ক্রমাগত লোডশেডিংয়ে পাবনার বোরো চাষিরা সন্দিগ্ধ

ক্রমাগত লোডশেডিংয়ে পাবনার বোরো চাষিরা সন্দিগ্ধ

ক্রমাগত লোডশেডিংয়ে পাবনার বোরো চাষিরা সন্দিগ্ধ

শৈত্যপ্রবাহকে উপেক্ষা করে পাবনার কৃষকরা তাদের জমিতে বোরো ধান রোপণ করেছেন। আবার অনেক চাষি এখনো তাদের প্রস্তুতকৃত জমিতে ধান রোপণের কাজ করছেন। তবে চলতি মৌসুমের শুরুতে দীর্ঘ লোডশেডিং থাকায় এবং খালে বিলেও পানি না থাকায় সেচের মাধ্যমে জমিতে পানি দিতে না পারায় জমিতে রোপণকৃত ধানের জমি ও ধান রোপণে বিঘ্ন তার কারণে মহা সন্দিগ্ধ বোরো চাষিরা।

জানা গেছে, আমন ধান কাটার পর বোরো ধান রোপণের জন্য বীজ তলা প্রস্তুত করা হয় অনেক কষ্ট করে। তারপর শুরু হয় রোপণের কাজ। যা এখনো অব্যাহত রয়েছে। অল্প কিছুদিনের মধ্যেই ধান রোপণের কাজ শেষ হবে বলে কৃষি দফতরের মাঠকর্মী ও কৃষকরা জানান। তবে মাসাধিককাল ধরে পাবনায় প্রতিদিন গড়ে তিন থেকে চার ঘণ্টা লোডশেডিং হচ্ছে। কিন্তু শীত মৌসুমে বিদ্যুতের চাহিদা তুলনামূলক কম থাকে। ফলে এমন লোডশেডিং নিয়ে শঙ্কিত বোরো চাষিরা। আবার খাল-বিলে পানি না থাকায় সেচও দিতে পারছেন না চাষীরা।এ ধরণের লোডশেডিং দীর্ঘ দিন চলতে থাকলে বোরো উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে জানিয়েছেন এ অ লের কৃষকরা।

পাবনা জেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, এবার মোট ৫৫ হাজার ৫শ’২৫ হেক্টর জমি বোরো আবাদের আওতায় আনা হয়েছে এবং উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২ লাখ ৩০ হাজার ৪শ’ ৯০ মে. টন। যা গতবারের চেয়ে এবার ১৩৯ হেক্টর বেশি জমিতে আবাদের টার্গেট নেয়া হয়েছে।

যেহেতু বোরো আবাদ মূলত ভূগর্ভস্থ পানির উপর নির্ভরশীল, তাই তীব্র লোডশেডিংয়ের কারণে জেলার কৃষকরা উৎপাদন নিয়ে চিন্তিত।

বোরো ধানের আবাদ নিয়ে চিন্তান্বিত পাবনা সদর উপজেলার ক্ষুদ্র মাটিয়াবাড়ী এলাকার কৃষক স্বপন কুমার বিশ্বাস জানান, তারা বৈদ্যুতিক চালিত পাম্প দিয়ে তাদের ফসলি জমিতে সেচ দিয়ে থাকেন। তিনি বলেন, চলতি মৌসুমের শুরুতে তাদের এলাকায় দীর্ঘ লোডশেডিং থাকায় তারা বোরো চাষের জন্য জমি প্রস্তুত করতে হিমশিম খাচ্ছেন।সরিষা কাটার পর এখনো বহু চাষি বোরো রোপণের কাজে ব্যস্ত আছেন। কিন্তু পান সমস্যা বড় সমস্যা হয়ে পড়েছে।  তিনি আরো বলেন, "চলতি মৌসুমের শুরুতে এমনকি শীতকালেও যদি লোডশেডিং হয়, তাহলে পরবর্তীতে কী হবে তা নিয়ে আমি অত্যন্ত চিন্তিত।" স্বপন আরা বলেন,‘যে সব কৃষক স্কীমের আওতায় ধানের আবাদ করছেন; তাদেরকে বিঘা প্রতি  ৭শ’ থেকে ৮শ’ টাকা দিতে হচ্ছে। আবার যে সব কৃষক ব্যক্তি মালিকাধিন গভীর নলকূপের আওতায় ধান আবাদ করছেন তাদেরকে গুনতে হচ্ছে দু’সহ¯্রাধিক টাকা। তবে সব চেয়ে বড় সমস্যা হলো-স্কীম বলেন আর ব্যক্তি মালিকাধিন গভীর নলকূপ বলেন পুরো আবাদে যে কোন কারণেই হোক না কেন পানি দিতে অসুবিধা হলেও পুরো টাকাটাই পায় পায় গুনে দিতে হবে বলে কৃষকরা জানান।

একই উপজেলার মাহমুদপুর এলাকার শঙ্কাকুল কৃষক আবুল বাশার জানান, আমন কাটার পর তিনি তার তিন বিঘা জমিতে বোরোর চারা রোপণ করেছেন। তিনি আরো বলেন, এভাবে লোডশেডিং চলতে থাকলে ধানের জমি শুকিয়ে যাবে। আবাদে স্বপ্নের টার্গেট পূরণ না হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেন এই চিন্তিত কৃষক। একই অ লের অধিকাংশ কৃষকেরই একই ধরণের মন্তব্য।

রাজশাহী অ লের বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, “রাজশাহী বিভাগে প্রতিদিন বিদ্যুতের চাহিদা প্রায় ২৫০ থেকে ২৬০ মেগাওয়াট। তিনি জানান, চাহিদার বিপরীতে তারা পাচ্ছেন অনেক কম। ফলে লোডশেডিং হচ্ছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, চলতি রবি মৌসুমে পাবনায় বহু কৃষককে বোরো চাষে ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকের মধ্যে কৃষি প্রণোদনা বিতরণ করা হয়েছে। প্রণোদনার মধ্যে রয়েছে বিঘা প্রতি প্রত্যেককে ৫ কেজি এইচওয়াইভি বীজ, ১০ কেজি ডাই-অ্যামোনিয়াম ফসফেট (ডিএপি) সার এবং ১০ কেজি মিউরিয়েট অব পটাশ (এমওপি) সার পেয়েছেন।

এছাড়া অনেক কৃষকের প্রত্যেকে এক বিঘা জমিতে চাষের জন্য দুই কেজি উচ্চ জাতের এসএল-৮এইচ জাতের বোরো বীজ পেয়েছেন।পাবনা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোঃ মিজানুর রহমান বলেন, খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধিতে কৃষকদের উৎসাহিত করতে এই প্রণোদনা কর্মসূচি নেয়া হয়েছে।

উপ পরিচালক জানান,‘এলাকার কৃষকদের বোরো চাষের জন্য প্রায় সব জমিই গভীর নলকূপের পানির ওপর নির্ভরশীল। সে ক্ষেত্রে পানির অভাব হলে কৃষকদের জন্য হতাশার কারণ হয়ে দাঁড়ায়।’ এখনো ধান রোপণের কাজ চলছে। আবাদের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে আশাবাদ ব্যক্ত করে তিনি বলেন,আপাত দৃষ্টিতে পাবনায় এখনো পর্যন্ত পানির কোন অভাব নেই।