ইবিতে ছাত্রী নির্যাতন : অভিযুক্ত পাঁচ ছাত্রীকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাময়িক বহিষ্কার

ইবিতে ছাত্রী নির্যাতন : অভিযুক্ত পাঁচ ছাত্রীকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাময়িক বহিষ্কার

ইবিতে ছাত্রী নির্যাতন : অভিযুক্ত পাঁচ ছাত্রীকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাময়িক বহিষ্কার

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) আবাসিক হলে ছাত্রীকে নির্যাতনের ঘটনায় প্রভোস্টকে প্রত্যাহার ও জড়িত পাঁচ ছাত্রীকে সাময়িক বহিষ্কারের নির্দেশ দেয় হাইকোর্ট। নির্দেশনা পেয়ে সেদিনই প্রভোস্টকে প্রত্যাহার করা হলেও অভিযুক্ত ছাত্রীদের নিয়ে কোন সিদ্ধান্ত নেয়নি বিশ্ববিদ্যালয়। বিষয়টি নিয়ে আজ শনিবার দুপুরে  শৃঙ্খলা কমিটির মিটিং অনুষ্ঠিত হয়। মিটিংয়ে আলোচনা শেষে ওই পাঁচ ছাত্রীকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে বলে জানা গেছে। এছাড়া তাদেরকে কেন স্থায়ী বহিষ্কার করা হবে না তা জানাতে এর জবাব দিতে সাত দিন সময় দেওয়া হয়েছে।

সাময়িক বহিষ্কৃত পাঁচ শিক্ষার্থী হলেন, পরিসংখ্যান বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ও শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি সানজিদা চৌধুরী অন্তরা, ছাত্রলীগ কর্মী ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের ফাইন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের শিক্ষার্থী তাবাসসুম ইসলাম ও মোয়াবিয়া জাহান, একই শিক্ষাবর্ষের আইন বিভাগের ইসরাত জাহান মীম এবং চারুকলা বিভাগের হালিমা আক্তার ঊর্মি।

এদিকে, অভিযুক্ত পাঁচ ছাত্রীর বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় তাদের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্থায়ী বহিষ্কারের দাবি জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। ভুক্তভোগী ছাত্রী ও তার পরিবারও অভিযুক্তদের স্থায়ী বহিষ্কারের দাবি জানান। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্রিয়াশীল ছাত্রসংগঠনগুলোর পক্ষ থেকেও এ দাবি জানানো হয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকোত্তর পর্যায়ের শিক্ষার্থী আতিকুর রহমান বলেন, ওই ছাত্রীরা যেভাবে নির্যাতন করেছে এটি নিসন্দেহে ফৌজদারী অপরাধ। মহামান্য হাইকোর্ট থেকে তাদের অপরাধের প্রমাণ পেয়ে বহিষ্কারের নির্দেশ দিয়েছে এরপর তাদের এই বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ার আর কোন অধিকার থাকে না। তাদেরকে স্থায়ী বহিষ্কার করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করা প্রয়োজন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলের আবাসিক এক ছাত্রী বলেন, ওই মেয়ের উপর নির্যাতনের বর্ণনা শুনে গা শিউরে উঠে। সভ্য সমাজে এবং বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে এমন ঘটনা মেনে নেওয়ার মতো নয়। তাদেরকে স্থায়ী বহিষ্কার করলে অন্যদের জন্য বিষয়টি শিক্ষণীয় হয়ে থাকবে। বিশ্ববিদ্যালয় তাদের জন্য যে পরিমাণ বিব্রত হয়েছে এই ক্যাম্পাসে বিচরণের কোন অধিকার তাদের নেই।

 

হাইকোর্ট থেকে সাময়িক বহিষ্কারের নির্দেশের পর প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমার ওপর তারা যে অমানবিক নির্যাতন চালিয়েছে, তাতে অস্থায়ী বহিষ্কার নয় আমি তাদের স্থায়ী বহিষ্কার ও ছাত্রত্ব বাতিল চাই। তা না হলে ক্যাম্পাসে ফিরলে আমাকে মেরে ফেলার আশঙ্কা থাকবে।’

অভিযুক্তরা আর ক্যাম্পাসে না আসুক এই দাবি ভুক্তভোগীর পরিবারেরও। ভুক্তভোগীর বাবা আতাউর রহমান বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাদের স্থায়ী বহিষ্কার করতে পারবে কি-না এ বিষয়ে আমরা সন্দিহান। এ ধরনের অপরাধীরা ক্যাম্পাসে আর না থাকুক সেটাই চাই আমরা।’

জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আচরণ বিধির দ্বিতীয় অধ্যায়ের বিধি-৮ অনুযায়ী, কোন শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে শৃঙ্খলা বিরোধী কাজে জড়িত থাকার অভিযোগ পেলে উপাচার্য সর্বোচ্চ ১২ মাস পর্যন্ত সাময়িক বহিষ্কার করতে পারেন। অপরাধের মাত্রা আরো বেশি হলে উপাচার্য এটি শৃঙ্খলা কমিটিতে প্রেরণ করেন। সেখানে তদন্ত ও পর্যালোচনা করে সুপারিশসহ সিন্ডিকেটে প্রেরণ করা হয়। সিন্ডিকেট পর্যালোচনা করে সুপারিশ অনুযায়ী বা যে কোন সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের সদ্য সাবেক আইন প্রশাসক ও আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. জহুরুল ইসলাম বলেন, যে ঘটনা ঘটেছে এটি অবিশ্বাস্য এবং জঘন্য। এই অপরাধে বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে স্থায়ীভাবে ছাত্রত্ব বাতিল ছাড়া অন্য কোন শাস্তির প্রশ্নই আসেনা। সেক্ষেত্রে সরাসরি ছাত্রত্ব বাতিলের আগে সাময়িক বহিষ্কার করতে হবে এবং একটি কমিটি করে কারণ দর্শানো নোটিশ দিয়ে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দিতে হবে।

তিনি আরো বলেন, শৃঙ্খলা কমিটি থেকে সুপারিশ করা হলে সিন্ডিকেট সর্বোচ্চ অথরিটি হিসেবে সেই সুপারিশ রাখতে পারেন। বা যে কোন সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। এ ক্ষেত্রে সিন্ডিকেট তার এখতিয়ার অনুযায়ী কোন শিক্ষার্থীকে স্থায়ী বহিষ্কার ও তার বিশ্ববিদ্যালয়ের সনদ বাতিল করতে পারে।