বাণিজ্য ও বিমান খাতে পাকিস্তান-আজারবাইজান চুক্তি

বাণিজ্য ও বিমান খাতে পাকিস্তান-আজারবাইজান চুক্তি

প্রতীকী ছবি।

দু’দেশের পুরনো সম্পর্ককে জোরদার করার জন্য বাণিজ্য ও বিমান চলাচলের ক্ষেত্রে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা বাড়াতে সম্মত হয়েছে পাকিস্তান ও আজারবাইজান।

বৃহস্পতিবার (১৫ জুন) জুগুলবা প্রাসাদে প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ ও আজারবাইজানের প্রেসিডেন্ট ইলহাম আলিয়েভের মধ্যে অনুষ্ঠিত বৈঠকে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক নিয়ে দীর্ঘ আলোচনার পর এ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।

দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের পর এক যৌথ প্রেস ব্রিফিংয়ে দুই নেতা বলেন, আমরা শিক্ষার ক্ষেত্রে সহযোগিতা ও দুই রাজধানীতে আজারবাইজান এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট চালু করতে, সামরিক মহড়ার সংখ্যা বাড়াতে, জ্বালানি ও বিনিয়োগে একমত হয়েছি।

উল্লেখ্য, আজারবাইজানের প্রেসিডেন্ট আলিয়েভের আমন্ত্রণে পাকিস্তান প্রধানমন্ত্রী একটি উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদলের সাথে বাকুতে দু’দিনের সরকারি সফরে গেছেন।

পাকিস্তান প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের আগে আজারবাইজানের প্রথম প্রেসিডেন্ট হায়দার আলিয়েভের সমাধি এবং শহীদদের স্মৃতিস্তম্ভ পরিদর্শন করেছিলেন। এ সময় তিনি শহরের অবকাঠামো ও চিত্তাকর্ষক উদ্যান গড়ে তোলার ক্ষেত্রে প্রেসিডেন্ট ইলহাম আলিয়েভের নেতৃত্বের কথা বলেছেন।

এদিকে বাকুর পরিচ্ছন্নতা ও সৌন্দর্যকে অভিনব উল্লেখ করে শেহবাজ আজারবাইজানের প্রেসিডেন্টকে ইসলামাবাদে উদ্যান তৈরি ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় তাদের বিশেষজ্ঞদের সহযোগিতা দেয়ার জন্য অনুরোধ করেন।

শেহবাজ শরিফ বলেছিলেন, আমরা বিভিন্ন দ্বিপক্ষীয় ও বহুপক্ষীয় বিষয়ে সম্পূর্ণরূপে একমত হতে পেরেছি। কারণ, আমাদের সম্পর্ক পারস্পরিক বিশ্বাস ও আন্তরিকতার ভিত্তিতে নির্মিত হয়েছিল।

তিনি আরো বলেন, বাকুজুড়ে পাকিস্তানি পতাকা দু’টি দেশের মানুষের মধ্যে ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ।

তিনি আরো বলেন, ‘যদিও আমাদের সম্পর্ক যুগ যুগ ধরে সুদৃঢ়। তবুও বাণিজ্য, বিনিয়োগ, সফর বিনিময় ও সহযোগিতার অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে এর তীব্রতা প্রতিফলিত হয়নি।

জ্বালানি খাতে সহযোগিতার ওপর জোর দিয়ে তিনি বলেন, একটি জ্বালানি-ঘাটতি দেশ হওয়ায় পাকিস্তান গত বছর ২৭ বিলিয়ন ডলার ব্যয় করে ব্যয়বহুল আমদানি করা জ্বালানির ওপর নির্ভরশীল ছিল, যা ইউক্রেন সঙ্কটের কারণে আমদানি মূল্যস্ফীতি এবং তেলের মূল্য বৃদ্ধির চ্যালেঞ্জের কারণে অসাধ্য হয়ে উঠছিল।

পাকিস্তান প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন যে তার সরকার শিল্প, রফতানি, বাণিজ্য ও অফিসে সহায়তার জন্য ব্যয়বহুল আমদানি করা জ্বালানিকে সৌর শক্তি দিয়ে প্রতিস্থাপন করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

