প্লাস্টিক বর্জ্য কুমিল্লা নগরীর অশনিসংকেত

প্লাস্টিক বর্জ্য কুমিল্লা নগরীর অশনিসংকেত

ফাইল ছবি।

প্লাস্টিক বর্জ্য অনিয়ন্ত্রিত ভাবে ছড়িয়ে পড়ছে কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনে। যত্রতত্রভাবে ফেলা প্লাস্টিক বোতল, খাবারের প্যাকেট, চায়ের কাপ, মোড়ক কিংবা হার্ড প্লাস্টিকের টুকরা প্রতিনিয়ত মিশে যাচ্ছে নগরীর মাটিতে, পুকুর-দিঘীর পানিতে। একই সাথে দূষিত হচ্ছে মাটি ও পানি। বন্ধ্যা হচ্ছে জমি, গাছপালা-ঘাস জন্মাতে পারছেনা প্লাস্টিক বর্জ্যে ছেয়ে যাওয়া মাটিতে।

পানিতে মিশে যাওয়া কিংবা ভাসতে থাকা এসব প্লাস্টিক বর্জ্য নষ্ট করছে- জলীয় জীব বৈচিত্র্য এবং সৌন্দর্য্য। কিছু অসচেতন মানুষ এসব বর্জ্য আবার ফেলছে শহরের প্রধান প্রধান নর্দমা এবং নালায়। লোক চক্ষুর আড়ালে স্ল্যাবের নিচে এসব বর্জ্য জমে বৃষ্টির পানি দ্রুত অপসারণে অন্যতম প্রতিবন্ধকতা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

সম্প্রতি কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন জলাবদ্ধতা নিরসনে নগরীর ড্রেস ও নালা সংস্কার কাজ চালাতে গিয়ে দেখা গেছে- প্রতিটি ড্রেনের স্ল্যাবের নিচে জমা রয়েছে প্লাস্টিকের বোতল, খাবারের বাক্স-প্যাকেট, চায়ের কাপ মোড়কসহ নানান প্লাস্টিক বর্জ্য।  কোথাও কোথাও পানি চলাচলের পথ বন্ধ হয়ে শুধুমাত্র প্লাস্টিক বর্জ্যে ভর্তি ড্রেনেরও দেখা মিলছে।


কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন সূত্রে জানা গেছে, কুমিল্লা নগরীতে প্রতিদিন জৈব ও অজৈব মিলে অন্তত দেড় শত টন বর্জ্য উৎপাদিত হচ্ছে, যার মধ্যে অন্তত দুই টন প্লাস্টিক বর্জ্য। এসব বর্জ্যরে বেশির ভাগই আসছে বাসা-বাড়ি থেকে। তবে এর বাইরে কি পরিমান প্লাস্টিক নগরীর মাটি বা পানিতে মিশছে তার হিসাব কারও পক্ষে জানা সম্ভব নয়।
কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী ড. শফিকুল ইসলাম জানান, কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন তার সীমিত জনবল দিয়ে বর্জ্য নিষ্কাশন ও অপসারনের কাজ করে। কিন্তু এখনো পর্যন্ত জৈব ও অজৈব বর্জ্য আলাদা করে তা ব্যবস্থাপনা করা সম্ভব হয়ে উঠছে না। অন্যদিকে সাধারণ নাগরিকদের অনেকেই অসচেতন ভাবে যেখানে সেখানে প্লাস্টিক বর্জ্য ফেলছেন। কিন্তু এগুলো ফেলছে কারা  সেটিও দেখতে হবে। 

তিনি আরো বলেন, নগরীতে প্লাস্টিকের এমন আগ্রাসন ঠেকাতে আইনী পদক্ষেপ নেয়া যেতে পারে। কাউন্সিলরগণ তাদের নিজ নিজ এলাকায় অসচেতনদের বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমান আদালত কিংবা জরিমানা করা হলে- এসব কমে আসবে।

তিনি আরো বলেন, এসব প্লাস্টিক তো আর সিটি কর্পোরেশন ফেলেনি। আমরা ফেলেছি, সাধারণ মানুষ ফেলছে। খালি সিটি কর্পোরেশনের দোষ দিয়ে লাভ কি যদি আমরা সচেতন না হই।

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন-বাপা কুমিল্লা জেলার সাধারণ সম্পাদক আলী আকবর মাসুম জানান, কুমিল্লার জন্য পরিবেশ দূষণে অন্যতম বিপজ্জনক অবস্থায় আছে এই প্লাস্টিক দূষণ। যা মাটি-পানি দূষণ করছে। প্লাস্টি ডাম্পিংয়ের নির্ধারিত জায়গা বা ব্যবস্থাপনা না থাকায় - তা পুড়িয়ে ফেলা হচ্ছে তা বায়ুকেও দূষিত করছে মারাত্মক ভাবে।

স্থানীয় সরকারের যেসব প্রতিষ্ঠান আছে যেমন- সিটি কর্পোরেশন তারা কঠোর ভাবে এই বিষয়টি নিয়ন্ত্রন করতে না পারলে প্লাস্টিক দূষণ কুমিল্লার জন্য অশনিসংকেত।

আর একারণেই নাগরিকদেরই প্রথমে সচেতন হতে হবে এবং করতে হবে।