অলৌকিক ঘটনা পবিত্র শবেমেরাজ

অলৌকিক ঘটনা পবিত্র শবেমেরাজ

সংগৃহীত

রসুল (সা.)-এর জীবনে ঘটে যাওয়া অলৌকিক ঘটনাবলির মাঝে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো ইসরা ও মেরাজ। সব নবীই কোনো না কোনো ধরনের মোজেজার অধিকারী; কিন্তু অন্য কোনো নবীকে মেরাজের মতো মোজেজা আল্লাহ দান করেননি। নবুয়ত লাভের পর রসুল (সা.) ও তাঁর সাহাবিরা কোরাইশ দলপতিদের নির্যাতনের শিকার হন। এত প্রতিকূলতার মধ্যেও রসুল (সা.)-এর জন্য সান্ত¡না হিসেবে বিবেচিত হতো তাঁর পুণ্যবতী স্ত্রী খাদিজাতুল কুবরার (রা.) উপস্থিতি। চাচা আবু তালিবের উপস্থিতি ছিল তাঁর জন্য ঢালের মতো। হঠাৎ চাচাজানের মৃত্যু হলো। কিছুদিন পর খাদিজাতুল কুবরাও বিদায় নিলেন। মহানবী (সা.) সেই বছরকে আমুল হুজন অর্থাৎ দুঃখ-দুর্দশার বছর বলে অভিহিত করেছেন। আশা-ভরসার স্থল ভেবে ওই বছর তায়েফে গিয়ে ফিরে আসেন রক্তমাখা শরীর নিয়ে। বুখারির হাদিসমতে, এক রাতে রসুল (সা.) কাবার হাতিমে ঘুমন্ত ছিলেন। কয়েকজন ফেরেশতা এসে তাঁর পেট কেটে হৃৎপি- বের করলেন। তা ধুয়ে ইমান, হিকমত দ্বারা পরিপূর্ণ করে পুনঃস্থাপন করেন। এরপর বোরাকে বায়তুল মুকাদ্দাসে গমন করেন। সেখানে নবী-রসুলদের সালাতে ইমামতি করেন। তারপর সাত আসমানে সাত নবীর সঙ্গে সাক্ষাৎ, সালাম ও দোয়া বিনিময় করেন। তারপর সৃষ্টিজগতের শেষ প্রান্ত সিদরাতুল মুনতাহায় গমন করেন। সেখান থেকে জান্নাত, জাহান্নাম ও মহান আল্লাহর সান্নিধ্য লাভ করেন। এ সময় পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ হয়। রসুল (সা.) জান্নাতের বিভিন্ন নেয়ামত ও জাহান্নামের বিভিন্ন আজাব অবলোকন করেন।

মেরাজের সফরে প্রতি আকাশে ফেরেশতারা তাঁকে অভ্যর্থনা জানান। প্রতি আসমানে অবস্থানরত নবীদের সঙ্গে তাঁর সাক্ষাৎ হয়। প্রত্যেক নবী বিশ্বনবীকে সাদর সম্ভাষণ জানান। জিবরাইল প্রত্যেক নবীর সঙ্গে তাঁকে পরিচয় করিয়ে দেন। এরপর রসুল (সা.) এমন এক ময়দানে পৌঁছেন যেখানে ভাগ্যলিপি লেখার আওয়াজ শোনা যাচ্ছিল। এরপর তিনি সিদরাতুল মুনতাহা দেখেন, যেখানে আল্লাহর নির্দেশে সোনার প্রজাপতি ও বিভিন্ন প্রকার প্রজাপতি ইতস্তত ছোটাছুটি করছিল। ফেরেশতারা স্থানটি ঘিরে রেখেছিলেন। এখানে রসুল (সা.) জিবরাইল (আ.)-কে স্বরূপে দেখেন। তাঁর ৬০০ পাখা ছিল।

ঊর্ধ্বলোকের সফর শেষ করে রসুল (সা.) পৃথিবীতে ফিরে আসেন। আল কোরআনে মেরাজ সম্পর্কে আলোকপাত করা হয়েছে। সুরা বনি ইসরাইলে আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন, ‘পবিত্র ও মহান সেই সত্তা যিনি তাঁর বান্দাকে সফর করিয়েছেন। রাতের একাংশে মাসজিদুল হারাম থেকে মাসজিদুল আকসার দিকে, যার চারপাশকে তিনি বরকতময় করেছেন। যাতে তিনি তাকে দেখাতে পারেন তাঁর নিদর্শনগুলো।’ সুরা নাজমে আল্লাহতায়ালা বলেন, তাকে শিক্ষাদান করে এক শক্তিশালী ফেরেশতা, সহজাত শক্তিসম্পন্ন সে নিজ আকৃতিতে প্রকাশ পেল ঊর্ধ্ব দিগন্তে। এরপর নিকটবর্তী হলো ও ঝুলে গেল। তখন দুই ধনুকের ব্যবধান ছিল অথবা আরও কম। তখন আল্লাহ তাঁর বান্দার প্রতি ওহি পাঠালেন যা পাঠানোর। রসুলের অন্তর মিথ্যা বলেনি, যা সে দেখেছে।
 
লেখক : ইসলামবিষয়ক গবেষক