বন্ধুপ্রতীম দেশে পাকিস্তানি পণ্য রফতানির সুবিধার্থে পাকিস্তানের চালের ওপর শুল্ক প্রত্যাহার করার জন্য তিনি আজারবাইজানের প্রেসিডেন্টকে ধন্যবাদ জানান।

তিনি বলেন, পাকিস্তান আজারবাইজান এয়ারলাইনকে ইসলামাবাদে তার কার্যক্রম শুরু করার জন্য স্বাগত জানায় এবং দ্বিপক্ষীয় পর্যটনের প্রচারের লক্ষে বাকু-করাচি ফ্লাইট পরিচালনা করার জন্য দেশটির বিমান পরিবহন মন্ত্রীকে পাকিস্তানে আমন্ত্রণ জানায়।

প্রধানমন্ত্রী কাশ্মীরের কট্টর সমর্থক হওয়ার জন্য আজারবাইজানকে ধন্যবাদ জানান এবং জাতিসঙ্ঘের প্রস্তাব লঙ্ঘনসহ উপত্যকায় ভারতীয় সন্ত্রাস ও নৃশংসতা তুলে ধরেন।

তিনি বলেন, আজারবাইজানের আঞ্চলিক অখণ্ডতার প্রতি পাকিস্তান প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং আজারবাইজানের অধিকারের জন্য লড়াই করার জন্য দেশটির বাহিনীর সাহসিকতার প্রশংসা করে।

গোয়াদর বন্দরের অপার সুযোগের কথা তুলে ধরে পাকিস্তান প্রধানমন্ত্রী বলেন, উভয় দেশ বাণিজ্য বাড়াতে সহযোগিতা করতে পারে।

তিনি আরো বলেন, প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে পাকিস্তান-আজারবাইজান সহযোগিতা গোপন নয়। কারণ এটি অঞ্চলের শান্তির জন্য ছিল, কোনো আগ্রাসন নয়।

প্রেসিডেন্ট ইলহাম আলিয়েভকে পাকিস্তান সফরের আমন্ত্রণ জানিয়ে পাকিস্তান প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি পেট্রোলিয়াম ও সৌর শক্তিতে সহযোগিতার বিষয়ে দীর্ঘ আলোচনার জন্য অর্থনৈতিক, বিমান ও জ্বালানি মন্ত্রীদের আজারবাইজান প্রতিনিধিদলের অপেক্ষায় রয়েছেন।

প্রেসিডেন্ট ইলহাম আলিয়েভ তার বক্তব্যে পাকিস্তান প্রধানমন্ত্রী ও তার প্রতিনিধি দলকে বাকুতে স্বাগত জানিয়ে বলেন, উভয় দেশ জ্বালানি, প্রতিরক্ষা ও শিক্ষা ক্ষেত্রে সহযোগিতা বাড়াতে সম্মত হয়েছে।

তিনি বলেন, আজারবাইজান আরো বেশি পাকিস্তানি ছাত্রদের আমন্ত্রণ জানাতে আশা করে এবং পাকিস্তানের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অধ্যয়নরত আজারবাইজানের শিক্ষার্থীরা দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক জোরদারে অবদান রাখে।

তিনি আরো বলেন, দুই পক্ষ সামরিক মহড়া বাড়াতে সম্মত হয়েছে। কারণ পরিবর্তিত পরিস্থিতি বিবেচনায় সামরিক সক্ষমতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

তিনি আরো বলেন, শক্তিশালী সামরিক সক্ষমতা স্বাধীনতা ও আঞ্চলিক অখণ্ডতার নিশ্চয়তা দেয়। কারণ আজারবাইজানও আলাপ নয়, সামরিক শক্তির মাধ্যমে তার কারাবাখ অঞ্চলকে আর্মেনীয়দের দখল থেকে মুক্ত করেছে।

তিনি বলেন, পাকিস্তান ও আজারবাইজান সব সময় কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দাঁড়িয়েছে। কারণ উভয় জনগণই অনেক বিষয়ে একই মত পোষণ করেছে।

প্রধানমন্ত্রী শেহবাজের নেতৃত্বের প্রশংসা করে, আজারবাইজানের রাষ্ট্রপতি দেশের উন্নয়নে দূরদর্শী এবং প্রতিশ্রুতিসহ এমন একজন মহান নেতার জন্য পাকিস্তানের জনগণকে অভিনন্দন জানান।

সূত্র : অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস অফ পাকিস্তান