনালের স্বপ্নে বিভোর ফ্রান্স

আরো একটি বিশ্বকাপ ফাইনালের স্বপ্নে বিভোর ফ্রান্স

ছবি: সংগৃহীত

ফুটবল বিশ্বকাপে আরো একটি ফাইনালে স্বপ্নে বিভোর এখন ফ্রান্স। আর তা সম্ভব হয়েছে কোচ দিদিয়ের দেশ্যমের নিপুণ দক্ষতায়। যারা দেশ্যমকে আরো দীর্ঘ সময় ফ্রান্সের কোচ হিসেবে দেখতে চায় তারাই শুধুমাত্র উপলব্ধি করতে পারছে একজন কোচের জন্য টানা দ্বিতীয় ফাইনালে খেলার স্বপ্ন কতটা বড়। দেশ্যমের স্থান থেকে তারা বিষয়গুলো উপলব্ধি করার চেষ্টা করছে।

শনিবার ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে জয় দিয়ে শেষ চারে এখন মরক্কোর মোকাবেলা করবে ফ্রান্স। সেখানেই যাই হোক না কেন দেশ্যমের সামনে সুযোগ থাকবেন নিজের ১০ বছরের মেয়াদ আরো বাড়িয়ে নেয়ার। ফ্রেঞ্চ ফুটবল ফেডারেশনের সভাপতি নোয়েল লি গ্রায়েতে দেশ্যমের সব চাহিদাই পূরণ করেছেন। আর সে কারণেই দেশ্যম বলেছেন, ‘বল এখন আমার কোর্টে, আমি সিদ্ধান্ত নেব ভবিষ্যতে কী হবে। বিশ্বকাপে আমরা সেমিফাইনালে পৌঁছে গেছি। এরপর দেখা যাক কী হয়। একটার পর একটা সিদ্ধান্ত সামনে আসবে। সভাপতি খুবই খুশি। দেশের মানুষ খুশি। কিন্তু আমি এখন শেষ চার নিয়েই চিন্তা করতে চাই। আমার সামনে শুধুমাত্র বুধবারের ম্যাচ, এর বেশি কিছু নয়।’

২০১২ সালে ফ্রান্সের কোচ হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলেন দেশ্যম। ২০১৮ বিশ্বকাপে জয়ের পর অনেকেই মনে করেছিল দেশ্যমের হাত ধরেই ফ্রান্স আরো বহুদুর এগিয়ে যাবে। আজ সেই স্বপ্ন সত্যিই হয়েছে। যদিও ইউরো ২০২০’এ ফ্রান্সের হতাশাজনক পারফরমেন্সে দেশ্যমের ভবিষ্যত শঙ্কার মুখে পড়ে। আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে ওই সময় করিম বেনজেমা দলে ফেরা সত্ত্বেও ফ্রান্স শেষ ষোল থেকে বিদায় নিয়েছিল।

জিনেদিন জিদান যেহেতু এখন চাকুরিবিহীন রয়েছে এবং ফ্রান্সের পরবর্তী কোচ হিসেবে ইতোমধ্যেই তাকে নিয়ে আলোচনাও শুরু হয়েছে, সে কারণেই কাতার বিশ্বকাপ নিঃসন্দেহে দেশ্যমের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ ছিল। টুর্নামেন্টে আসার আগে ইনজুরির ধাক্কায় পড়ে ফরাসিরা। আগের বিশ্বকাপ জয়ী দলের দুই মিডফিল্ডার পল পগবা ও এন’গোলো কান্তের পর সদ্য ব্যালন ডি’অর বিজয়ী বেনজেমাকে হারিয়ে ফ্রান্সের বিশ্বকাপ মিশন সত্যিকার অর্থেই চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে। অনেকেই ধরে নিয়েছিল আগের তিন বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ইতালি, স্পেন ও জার্মানির মত গ্রুপ পর্ব থেকে বিদায়ের পরিস্থিতি না ফ্রান্সের সামনে উপস্থিত হয়।

