মহানবী (সা.)-এর যুগে ঈদ আনন্দ

মহানবী (সা.)-এর যুগে ঈদ আনন্দ

ফাইল ছবি

নবী কারিম (সা.) মক্কা থেকে মদিনায় হিজরতের দ্বিতীয় বছর ঈদের প্রবর্তন হয়। (আবু দাউদ, হাদিস : ১১৩৪)

তখনকার ঈদে বর্তমান ঈদের মতো নতুন জামাকাপড়, কেনাকাটার ধুমধাম না থাকলেও আনন্দ-খুশির কমতি ছিল না। মহানবী (সা.) ঈদের দিন ছোট-বড় সবার আনন্দের প্রতি খেয়াল করতেন; এমনকি মদিনার ছোট ছোট শিশু-কিশোরের সঙ্গে বিশ্বনবী (সা.) আনন্দ করতেন। তাদের কোনো বৈধ আনন্দ উদযাপনে বাধা দিতেন না। বুখারি শরিফের ২৯০৬ নম্বর হাদিস সেই কথারই ইঙ্গিত করে। এক ঈদে আয়েশা (রা.)-এর ঘরে দুটি বালিকা (দফ বাজিয়ে) বুআস যুদ্ধের গৌরবগাথা সংগীত গাইছিল। তিনি এসেই বিছানায় গা এলিয়ে দিলেন এবং তাঁর মুখ ফিরিয়ে রাখলেন। এমন সময় আবু বকর (রা.) আয়েশা (রা.)-কে ধমক দিয়ে বলেন, আল্লাহর রাসুলের কাছে শয়তানের বাজনা? তখন রাসুল (সা.) তাঁর দিকে ফিরে বলেন, ওদের ছেড়ে দাও।
অন্য বর্ণনায় এসেছে, নবী (সা.) বললেন, হে আবু বকর, ওদেরকে ছাড়। প্রত্যেক সম্প্রদায়েরই ঈদ আছে আর আজ হলো আমাদের ঈদের দিন। (বুখারি, হাদিস : ৩৯৩১)

তা ছাড়া ভিন্ন ধর্মের মানুষরা যেন জানতে পারে ইসলামে বৈধ আনন্দ-ফুর্তি জায়েজ আছে। মুসনাদে আহমদের বর্ণনা, নবীজি বলেন, ইহুদিরা যেন জানতে পারে আমাদের ধর্মে প্রশস্ততা আছে। নিশ্চয়ই আমি একনিষ্ঠ ও মহানুভব ধর্ম ইসলাম নিয়ে প্রেরিত হয়েছে। (মুসনাদে আহমদ, হাদিস : ২৫৯৬২)

তা ছাড়া ঈদের দিন নবী কারিম (সা.) পরিবারের সবার সঙ্গে আনন্দ ভাগাভাগি করতেন। আয়েশা (রা.) বলেন, একদা ঈদের দিন আবিসিনিয়ার কিছু লোক লাঠি নিয়ে খেলা করছে। মহানবী (সা.) আমাকে জিজ্ঞেস করেন, হে আয়েশা! তুমি কি লাঠিখেলা দেখতে চাও? আমি বললাম, হ্যাঁ। তিনি তখন আমাকে তাঁর পেছনে দাঁড় করান, আমি আমার গাল তাঁর গালের ওপর রেখে লাঠিখেলা দেখতে লাগলাম। তিনি তাদের উৎসাহ দিয়ে বললেন, হে বনি আরফেদা! লাঠি শক্ত করে ধরো। আমি দেখতে দেখতে ক্লান্ত হয়ে পড়লাম। তিনি তখন বলেন, তোমার দেখা হয়েছে? আমি বললাম, হ্যাঁ। তিনি বলেন, তাহলে এবার যাও। (বুখারি, হাদিস : ২৯০৭)

ঈদের দিন সাহাবিদের ঈদ আনন্দের ভাগাভাগির পদ্ধতি ছিল ভিন্ন রকম। পরস্পর দেখা হলে তারা দোয়ার মাধ্যমে ঈদের আনন্দ উদযাপন করতেন। যা ছিল প্রকৃত ঈদ আনন্দের অনন্য উদাহরণ।

সাঈদ ইবনে জুবায়ের (রহ.) বলেন, ঈদের দিন সাহাবায়ে কেরাম একসঙ্গে হলে একে-অপরকে বলতেন, আল্লাহ কবুল করুন আমাদের থেকে এবং আপনাদের থেকে (সকল আমল)। (ফাতহুল বারি ২/৪৪৯)

আর আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) ঈদের দিন বলতেন, জানি না, আমাদের মধ্যে কে পুরস্কৃত, তাকে আমরা শাবাশি দিতাম! আর কে বঞ্চিত, তার জন্য আমরা শোক প্রকাশ করতাম! হে পুরস্কৃত! তোমাকে অভিনন্দন। হে বঞ্চিত! আল্লাহ তোমার ক্ষতিপূরণ করুন। (লাতাইফুল মাআরিফ, পৃষ্ঠা ২৩৫)

উপরোক্ত হাদিস থেকে উলামায়ে কেরাম কয়েকটি বিধান উদ্ভাবন করেছেন।

১.  ঈদের দিন আনন্দ প্রকাশ করে শরীর ও মনকে উত্ফুল্ল করে তোলা দ্বিনের অন্যতম নিদর্শন।

২.  আবশ্যকীয় বিধিবিধানের প্রতি লক্ষ্য রেখে বৈধ খেলাধুলা ও বিনোদনমূলক কাজে লিপ্ত হওয়া নিন্দনীয় নয়। যেমনটি হজরত আয়শা (রা.)-এর হাদিসে বর্ণিত হয়েছে।

৩.  নবী কারিম (সা.)-এর অন্যতম গুণ ছিল, তিনি মানুষের সঙ্গে নম্র আচরণ করতেন এবং তাদের মনোভাব বুঝতেন। তাই বৈধ কোনো অভ্যাস বা কাজে তিনি কখনো বাধা দিতেন না।

উল্লিখিত ঈদের বিনোদনে নবীজি (সা.)-এর ঘর ছিল তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। যা দয়া-মায়া, ভালোবাসা ও আন্তরিকতায় পরিপূর্ণ। সারকথা, নবীযুগে ঈদ ছিল একদিকে ইবাদত, ধর্মীয় আচার এবং আল্লাহর কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপনের মাধ্যম। অন্যদিকে মনের সব দুঃখ-কষ্ট ও কালিমা দূর করে পরিবার-পরিজন, সন্তানাদি ও বন্ধুবান্ধদের নিয়ে আনন্দে মেতে ওঠার অনন্য সুযোগ। তবে নবীজি (সা.) এই আনন্দ প্রকাশের নির্দিষ্ট সীমারেখাও উল্লেখ করে দিয়েছেন।