পদ্মা সেতুর কিস্তি নিয়ে ভাইরাল কদম আলী
ফাইল ছবি।
অফিসে ঢোকার সাথে সাথে কদম আলী বলে হুজুগে বাঙালি, আজ বুঝলাম কথাটার সত্যতা।
বললাম, আজও কি ‘অর্থতিক্স’ নিয়ে আলোচনা করবে নাকি?
কথায় আরো রেগে বলল, রাখ তোমার এ সব নতুন শব্দ। যে দেশের মানুষ ভালকে ভাল, মন্দকে মন্দ বলতে পারে না সে দেশে কিসের গণতন্ত্র? আগে এর মানে বুঝতে হবে।
বললাম, তোমার এত রাগের কারণ কি? পদ্মা সেতুর কিস্তি দেওয়ার খবরে এত কমেন্টস?
বলল, জি স্যার, বুঝতে পারার জন্য ধন্যবাদ। এরা কি বোঝে না, যে সরকার, অর্থ ও সেতু বিভাগ আলাদা সত্তা, নাকি বুঝেও না বোঝার ভান করে।
বললাম, পদ্মা সেতুর মোট নির্মাণ ব্যয় ৩০,১৯৩ কোটি টাকা, যার মধ্যে অনুদান ৩০০ কোটি টাকা বাদ দিলে ২৯,৮৯৪ কোটি টাকা অর্থ বিভাগ ঋণ দিয়েছে সেতু বিভাগকে বা মন্ত্রণালয়কে। যা চুক্তি অনুসারে ২০৫৬-৫৭ অর্থবছরে শেষ হবে।
ও বলল, আসল বিষয় হলো বাংলাদেশ ব্যাংক ঋণ দিয়েছে অর্থ ও সেতু বিভাগের চুক্তি অনুসারে। যার সুদের হার ১ভাগ, ৩৫ বছরে সুদ আসে ৬৭৬৩ কোটি টাকা অর্থাৎ সরকার দেশের ভেতর থেকে বিভিন্ন ব্যাংক ও বন্ড বিক্রয়ের দ্বারা যে অর্থ ঋণ হিসেবে নেয়, সেই টাকা দিয়ে পদ্মা সেতু তৈরি করা হয়েছে। বিদেশি সংস্থার জায়গায় বাংলাদেশ ব্যাংক ঋণ দিয়েছে।
বললাম, রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমে যাওয়ায়, বিভিন্ন বিদেশি কন্ট্রাক্টরদের ১১৫৮ কোটি টাকা অধিক পরিশোধ করতে হয়েছে। সেটাকেও তো বহু জায়গায় ছড়ানো হলো ১০ হাজার কোটি টাকা বা ২৭ ভাগ অধিক মূল্য যোগ হলো নির্মাণ শেষ হওয়ার পরও।
বলল, তোমরা পারও রে ভাই, শুধু নেগেটিভ বিষয় ভাইরাল করতে, একবারও কি ভেবেছ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশের টাকায় পদ্মা সেতু করে ৩৩.৩৪% অধিক লাভ করে দিয়েছেন।
বললাম, সেটা আবার কীভাবে? তুমি তো নতুন থিওরি আবিষ্কার করলে?
ও বলল, ধর যদি এই টাকা দেশের থেকে না হয়ে বিদেশি ঋণের সাহায্যে করা হতো তাহলে সকল কিছু এক টাকার পরও ডলারের দাম বাড়ার কারণে অতিরিক্ত পরিশোধ করতে হতো ১০,৩৩৮ কোটি টাকা। সেটার বাহবা দিতেই হবে। উনার মতো সহনশীল মানুষ পেয়েছিলে বলে তোমরা মাথা উঁচু করে বেঁচে আছো।
বললাম, আসলে যারা এগুলো নিয়ে কথা বলছে, তাদের বাড়িতে গিয়ে ডুপ্লেক্স বাড়িসহ গাড়ি দিয়ে আছ তারপরও সমালোচনা করবে। ওদের মাথা উঁচু নিচু দিয়ে কিছু আসে যায় না।
ও বলল, লিবিয়ার প্রেসিডেন্ট গাদ্দাফির কথা মনে আছে? যিনি পাঁচটা মৌলিক উপাদান, অন্ন, বস্ত্র, চিকিৎসা, শিক্ষা ও বাসস্থান ফ্রি করে দিয়েছিলেন সে দেশের জনগণের জন্য। তারপরও কিন্তু জনগণের মন পান নাই।
বললাম, লিবিয়ার জনগন বর্তমানে বুঝতে পারছে, আসলে তিনি কি ছিলেন।
ও বলল, এখন বুঝে আর কি হবে? আরব বসন্তের নামে ভিক্ষার ঝুলি ধরিয়ে দিয়েছে। কিস্তির টাকা ভাইরাল করলে, একবারও তো কেউ লিখলে না, এই চার কিস্তি যদি ডলারের ঋণ পরিশোধ করলে ২১১ কোটি টাকা অধিকসহ মোট ৮৪৫ কোটি টাকা পরিশোধ করতে হতো।