কোরবানির পশুর দাম চড়া , ক্রেতারা ছোট গরু খুঁজছেন

কোরবানির পশুর দাম চড়া , ক্রেতারা ছোট গরু খুঁজছেন

সংগৃহিত ছবি।

আর মাত্র কয়েক দিন পরেই মুসলমান ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল আজহা বা কোরবানির ঈদ। এই ঈদকে সামনে রেখে এরই মধ্যে রাজধানীর অস্থায়ী বাজারগুলোয় দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে গরু-ছাগল নিয়ে এসেছেন ব্যবসায়ীরা। তবে এবার কোরবানির গরুর দাম অনেক বেশি চাচ্ছেন ব্যাপারীরা। গত বছরের তুলনায় মণপ্রতি দাম বেশি চাওয়া হচ্ছে ৬ থেকে ৭ হাজার টাকা করে।

ব্যাপারীরা বলেছেন, গত বছর কোরবানির গরু আনুমানিক ২৭ থেকে ২৮ হাজার টাকা মণ ধরে বিক্রি করা হয়। এবার ৩৪ থেকে ৩৫ হাজার টাকা মণ ধরে গরুর দাম চাওয়া হচ্ছে। দরদামের মাধ্যমে দাম একটু কম বেশি হতে পারে। তবে গত বছরের তুলনায় এবার মণপ্রতি ৬ থেকে ৭ হাজার টাকা বেশি দিয়েই কোরবানির গরু কিনতে হবে।

 

মেরাদিয়া হাটে গিয়ে দেখা যায়, দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে গরু নিয়ে এসেছেন ব্যাপারীরা। এর মধ্যে কেউ গ্রাম থেকে সংগ্রহ করে গরু নিয়েছেন। তবে বেশিরভাগই নিজের খামারের গরু নিয়ে এসেছেন। হাটটিতে ছোট ও মাঝারি গরুর সরবরাহ বেশি। বড় গরুর সংখ্যা বেশ কম। ছোট গরুর দাম ব্যাপারীরা ১ লাখ ২০ হাজার থেকে ১ লাখ ৬০ হাজার টাকা চাচ্ছেন। মাঝারি গরুর দাম চাওয়া হচ্ছে ২ লাখ থেকে ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা। বাজারটিতে ৪ থেকে ৫ লাখ টাকা দামের গরুও রয়েছে।

দাম বেশি হওয়ার কারণ হিসেবে ব্যাপারীরা বলেছেন, এবার গরুর খাবারের দাম বেশি এবং সরবরাহও কম। ঢাকার বাজারে মাংসের কেজিই বিক্রি হচ্ছে প্রায় ৮০০ টাকা। গ্রাম থেকে গরু সংগ্রহ করতে বাড়তি অর্থ গুণতে হচ্ছে। সবকিছু মিলেই এবার গরুর দাম বেশি। ব্যাপারীরা আরো জানিয়েছেন, গত বৃহস্পতিবার থেকেই রাজধানীর অস্থায়ী বাজারগুলোয় কোরবানির পশু তুলতে শুরু করেছেন ব্যবসায়ীরা। তবে বিক্রি এখনো জমে উঠেনি। মঙ্গলবার থেকে মূল বিক্রি শুরু হবে। এখন যারা হাটে আসছেন, তারা ছোট গরু কিনছেন। বড় গরুর ক্রেতা কম।

পাবনা থেকে মেরাদিয়া হাটে গরু নিয়ে আসা মো. রবিউল বলেন, এবার গরুর দাম বেশি। ৩৪ থেকে ৩৫ হাজার টাকা মণ ধরে গরু বিক্রি করা হচ্ছে। গত বছর ২৭ থেকে ২৮ হাজার টাকা মণ ধরে গরু বিক্রি করেছি।

গরুর দাম বেশি হওয়ার কারণ কী? জানতে চাইলে মো. রবিউল বলেন, এবার গরুর সব খাবারের দাম বেশি। এবার গরুর সরবরাহও কম। এ কারণেই দাম বেশি।

বিক্রি পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে চাইলে রবিউল বলেন, আমরা তিন ভাই মিলে ১৭টি গরু নিয়ে এসেছি। গত বৃহস্পতিবার বাজারে গরু তুলেছি। এখন পর্যন্ত ১টি গরু বিক্রি হয়েছে। এখন ক্রেতারা আসছেন, দাম শুনে চলে যাচ্ছেন। আমরা আশা করছি, আগামী সোম-মঙ্গলবার থেকে মূল বিক্রি শুরু হবে।

ঝিনাইদহ থেকে গরু নিয়ে আসা আশরাফুল বলেন, গত বছরের তুলনায় এবার গরুর দাম বেশি। এবার কোরবানির গরু কিনতে মণপ্রতি গত বছরের তুলনায় ৬ থেকে ৭ হাজার টাকা বেশি খরচ হবে। দাম বেশি হওয়ায় ক্রেতারা ছোট গরুর দিকে ছুটছেন। আমরা একটি বড় গরু এবং ১১টি ছোট ও মাঝারি গরু নিয়ে এসেছি। এখন বাজারে যারা আসছেন, সবাই ছোট গরুর দাম জানতে চাচ্ছে।

গরুর দাম বেশি হওয়ার কারণ হিসেবে আশরাফুল বলেন, গরুর খাবারের দাম অনেক বেশি। গ্রাম থেকে গরু সংগ্রহ করতে হচ্ছে বেশি দামে। ঢাকার বাজারে মাংসের কেজিই বিক্রি হচ্ছে প্রায় ৮০০ টাকা। গ্রামেও মাংসের দাম অনেক বেশি। আবার পরিবহন খরচও এবার বেশি হচ্ছে। সবকিছু মিলেই এবার গরুর দাম বেশি।

চুয়াডাঙ্গা থেকে গরু নিয়ে আসা হাবিবুর রহমান বলেন, বড়, ছোট মিলিয়ে আমরা ২২টি গরু নিয়ে এসেছি। সব থেকে বড় গরুর দাম সাড়ে ৫ লাখ টাকা চাচ্ছি। এই গরুর মাংস হবে ১০ মণ। এর থেকে একটু ছোট গরু ৪ লাখ টাকা দাম চাচ্ছি। ছোট গরু ১ লাখ ৩০ হাজার থেকে ১ লাখ ৬০ হাজার টাকা এবং মাঝারি গরু ২ লাখ থেকে ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা দাম চাওয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, গরুর দাম বেশি হওয়ার কারণে ক্রেতারা ছোট গরুর খোঁজখবর নিচ্ছেন বেশি। আমরা এখন পর্যন্ত দুটি গরু বিক্রি করেছি। দুটিই ছোট গরু। বড় গরু মানুষ এসে দেখে যাচ্ছে। কিন্তু দরদাম তেমন করছে না। আমরা ধরে নিয়েছি মঙ্গলবার থেকে মূল বিক্রি শুরু হবে। আশা করি তখন বড় গরুর ক্রেতা পাওয়া যাবে।