চাটমোহরে বিরোধে ১৮ বিঘা জমি অনাবাদী; সংঘর্ষের আশঙ্কা

চাটমোহরে বিরোধে ১৮ বিঘা জমি অনাবাদী; সংঘর্ষের আশঙ্কা

চাটমোহরে বিরোধে ১৮ বিঘা জমি অনাবাদী; সংঘর্ষের আশঙ্কা

একশ’ বছর যাবত ভোগ দখলে থাকা জমি হাত ছাড়া হওয়ার উপক্রম হওয়ায় একদিকে যেমন আইনশৃঙ্খলার অবনতি অপরদিকে প্রায় ২০ বিঘা জমি অনাবাদী থাকার আশঙ্খা দেখা দিয়েছে। পুলিশ সতর্ক অবস্থায় আছে বলে কর্তৃপক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।

পাবনার চাটমোহরের কয়েকজন জমির মালিক সাংবাদিক সম্মেলনে অভিযোগ করেছেন যে তাদের বৈধ কাগজপত্র থাকা সত্তেও একশ’ বছর যাবত ভোগ দখলে থাকা জমি প্রতিপক্ষের হামলার ভয়ে চাষাবাদ করতে পারছেন না।  ।  যে কারণে দীর্ঘদিন যাবত প্রায় ১৮ বিঘা জমি অনাবাদী পড়ে রয়েছে। এ অবস্থায় যেকোনো সময় সংঘর্ষের আশঙ্কা  দেখা দিয়েছে বলে অভিযোগ করা হয়।

প্রতিকার পেতে বুধবার (১৮ জানুয়ারী) দুপুরে উপজেলার দাঁথিয়া কয়রাপাড়া গ্রামে ভূক্তভোগীরা সাংবাদিকদের দারস্থ হয়েছেন। তারা সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে বিষয়টি দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের।

ভূক্তভোগী আব্দুল মজিদের বাড়ির উঠানে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে আইয়ুব সরকার, আইনুল হক, ইন্তাজ আলী, আলহাজ সোহরাব প্রামাণিক, ডাক্তার হাবিবুর রহমান, শহীদুল্লাহ সরকারসহ গ্রামের বহু লোকের উপস্থিতিতে এ সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ভূক্তভোগী পরিবারের সদস্য আতাহার আলী।

লিখিত বক্তব্যে তিনি জানান, ১৯২৬ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি খরিদ, পত্তন, ওয়ারিশ ও হেবা দলিল সূত্রে মোট ১৪ একর ৯৬ শতক (৪২ বিঘা) জমির মালিক হন চাটমোহর উপজেলার দাঁথিয়া কয়রাপাড়া গ্রামের বাসিন্দা নম্বর প্রামাণিক। পরে তার পুত্র ময়েজ উদ্দিন ও মনছের আলী তাদের নামে এ জমির খাজনা খারিজ করা হয়।

সেই জমির মধ্যে নিজেদের ওয়ারিশান দাবি করে খতিয়ান টেম্পার করে কৌশলে আকবার আলীর নাম বসানো হয়। এ বিষয়ে ১৯৮৫ সালে আকবার মোল্লার ছেলে এস্কেন্দার আলী ৮৪ নং একটি মামলা দায়ের করেন। পরবর্তীতে ওই জমির মালিকদের মধ্যে আকবার আলী ওয়ারিশ নন বিষয়টি প্রমাণিত হলে মামলা খারিজ করেন আদালত।

অত:পর এস্কেন্দার গং ১৯৯২ সালে অপর আরেকটি মামলা নং ৫৪ দায়ের করেন। দীর্ঘদিন মামলা চলার পর ১৯৯৩ সালে স্থানীয় শালিস বৈঠকে কাগজপত্র পর্যালোচনা কওে দেখা যায় এস্কেন্দার গং জমি পান না। মানবিক কারণে তাদের ১ একর ৬৩ শতক জমি দিয়ে নিষ্পত্তি করা হয়। কিছুদিন পর স্বাক্ষর জাল করে এস্কেন্দার গং ৪ একর ১৭ শতক জমি তাদের নামে খারিজ করে নেন।

এ বিষয়টি জানার পর মৃত ময়েজ উদ্দিনের ছেলে আতাহার আলী, আব্দুল মজিদ গং চাটমোহর সহকারী কমিশনার (ভূমি) আদালতে মিসকেস মামলা দায়ের করেন। সেখানে জাল স্বাক্ষরের বিষয়টি প্রমাণিত হলে এসকন্দোর গংয়ের খারিজ বাতিল করেন সহকারী কমিশনার (ভূমি)।

এদিকে, ১৯৯৮ সালের ১১ আগস্ট এস্কেন্দার আলীর মাতার মৃত্যু হলেও ১৯৯৯ সালে মৃত মাকে জীবিত দেখিয়ে তাকে বাদি করে সুকৌশলে ১১৭/৯৯ নং মামলা দায়ের করেন এস্কেন্দার গং। মৃত ব্যক্তি বাদি হওয়ার বিষয়টি পরিষ্কার প্রমাণিত হলে ২০০৫ সালের ২৮ আগস্ট বিচারক মামলাটি খারিজ করে দেন।

ভুক্তভোগী জমির মালিক আতাহার আলী ও আব্দুল মজিদ বলেন, এস্কেন্দার আলী গং এভাবে বছরের পর বছর একের পর এক মিথ্যে মামলা দায়ের করে জয়লাভ করতে না পারলেও মৃত ময়েজ উদ্দিনের ছেলে আতাহার আলী, আব্দুল মজিদসহ তার পরিবারের সদস্যদের হয়রানি করে আসছেন বলে অভিযোগ ভূক্তভোগী পরিবারের। এস্কেন্দার গং গায়ের জোরে নিজেদের জমি দাবি করে আমাদের জমি চাষ করতে দিচ্ছেন না। অনেকবার হামলা করে আমাদের পরিবারের লোকজনকে মারপিট করে আহত করেছে। জমি চাষ করতে গেলে খুন জখমের ভয় দেখিয়ে আসছে।

এমতাবস্থায় প্রায় ১৮ বিঘা জমি চাষ করতে পারছেন না আতাহার আলী ও আব্দুল মজিদ। ইতিমধ্যে জমি অনাবাদি থাকায় কয়েক লাখ টাকার ক্ষতির মুখে পড়েছেন তারা। প্রতিপক্ষের হুমকি ধামকীতে যেকোনো সময় সংঘর্ষ ও প্রাণহানীর ঘটনা ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন ভূক্তভোগীরা। এর প্রতিকার পেতে তারা সংশ্লিষ্ট উর্দ্ধতন মহলের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

অভিযোগের বিষয়ে এস্কেন্দার আলী জানান, জমি কে পাবে তা নির্ধারণ করবে আদালত। তিনি আপিল করেছেন বলে জানালেও আপীলের স্বপক্ষে কোন কাগজপত্র দেখাতে পারেননি।সাংবাদিক সম্মেলনের এ বিষয়ে চাটমোহর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জালাল উদ্দিন এর সাথে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন,‘আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ঠিক রাখতে আমরা চেষ্টা করছি। অভিযোগের ভিত্তিতে দু’পক্ষকে আপোষ মিমাংসার জন্য তাদের কাগজপত্রসহ থানায় ডাকা হয়েছে’।