ইবিতে ছাত্রী নির্যাতন কাণ্ডের ‘কারিগর’ অন্তরা

ইবিতে ছাত্রী নির্যাতন কাণ্ডের  ‘কারিগর’ অন্তরা

সানজিদা চৌধুরী অন্তরা

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) এক ছাত্রীকে নির্যাতনের ঘটনার সত্যতা পেয়েছে জেলা, বিশ্ববিদ্যালয়ও হল প্রশাসন গঠিত তদন্ত কমিটি। এতে দোষী সাব্যস্ত হওয়ায় হল প্রশাসন এক ছাত্রলীগ নেত্রীসহ পাঁচ অভিযুক্তকে হল থেকে বহিষ্কার করেছে। নির্যাতনের ঘটনায় অভিযুক্তদের সংশ্লিষ্টর বিষয়টি প্রমাণিত হলে দোষ স্বীকার করে বক্তব্য দিয়েছেন অভিযুক্তরা।

অভিযুক্তদের সঙ্গে কথা হলে তারা জানান এই ঘটনার মূল কারিগর ছিলেন শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি ও পরিসংখ্যান বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী সানজিদা চৌধুরী অন্তরা।  অন্তরার সহযোগী একাধিক অভিযুক্ত নাম প্রকাশ না করে ঘটনার বর্ণনা দিয়ে এসব কথা বলেন। একইসঙ্গে তদন্ত কমিটির কাছেও তারা এসব বক্তব্য দিয়েছেন বলে জানান। দোষী সাব্যস্ত হলেও অন্তরাসহ ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের ভয়ে তারা প্রকাশ্যে বক্তব্য দিতে ভয় পাচ্ছেন বলে জানান।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অন্তরার সহযোগী একাধিক অভিযুক্ত বলেন, ‘১২ ফেব্রুয়ারি দুপুরে অন্তরা আপু আমাদেরকে বলে প্রত্যেকে এক ঘন্টা করে ফুলপরীকে রুমে ডেকে র‌্যাগ দিবি। যা ইচ্ছা তাই করবি। যত কিছু হবে সব আমি দেখবো। আমরা উনাকে বলি এগুলো করা তো ঠিক হবে না আপু। পরে উনি আমাদেরকে বড় বড় চোখ করে ভয়ভীতি প্রদর্শন করেন। পরে তিনি বলেন, যা বলছি তাই কর। দরকার হলে ফুলপরীকে মেরে ফেলবি, আমি লাশ গুম করে দেবো। এরপরে কিছু হলে আমি একাই দেখব, তোদের কিছু ভাবতে হবে না।’

অভিযুক্তরা আরও বলেন, ‘ঘটনার পর অন্তরা আপু আমাদের বলেন বাইরের কাউকে কিছু জানাবি না। পরে উনি জোরপূর্বক আমাদের মোবাইল থেকে কল ও মেসেজ সব ডিলিট করে দেন।’ এদিকে তদন্ত কমিটির কাছে স্বাক্ষাৎকারে যাওয়ার সময় এক অভিযুক্তকে অন্তরা বলেন, ‘আগে আমি বাঁচি, পরে তোদেরকে বাঁচাবো।’

অভিযুক্ত একজন বলেন, ‘১১ তারিখ রাতে (নির্যাতনের প্রথম দিন) অন্তরা আপু যখন প্রভোস্ট স্যারের সাথে কথা বলছে তখন আমাদের সবাইকে বলছে, তোমরা চিল্লাচিল্লি করবা, তাহলে স্যার বুঝবে অবস্থাটা বেশি খারাপ। এই মেয়েকে এখনি বের করতে হবে। আপু ইশারা দিয়ে বলতেছিলো চিল্লানোর জন্য। আপু আমাদের বলেছে, সবাই দরকার হলে প্রতি ১ ঘন্টা করে করে ওকে রুমে নিবে। যতরকম প্রটেকশন লাগে আমি দিব। যা ইচ্ছা তা কর।’

‘১২ তারিখ দুপুরে প্রক্টরিয়াল বডি যখন চলে গেছে গাড়ির ওখানেই দাড়িয়ে অন্তরা আপু বলেছে, তোরা যা ইচ্ছা তাই করিস। যত প্রটেকশন লাগে আমি দেবো, কোনো সমস্যা নেই। দুইদিনের অবজারভেশনে দিছে ওর (ভুক্তভোগী) কথা আর কেউ শুনবে না। ও এখন মিথ্যা বানায় বলবে এটা সবাই বিশ্বাস করবে, ওর কথা কেউ শুনবে না। তোদের বলছি করতে তোরা যা ইচ্ছা কর।

আরেক অভিযুক্ত বলেন, ‘হলে এমন কোন মেয়ে নেই যে অন্তরা আপুকে ভয় পায়না। উনার এই ঘটনাটা শুধু সামনে আসছে। কিন্তু উনি আগে থেকেই ভয়ঙ্কর। হলে উনি একচেটিয়া আধিপত্য চালাতো।’

অন্তরার সংশ্লিষ্টতা প্রসঙ্গে ভুক্তভোগী ছাত্রী কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘অন্তরা আপু নিজে আমাকে ডেকে তার সহযোগীদের হাতে তুলে দেন। মেয়েরা নির্যাতনের সময়ও জানায় অন্তরা আপুর নির্দেশেই আমাকে মারা হচ্ছে। না হলে আমাকে তারা চিনতো না। এছাড়া এর আগের দিনও তিনি আমাকে নির্যাতন করেন।’

এ বিষয়ে অভিযুক্ত সানজিদা চৌধুরী অন্তরার বক্তব্য নিতে ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।