ইবি : ‘খুনের উদ্দেশ্যে হামলা’ উল্লেখ করে মামলা বিশ্ববিদ্যালয়ের, আটক ১

ইবি : ‘খুনের উদ্দেশ্যে হামলা’ উল্লেখ করে মামলা বিশ্ববিদ্যালয়ের, আটক ১

ইবি : ‘খুনের উদ্দেশ্যে হামলা’ উল্লেখ করে মামলা বিশ্ববিদ্যালয়ের, আটক ১

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) দুই শিক্ষার্থীকে মারধরের ঘটনায় থানায় মামলা করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার এইচএম আলী হাসান এজাহার দায়েরের জন্য ঝিনাইদহের শৈলকুপা থানায় আবেদন করেন। আবেদন আবেদনের প্রেক্ষিতে মামলা মামলা দায়ের করা হয় বলে নিশ্চিত করেন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম। মামলার এজাহারে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের উপর খুনের উদ্দেশ্যে হামলা করা হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়। মামলায় দুইজনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত ২০-২৫ জনের নামে মামলা করা হয়। এ ঘটনায় জাহাঙ্গীর হোসেন ঝন্টু নামের একজনকে আটক করা হয়েছে বলে জানা গেছে। বাকীদের আটকে পুলিশের অভিযান চলমান রয়েছে।

মামলার এজাহারে বলা হয়, গত সোমবার বিকেল সাড়ে ৫টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থী  শেখপাড়া বাজারস্থ পেট্রোল পাম্প হতে  তেল আনতে যান। ফেরার পথে ইসলামী ব্যাংকের এটিএম বুথের সামনে পাকা রাস্তার উপর এলে আসামী আকাশ ও আলিমসহ অজ্ঞাত ২০/২৫ জন তাদের হাতে থাকা লোহার রড ও লাঠি দ্বারা শিক্ষার্থীদের পথ আটকিয়ে দেয়। কোন কিছু বলার আগেই খুন করার উদ্দেশ্যে আকাশ লোহার রড দিয়ে ছাত্র মোহাম্মদ ইসলাম জিসাদের মাথায় আঘাত করলে সে মাথা সরিয়ে নেয়। ফলে রডের আঘাত তার ডান হাতে ও পায়ে লাগলে গুরুত্বর রক্তাক্ত ও জখম হয়। এদিকে অন্য অজ্ঞাত আসামীরা অপর ছাত্র মেহেদী হাসান সুপ্তকে তাদের হাতে থাকা লাঠি দিয়ে পিটিয়ে রক্তাত্ব ও জখম করে। এসময় আসামীরা তাদের এলোপাতাড়ি কিল-ঘুষি লাথি মারতে থাকে। মারামারির সংবাদ ক্যাম্পাসে পৌছালে ক্যাম্পাস হতে শতাধিক ছাত্র ঘটনা স্থলের দিকে রওনা দেয়। ফলে আসামীরা খুন-জখম করার হুমকি দিয়ে ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন। পরে সাধারণ শিক্ষার্থীরা ঘটনাস্থলে পৌঁছালে আহত ছাত্রদের উদ্ধার করে প্রথমে ইবি মেডিকেলে পাঠানো হয়। পরে তাদের অবস্থা আশংকাজনক হলে চিকিৎসক তাদেরকে উন্নত চিকিৎসার জন্য কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে পাঠিয়ে দেন।

শৈলকুপা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আমিনুল ইসলাম বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার এইচ এম আলী হাসান বাদী হয়ে থানায় মামলা করেছেন। এতে দুজনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা ২০ থেকে ২৫ জনকে আসামি করা হয়েছে। জাহাঙ্গীর হোসেন ঝন্টু নামের সন্দেহভাজন একজনকে আটক করা হয়েছে, বাকিদের আটকের চেষ্টা চলছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর শাহাদৎ হোসেন আজাদ বলেন, গতকালের ঘটনার পর রাতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে মামলা করেছে। পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তার স্বার্থে বহিরাগতদের ক্যাম্পাসে প্রবেশ নিষিদ্ধ করে মাইকিং করা হয়েছে। একইসাথে বিশ্ববিদ্যালয়ের গেটগুলোয় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। এছাড়াও আজ সন্ধ্যায় স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সাথে এ বিষয়ে বসবো।

