রোজাদারের যেসব পুরস্কারের কথা জানিয়েছেন নবীজি

রোজাদারের যেসব পুরস্কারের কথা জানিয়েছেন নবীজি

প্রতীকি ছবি

রমজানকে বলা হয় সাইয়িদুশ শুহুর বা সকল মাসের সেরা মাস। এ মাসের প্রত্যেকটি মুহূর্তকে কাজে লাগানোর চেষ্টা করা বুদ্ধিমত্তার পরিচায়ক। কারণ ইসলামে রোজাদারের রয়েছে অনন্য মর্যাদা। এছাড়াও রোজাদারের জীবনের গুনাহ ক্ষমা, নেক আমলের সওয়াব বহুগুণ বৃদ্ধি, জাহান্নাম থেকে মুক্তি, জান্নাতে রাইয়ান নামক বিশেষ দরজা এবং স্বয়ং আল্লাহর পক্ষ থেকে পুরস্কারের ঘোষণাসহ অসংখ্য ফজিলত রয়েছে রমজানের রোজার। এছাড়াও রমজানকে বলা দোয়া কবুলের মাস। 

রাসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেছেন, 'অবশ্যই আল্লাহ তাআলা রমজান মাসের প্রতিদিন ও রাতে অসংখ্য ব্যক্তিকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দান করেন এবং প্রত্যেক মুমিন বান্দার একটি করে দোয়া কবুল করেন।’ (মুসনাদে আহমদ: ৭৪৫০; মুসনাদে বাজ্জার: ৯৬২)

আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে কুদসিতে রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘মহান আল্লাহ বলেন, ’আদম সন্তানের প্রতিটি সৎকর্ম তার জন্যই; কিন্তু রোজা স্বতন্ত্র, তা আমারই জন্য, আর আমিই তার প্রতিদান দেব।’ রোজা ঢাল স্বরূপ অতএব তোমাদের কেউ যেন রোজার দিনে অশ্লীল না বলে এবং হৈ-হট্টগোল না করে। আর যদি কেউ তাকে গালি-গালাজ করে অথবা তার সাথে লড়াই-ঝগড়া করে, তাহলে সে যেন বলে, ’আমি রোজা রেখেছি।’ সেই মহান সত্তার শপথ! যার হাতে মুহাম্মদের জীবন, নিঃসন্দেহে রোজাদারের মুখের দুর্গন্ধ আল্লাহর কাছে মৃগনাভির সুগন্ধ অপেক্ষা বেশী উৎকৃষ্ট। রোজাদারের জন্য দুটি আনন্দময় মুহূর্ত রয়েছে, তখন সে আনন্দিত হয়; যখন সে ইফতার করে (ইফতারের জন্য সে আনন্দিত হয়)। আর  যখন সে তার প্রতিপালকের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবে, স্বীয় রোজার জন্য সে আনন্দিত হবে।’ (বুখারি: ১৯০৪, মুসলিম: ১১৫১; তিরমিজি: ৭৬৪, ৭৬৬; নাসায়ি: ২২১৫; আবু দাউদ: ২৩৬৩; ইবনে মাজাহ: ১৬৩৮)

হুজায়ফা (রা.) বলেন, আমি মহানবী (স.)-কে বলতে শুনেছি, ‘মানুষের পরিবার, ধন-সম্পদ ও প্রতিবেশীর ব্যাপারে ঘটিত বিভিন্ন ফেতনা ও গুনাহর কাফফারা হলো নামাজ, রোজা ও সদকা।’ (বুখারি: ১৮৯৫)

সাহল ইবনে সাআদ (রা.) থেকে বর্ণিত, মহানবী (স.) ইরশাদ করেন, ‘জান্নাতের এক প্রবেশদ্বার রয়েছে, যার নাম রাইয়ান। কেয়ামতের দিন ওই প্রবেশদ্বার দিয়ে রোজাদারগণ প্রবেশ করবে। তারা ছাড়া আর কেউই ও দরজা দিয়ে প্রবেশ করবে না। বলা হবে, ‘কোথায় রোজাদারগণ?’ সুতরাং তারা ওই দরজা দিয়ে (জান্নাতে) প্রবেশ করবে। এরপর যখন তাদের সর্বশেষ ব্যক্তি প্রবেশ করবে, তখন সেই দরজা বন্ধ করা হবে। ফলে তা দিয়ে আর কেউই প্রবেশ করতে পারবে না।’ (বুখারি: ১৮৯৬)

