পাবিপ্রবিতে ল্যাব ছাড়াই চলছে ব্যবহারিক কোর্স!

পাবিপ্রবিতে ল্যাব ছাড়াই চলছে ব্যবহারিক কোর্স!

ছবি- নিউজজোন বিডি

পাবিপ্রবি প্রতিনিধি: দেশের উচ্চ শিক্ষার প্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষার্থীদের তাত্ত্বিক জ্ঞান এবং ব্যবহারিক জ্ঞান দুটিই শেখানো হয়। নতুন নতুন আবিষ্কার এবং জ্ঞান উদ্ভাবনের জন্য তাত্ত্বিক জ্ঞানের সাথে ব্যবহারিক জ্ঞান শেখানোর কোন বিকল্প নেই। আর এই ব্যবহারিক জ্ঞান শেখানোর জন্য প্রয়োজন ল্যাব এবং প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি। কিন্তু এসবের কোন কিছুই নেই পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (পাবিপ্রবি) একটি বিভাগে। এই বিভাগটির নাম ট্যুরিজম এন্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগ। দীর্ঘদিন ধরে ল্যাব সুবিধা ছাড়াই এই বিভাগটিতে চলছে পাঠদান।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০১৭ সালে ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদের অধীনে বিশ্ববিদ্যালয়ের একুশতম বিভাগ হিসেবে যাত্রা শুরু করে ট্যুরিজম এন্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগ। ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষ থেকে শুরু হয় এই বিভাগের শ্রেণী কার্যক্রম। বর্তমানে বিভাগটিতে পাঁচটি ব্যাচ অধ্যায়নরত আছে। ট্যুরিজম এন্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিষয়টির চাহিদা অনুযায়ী এর পাঠদান ও গবেষণার জন্য ল্যাব থাকা আবশ্যক। ক্লাসের সিলেবাস অনুযায়ী, প্রথম বর্ষের প্রথম সেমিস্টারে কম্পিউটার ল্যাব, দ্বিতীয় বর্ষের প্রথম সেমিস্টারে বিজনেস স্ট্যাটিসটিকস ল্যাব ও দ্বিতীয় সেমিস্টারে ফ্রন্ট অফিস অপারেশন এন্ড রিজার্ভেশন ল্যাব এবং হাউসকিপিং ম্যানেজমেন্ট ল্যাব, তৃতীয় বর্ষের প্রথম সেমিস্টারে হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেম ল্যাব, ফুড এন্ড বেভারেজ সার্ভিস ল্যাব এবং থিওরি এন্ড প্রাক্টিসেস অফ কালিনারি আর্টস ল্যাব ও দ্বিতীয় সেমিস্টারে ফুড এন্ড বেভারেজ প্রোডাকশন ল্যাব, এভিয়েশন এন্ড ফ্লাইট ম্যানেজমেন্ট ল্যাব এবং চতুর্থ বর্ষের প্রথম সেমিস্টারে কম্পিউটারাইজড রিজার্ভেশন সিস্টেম ল্যাব ও দ্বিতীয় সেমিস্টারে ক্যাটারিং, ফুড, বেভারেজ এন্ড বার ম্যানেজমেন্টের ব্যবহারিক কোর্স রয়েছে। কিন্তু এই কোর্সগুলোর জন্য বিভাগটির নিজস্ব কোন ল্যাব নেই। কম্পিউটার সংক্রান্ত কোর্সগুলোর ল্যাব অন্য বিভাগের ল্যাবে করানো হলেও অন্য ব্যবহারিক কোর্সগুলো করাতে পারছে না বিভাগটি। এতে করে শিক্ষার্থীরা ব্যবহারিক জ্ঞান থেকে যেমন বঞ্চিত হচ্ছে তেমনি কর্মক্ষেত্রেও পিছিয়ে পড়ছেন। এ নিয়ে বিভিন্ন সময়ে ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা গিয়েছে শিক্ষার্থীদের। কিন্তু কখনো এসব ক্ষোভের সমাধান মেলেনি।

বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী নাজনীন নাহার নিশা নিউজজোন বিডিকে বলেন, বর্তমানের আমাদের চারটি ব্যাচ চলমান এবং একটি ব্যাচ ইন্টার্নিতে আছে কিন্তু আমাদের এখন পর্যন্ত কোন স্থায়ী ক্লাসরুম বা ল্যাব সুবিধা নাই। আমাদের বিভাগের পড়াশোনা প্রায় বাস্তবধর্মীয় কিন্তু ল্যাব না থাকায় বাস্তবিক যে জ্ঞান সেটি আমরা আহরণ করতে পারছি না। শুধু খাতা-কলমে সীমাবদ্ধ থেকে পড়াশোনা শেষ করছি। যার ফলে চাকরির বাজারে অভিজ্ঞতার বিচারে অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের থেকে আমরা অনেক পিছিয়ে থাকছি।

তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আকাশ হোসেন বলেন, ট্যুরিজম এন্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের শিক্ষার্থী হয়েও নূন্যতম ল্যাব সুবিধা না পেয়ে সেমিস্টারের পর সেমিস্টার পার করে দিতে হচ্ছে এমন কি আমাদের নিজেদের কোনো ক্লাসরুমও নেই। যেখানে এই সাবজেক্টে ল্যাব থাকাটা অতি জরুরি। পর্যাপ্ত ল্যাব ফ্যাসিলিটি না থাকায় আমাদের ল্যাব ক্লাস গুলো করতে অসুবিধা হচ্ছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিভাগটির চেয়ারম্যান (ভারপ্রাপ্ত) আশিকুর রহমান অভি নিউজজোন বিডিকে বলেন, বিভাগের নিজস্ব কোন ল্যাব নেই কথাটি সত্য। বর্তমানে আমাদের ল্যাব কোর্সগুলো আমরা বিভিন্ন হোটেল, মোটেল, রিসোর্টগুলোতে গিয়ে সম্পন্ন করছি যেটা খুবই সময় সাপেক্ষ এবং ব্যয়বহুল। বিষয়টি ইতিমধ্যে আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মহোদয়কে জানিয়েছি এবং তিনি আশ্বাস দিয়েছেন নির্মাণাধীন একাডেমিক ভবন এর কাজ শেষ হলে আমাদের শিক্ষার্থীরা নিজস্ব ল্যাব সুবিধা পাবে।

ল্যাব সংকটের বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. এস এম মোস্তফা কামাল খান বলেন, এই বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেকগুলো বিভাগই অপরিকল্পিত ভাবে খোলা হয়েছে। পর্যাপ্ত সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত না করে বিভাগগুলো খোলার কারণে শিক্ষার্থীরা সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে। আমাদের রুম সংকট আছে। তাই এই মুহুর্তে আমরা কাউকে ল্যাব সুবিধা দিতে পারবোনা। পুরাতন ল্যাবগুলোকে আমরা আপডেট করার চেষ্টা করছি। নতুন ভবনের কাজ শেষ হলে সব বিভাগই তাদের ল্যাব সুবিধা পাবে।