ব্যাংক কর্মকর্তা কর্তৃক ইবি শিক্ষককে মারধর, মহাসড়ক অবরোধ শিক্ষার্থীদের

ব্যাংক কর্মকর্তা কর্তৃক ইবি শিক্ষককে মারধর, মহাসড়ক অবরোধ শিক্ষার্থীদের

ব্যাংক কর্মকর্তা কর্তৃক ইবি শিক্ষককে মারধর, মহাসড়ক অবরোধ শিক্ষার্থীদের

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) আল-হাদীস অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ও বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ড. মোস্তাফিজুর রহমানের উপর অতর্কিত হামলা ও উপুর্যুপরি মারধরের অভিযোগ উঠেছে সোহেল মাহমুদ নামের এক ব্যাংক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। গতকাল বুধবার সকালে কুষ্টিয়া হাউজিং আবাসিক এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। অভিযুক্ত সোহেল মাহমুদ অগ্রণী ব্যাংক লিমিটেডের কুষ্টিয়া জেলার চৌড়হাস শাখার কর্মকর্তা। 

এ ঘটনায় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ভুক্তভোগী শিক্ষক। এদিকে অভিযুক্ত ব্যাংক কর্মকর্তার বিচার চেয়ে বৃহস্পতিবার বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন বিভাগটি শিক্ষার্থীরা।

লিখিত অভিযোগে ওই শিক্ষক উল্লেখ করেন, প্রতিদিনের মতো সকালে বাসার পাশে হাউজিং ডি-ব্লক এবং সি-ব্লকের মাঝামাঝি রাস্তায় হাটা অবস্থায় সি ব্লকের কুষ্টিয়া কৃষি কলেজের সামনে আসা মাত্রই হাউজিং ডি- ব্লকের ১৬৭ নং প্লটের বাসিন্দা সোহেল মাহমুদ তার উপর অতর্কিত হামলা চালান এবং শারীরিকভাবে আঘাত করেন। পরে তার সহকর্মীরা তাকে উদ্ধার করে কুষ্টিয়া সদর হাসপাতালে নিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা দেন। 

তিনি আরো বলেন, হামলাকারী ব্যক্তি ওই এলাকায় পাঁচজন শিক্ষকের নির্মাণাধীন বিল্ডিং এর প্রতিবেশী। এরআগে গত বছরের জুন মাসে ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের অধ্যাপক ড. আব্দুল বারী তার দ্বারা হামলার শিকার হন। এছাড়াও ভুক্তভোগী শিক্ষক ও তার সহকর্মীদের বিভিন্ন সময় প্রাণনাশসহ নানা হুমকি দিয়ে আসছে।  

এদিকে, শিক্ষককে মারধরকারী অভিযুক্ত ওই ব্যাংক কর্মকর্তার বিচারের দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকসংলগ্ন কুষ্টিয়া-খুলনা মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন শিক্ষার্থীরা। আল-হাদীস অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থীবৃন্দ ব্যানারে সকাল নয়টায় বিক্ষোভ শুরু করেন তারা। শিক্ষার্থীরা প্রথমে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে তালা দিলেও পরে তালা খুলে দিয়ে সড়ক অবরোধ করেন। এতে উভয়পাশে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। এতে সাধারণ যাত্রীরা ভোগান্তিতে পড়েন। 

পরে দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রক্টর শফিকুল ইসলাম ও সহকারী প্রক্টর শরিফুল ইসলাম জুয়েল ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে শিক্ষার্থীদের দাবির বিষয়ে আশ্বস্ত করলে সকাল ১০টার দিকে শিক্ষার্থীরা সড়ক ছেড়ে দেন। শিক্ষার্থীরা আগামী ২৪ ঘন্টার মধ্যে অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনার দাবি করেন। অন্যথায় ফের কর্মসূচির হুমকি দেন। এছাড়া অভিযুক্ত ওই কর্মকর্তার বিচার চেয়ে অগ্রণী ব্যাংক বিশ্ববিদ্যালয় শাখার ম্যানেজারের মাধ্যমে ব্যাংকটির চেয়ারম্যান বরাবর স্মারকলিপি দেন শিক্ষার্থীরা।

কুষ্টিয়া শহরে বসবাসরত শিক্ষকদের সাথে কথা হলে তারা জানান, বাড়ি নির্মাণ নিয়ে অনেক দিন ধরেই ড. মোস্তাফিজসহ কয়েকজন শিক্ষকের সঙ্গে বিরোধ চলছিল ওই ব্যাংক কর্মকর্তার। শিক্ষকরা বাড়ি নির্মাণ শুরু করলে বাধা দেন তিনি। পরে কুষ্টিয়া পৌরসভায় অভিযোগ করলে সার্ভেয়ার এসে বিষয়টির মীমাংসা করে দেন। কিন্তু কাজ শুরু করলে আবারো তিনি শিক্ষকদের হুমকি দিতে থাকেন। গত বছরের জুলাই মাসে ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের অধ্যাপক ড. আব্দুল বারিকে শারীরিকভাবে লাঞ্চিত করার অভিযোগ রয়েছে সোহেলের বিরুদ্ধে। ওই ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন ভুক্তভোগীসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের চার অধ্যাপক। ভুক্তভোগী শিক্ষক বিষয়টি ব্যাংকের এক সিনিয়র কর্মকর্তাকে অবহিত করলে তার প্রতি ক্ষুব্ধ হন অভিযুক্ত সোহেল।

দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রক্টর শফিকুল ইসলাম বলেন, 'গতকাল কুষ্টিয়াতে যে ঘটনা ঘটেছে এটা অনাকাঙ্ক্ষিত। সেই ঘটনার প্রতিবাদে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করেছে। তাদের দাবি যৌক্তিক। আমি তাদেরকে লিখিতভাবে দাবি জানাতে বলেছি। নিয়মতান্ত্রিক পদ্ধতির মাধ্যমে আমরা বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করবো।'

আইন বিভাগের অধ্যাপক ও সাবেক আইন প্রশাসক ড. জহুরুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন সিনিয়র শিক্ষকরা মিলে পূর্বে একবার এমন ঘটনা মীমাংসা করে দিয়েছিলাম। এরপরে এমন ঘটনা মেনে নেওয়া যায় না। আমি মনে করি, এটা বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল শিক্ষকের ওপর হামলা।’

তবে হামলার অভিযোগ অস্বীকার করে সোহেল মাহমুদ বলেন, ‘তার সাথে আমার বিরোধ ছিল। তিনি আমার অফিসের ডিজিএমের কাছে আমার বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ করেছেন। কিন্তু আমি মারধরের সাথে জড়িত নই। তিনি আমার নামে মিথ্যা অভিযোগ করেছেন। এটি ভিত্তিহীন।'