ক্যাম্পাস সূত্রে জানা যায়, গতকাল সোমবার দুপুরে ক্যাম্পাসের লেকে ছাত্রছাত্রীরা অবস্থান করছিলেন। বহিরাগত দুইজন তাদের ভিডিও ধারণ করলে ছাত্ররা বহিরাগতদের আটকে ভিডিও ডিলিট করতে বলে এতে বাকবিতন্ডা হয় ও বহিরাগতদের চড়-থাপ্পড় দেওয়া হয়। পরে ছাত্রলীগের কয়েকজন গিয়ে তাদের মীমাংসা করে দেন বলে জানা গেছে। এসময় বহিরাগতরা ক্যাম্পাস সংলগ্ন শেখ পাড়া বাজারে গেলে দেখে নেওয়ার হুমকি। পরে বিকেলে ওই দুই ছাত্র শেখপাড়া বাজারের তেলপাম্প থেকে মোটরসাইকেলে তেল নিয়ে ফেরার পথে স্থানীয় কয়েকজন বখাটে তাদের উপর এ হামলা করে। এতে তারা আহত হন। এ ঘটনার প্রতিবাদে সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত কুষ্টিয়া-খুলনা মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা। বিক্ষোভে শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি মৃদুল হাসান রাব্বি, ছাত্রলীগকর্মী আসিফ হোসেন শিমুল, সাইফুল ইসলাম রিয়নসহ কয়েকশ শিক্ষার্থী বিক্ষোভে অংশ নেয়।

হামলাকারীদের বিচারসহ নিরাপদ ক্যাম্পাসের দাবিতে বিক্ষোভ করতে থাকেন শিক্ষার্থীরা। প্রক্টর অধ্যাপক শাহাদৎ হোসেন আজাদ ঘটনাস্থলে এসে শিক্ষার্থীদের নিবৃত করার চেষ্টা চালিয়ে ব্যর্থ হন। পরে উপাচার্যের বাসভবনে শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সম্পাদককে নিয়ে আলোচনা করে শিক্ষার্থীদের ক্যাম্পাসের ভেতরে আনার আহবান জানান। কিন্তু তবুও বিক্ষোভ চলতে থাকলে রাত সাড়ে নয়টায় ঘটনাস্থলে আসেন কুষ্টিয়া জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (বিশেষ শাখা) ফরহাদ হোসেন ও পুলিশ পরিদর্শক সাব্বিরুল আলম। তারা অভিযুক্তদের গ্রেপ্তারের আশ্বাস দেন। এবং শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সম্পাদক শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেন।

পরে শিক্ষার্থীরা সড়ক ছেড়ে দিয়ে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান নেন। সেখানে উপাচার্য অধ্যাপক শেখ আবদুস সালামের সাঙ্গে শিক্ষার্থীদের একটি প্রতিনিধি দল সাক্ষাৎ করে তাদের দাবির কথা জানান। এসময় উপ-উপাচার্য অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক আলমগীর হোসেন ভূঁইয়া ও প্রক্টর অধ্যাপক শাহাদৎ হোসেন আজাদ উপস্থিত ছিলেন। এসময় শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে কথা বলেন শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি মৃদুল হাসান রাব্বিসহ কয়েকজন। তারা অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার ও তাদের নামে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মামলা করার দাবি জানান। এসময় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ফয়সাল সিদ্দিকী আরাফাত ও সাধারণ সম্পাদক নাসিম আহমেদ জয় সেখানে উপস্থিত ছিলেন। প্রশাসন দাবি পূরণের আশ^াস দিলে আন্দোলন স্থগিত করেন শিক্ষার্থীরা।