আবু সাইদ (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, ‘যে বান্দা আল্লাহর পথে একদিন মাত্র রোজা রাখবে, সেই বান্দাকে আল্লাহ বিনিময়ে জাহান্নাম থেকে ৭০ বছরের পথ পরিমাণ দূরত্বে রাখবেন।’ (বুখারি: ২৮৪০)

উসমান বিন আবুল আস (রা.) থেকে বর্ণিত, মহানবী (স.) ইরশাদ করেন, ‘রোজা জাহান্নাম থেকে বাঁচার ঢালস্বরূপ; যেমন যুদ্ধের সময় নিজেকে রক্ষা করার জন্য তোমাদের ঢাল থাকে।’ (মুসনাদে আহমদ, সহিহুল জামিউস সাগির: ৩৮৭৯)

আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেন, ‘কেয়ামতের দিন রোজা ও কোরআন বান্দার জন্য সুপারিশ করবে। রোজা বলবে, ‘হে আমার প্রতিপালক, আমি তাকে পানাহার ও যৌনকর্ম থেকে বিরত রেখেছিলাম। সুতরাং তার ব্যাপারে আমার সুপারিশ গ্রহণ করুন।’ কোরআন বলবে, ‘আমি তাকে রাতের ঘুম থেকে বিরত রেখেছিলাম। সুতরাং তার ব্যাপারে আমার সুপারিশ গ্রহণ করুন।’ মহানবী (স.) আরও বলেন, ‘অতএব উভয়ের সুপারিশ গৃহীত হবে।’ (মুসনাদে আহমদ, সহিহ তারগিব: ৯৬৯)

আবু উমামা (রা.) বর্ণনা করেন, আমি বললাম, ‘হে আল্লাহর রাসুল, আমাকে এমন কোনো আমলের কথা জানান; যার বিনিময়ে আল্লাহ আমাকে লাভবান করবেন।’ (অন্য এক বর্ণনায় আছে, ‘যার মাধ্যমে আমি জান্নাত যেতে পারব’) তিনি বললেন, ‘তুমি রোজা রাখো। কারণ, এর সমতুল্য কিছু নেই।’ পুনরায় আমি বললাম, ‘হে আল্লাহর রাসুল, আমাকে কোনো আমলের আদেশ করুন।’ তিনি পুনরায় একই কথা বললেন, ‘তুমি রোজা রাখো। কারণ, এর সমতুল্য কিছু নেই।’ (নাসায়ি, সহিহ তারগিব: ৯৭৩)

হুজায়ফা (রা.) বর্ণনা করেন, মহানবী (স.) আমার বুকে হেলান দিয়েছিলেন। তখন তিনি বললেন, ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলার পর যে ব্যক্তির জীবনের পরিসমাপ্তি ঘটবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে একদিন রোজা রাখার পর যে ব্যক্তির জীবনের পরিসমাপ্তি ঘটবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। আর আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের আশায় কিছু সদকা করার পর যে ব্যক্তির জীবনের পরিসমাপ্তি ঘটবে, সেও জান্নাতে প্রবেশ করবে।’ (মুসনাদে আহমদ, সহিহ তারগিব: ৯৭২)

আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে রমজানের সবগুলো রোজা রাখার তাওফিক দান করুন। পবিত্র রমজানে সবরকম গুনাহ থেকে বেঁচে থাকার তাওফিক দান করুন। বেশি বেশি নফল নামাজ, কোরআন তেলাওয়াত, দোয়া-দরুদ, তাওবা-ইস্তেগফারের তাওফিক দান করুন। আমিন।