রোববার দৈনিক লে পারিসিয়ানে এক সম্পাদকীয়তে লেখা হয়েছে, ‘আমরা সবাই স্বীকার করছি যে দিদিয়ের দেশ্যমকে নিয়ে আমাদের কিছুটা হলেও সন্দেহ ছিল। খুব বেশিদিন তিনি দলের সাথে থাকতে পারবেন কিনা, তার মধ্যে এখনো সেই একই ধরনের প্রতিশ্রুতি আছে কিনা, এসব নিয়ে আমরা চিন্তিত ছিলাম। এ ধরনের বিভিন্ন ধরনের দ্বিধা নিয়ে দেশ্যম কাতারে এসেছে। কিন্তু তার সব কিছু এখন অতীত। এমন মনে হচ্ছে যেকোনো কিছুই আর ফ্রান্সকে আটকাতে পারবে না। ফ্রান্সকে জয় করা হয়ে গেছে দেশ্যমের।’

বেনজেমার অনুপস্থিতিতে অভিজ্ঞ অলিভার গিরুদ তার দক্ষতা আরো একবার প্রমাণ করেছেন। কাতারে এ পর্যন্ত চার গোল করেছেন। শেষ আটে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে জয়সূচক গোলটিও তার ছিল। দেশ্যম টুর্নামেন্ট শুরুর ঠিক আগে তার পরীক্ষীত ৪-৩-৩ ফর্মেশন থেকে বেরিয়ে আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। এখানে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে ফরোয়ার্ড আঁতোয়ান গ্রিজম্যানকে মধ্যমাঠে জায়গা করে দিয়ে তিনি প্রতিপক্ষ দলগুলোকে ধাঁধায় ফেলে দিয়েছেন। এ পর্যন্ত টুর্নামেন্টের সেরা প্লেমেকার হিসেবে দ্বিধাহীনভাবে সবাই গ্রিজম্যানকেই এগিয়ে রাখছে। ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে অ্যাথলেটিকো মাদ্রিদের এই ফরোয়ার্ড ছিলেন দুর্দান্ত। দুটি গোলেরই যোগানদাতা তিনি ছিলেন। প্রায় এক বছরেরও বেশি সময় হয়ে গেছে গ্রিজম্যানের কোন আন্তর্জাতিক গোল নেই। কিন্তু দেশ্যমের কল্যাণে গোলের থেকেও অনেক বড় দায়িত্ব পালন করে চলেছেন গ্রিজম্যান।

১৯৯৮ সালে ফ্রান্সের বিশ্বকাপ জয়ী দলে দেশ্যমের সাথে খেলা ডেভিড ট্রেজেগুয়েট বলেছেন, ‘দেশ্যম তার খেলোয়াড়দের গুন সম্পর্কে জানে। কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে সে সবার কাছ থেকেই সঠিক বিষয়টি আদায় করে নিচ্ছে। দেশ্যম তার খেলোয়াড়দের দারুণভাবে বুঝতে পারে। আর এর মাধ্যমেই সব খেলোয়াড়ের কাছ থেকে শতভাগ বের করে নিতে সে সক্ষম হয়েছে।’

১৯৯৮ সালে লেস ব্লুজদের প্রথম বিশ্বকাপ জয়ী দলের অধিনায়ক ছিলেন দেশ্যম। এরপর ইউরো ২০০০ জয়ী দলেও তিনি নেতৃত্ব দিয়েছে। চার বছর আগে দেশ্যমের অধীনেই ফ্রান্স চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল। ফ্রান্সের সাম্প্রতিক বিশ্বকাপ রেকর্ড খুবই শক্তিশালী। শেষ ছয়টি বিশ্বকাপের দুটি তারা জয় করেছে, আরো একটি ফাইনালে অপেক্ষায় রয়েছে। এছাড়া দেশ্যমের অধীনে ফ্রান্স ইউরো ২০১৬’র ফাইনালে খেলেছে।

ফ্রান্স যদি দ্বিতীয় সেমিফাইনালে মরক্কোকে হারাতে পারে তবে ৬০ বছরের মধ্যে প্রথম কোনো দল হিসেবে ব্রাজিলের পর বিশ্বকাপ ধরে রাখার দাবিদার হয়ে উঠবে। একইসাথে ১৯৩০ সালে ইতালির ভিট্টোরিও পোজোর পর প্রথম কোনো কোচ হিসেবে পরপর দুইবার একই দলের হয়ে বিশ্বকাপ শিরোপা জয়ের হাতছানি এখন দেশ্যমের সামনে।