আজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্মদিন

আজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্মদিন

সংগৃহীত

পূর্ববঙ্গের পিছিয়ে পড়া মুসলিম জনগোষ্ঠীর আর্থসামাজিক উন্নয়ন, একটি জাতিরাষ্ট্র গঠনের বুদ্ধিবৃত্তিক সূতিকাগার, বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও পরবর্তী প্রতিটি বাঁক পরিবর্তনকারী ঘটনার গর্বিত অংশীদার প্রাণের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ১০২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী আজ (১ জুলাই)। 

তৎকালীন ঢাকার নবাব স্যার সলিমুল্লাহ, ধনবাড়ির নবাব সৈয়দ নওয়াব আলী চৌধুরী, শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হকের নিরবচ্ছিন্ন চেষ্টায় ১৯১২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ব্রিটিশ ভারতের ভাইসরয় লর্ড হার্ডিঞ্জ দেশের সর্বপ্রাচীন ও সর্ববৃহৎ এই বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার প্রতিশ্রুতি দেন। অতঃপর ১৯২০ সালের ১৩ মার্চ ভারতীয় আইন সভায় 'দি ঢাকা ইউনিভার্সিটি অ্যাক্ট ১৯২০' পাস হয়। ১৯২১ সালের ১ জুলাই দেশের প্রাচীনতম এ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়।

নানা বিরোধিতা-প্রতিকূলতা কাটিয়ে এ বিশ্ববিদ্যালয় পূর্ববাংলার জ্ঞানভিত্তিক সমাজ গঠনের লক্ষ্যে গড়ে ওঠে। প্রতিষ্ঠার পর থেকে বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠ শিক্ষাবিদ, দার্শনিক, বিজ্ঞানী ও সাহিত্যিকদের বড় অংশ এই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েছেন, পড়িয়েছেন। সত্যেন্দ্রনাথ বসু, হরপ্রসাদ শাস্ত্রী, মুহম্মদ শহীদুল্লাহ, গোবিন্দ চন্দ্র দেব, এফ সি টার্নার, ডব্লিই জেনকিন্স, এ এফ রহমান, রমেশ চন্দ্র মজুমদার, আহমদ হাসান দানী, এ বি এম হবিবুল্লাহ, সালাহ্উদ্দীন আহমদ, জসীম উদ্দীন, কাজী মোতাহার হোসেন, আবদুর রাজ্জাক, খন্দকার মোকাররম হোসেন, মোহাম্মদ আবদুল হাই, মুনীর চৌধুরী, এ কে নাজমুল করিম, মোজাফফর আহমদ চৌধুরী, আহমদ শরীফ, নীলিমা ইব্রাহিম, খান সারওয়ার মুরশিদ, আনিসুজ্জামান, আবদুল্লাহ ফারুক, কামাল উদ্দীন আহমদ, সরদার ফজলুল করিম, আবু হেনা মোস্তফা কামাল, কাইয়ূম চৌধুরী, বুদ্ধদেব বসু, শামসুর রাহমান, সৈয়দ শামসুল হক, মোহাম্মদ মনিরুজ্জামানসহ অনেক অসামান্য বিজ্ঞানী, গবেষক, পণ্ডিত ও কবি-লেখক এই বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে জড়িয়ে আছেন।  

এ প্রতিষ্ঠানের হাত ধরেই দেশের সমাজ উচ্চশিক্ষার পথে হেঁটেছে। এ বিশ্ববিদ্যালয় দেশের সাংস্কৃতিক-রাজনৈতিক-সামাজিক আন্দোলনের সূচনা ও বেগবান করেছে এবং দেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের চিন্তা ও সক্রিয়তার প্রেক্ষাপট তৈরি করেছে। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধ এবং এর পরবর্তী সব জনআন্দোলন ও সংগ্রামে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের রয়েছে গৌরবময় ভূমিকা। এখনও সারাদেশের সুস্থ চিন্তার বিকাশ; অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ-প্রতিরোধের কেন্দ্র হচ্ছে এই বিশ্ববিদ্যালয়। 

শুরুতে কলা, বিজ্ঞান ও আইন অনুষদের অন্তর্ভূক্ত বিভাগগুলো ছিল সংস্কৃত ও বাংলা, ইংরেজি, ইতিহাস, আরবি ও ইসলামিক স্টাডিজ, ফারসি ও উর্দু, দর্শন, অর্থনীতি ও রাজনীতি, পদার্থবিদ্যা, রসায়ন, গণিত এবং আইন। প্রথম শিক্ষাবর্ষে বিভিন্ন বিভাগে মোট ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা ছিল ৮৭৭ জন এবং শিক্ষক সংখ্যা ছিল মাত্র ৬০ জন। 

বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৩টি অনুষদ, ১২টি ইনস্টিটিউট, ৮৩টি বিভাগ, ৫৬টি গবেষণা কেন্দ্র, ১২৩টি অ্যাফিলিয়েটেড কলেজ ও ইনস্টিটিউট রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ক্যাম্পাসে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীর সংখ্যা এখন প্রায় ৩৯ হাজার। পাঠদান ও গবেষণায় নিয়োজিত রয়েছেন প্রায় দুই হাজার শিক্ষক। 

শতবর্ষ আগের ঢাকার সবচেয়ে অভিজাত ও সৌন্দর্যমণ্ডিত রমনা এলাকায় পূর্ববঙ্গ এবং আসাম প্রদেশের ভবন এবং ঢাকা কলেজের ভবনগুলোর সমন্বয়ে মনোরম পরিবেশে গড়ে ওঠে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। ঢাকা কলেজ ও জগন্নাথ কলেজের (বর্তমান জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়) ডিগ্রি ক্লাসে অধ্যয়নরত ছাত্রদের নিয়ে এ বিশ্ববিদ্যালয় যাত্রা শুরু করে। 

১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে ১৯৭১-এর স্বাধীনতা যুদ্ধে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের রয়েছে গৌরবময় ভূমিকা। স্বাধীনতা যুদ্ধে এ বিশ্ববিদ্যালয় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর আক্রমণের শিকার হয়। এতে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারী, ছাত্রছাত্রীসহ অনেকে শহীদ হয়েছেন।

উপাচার্য অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামান জানিয়েছেন, প্রতিষ্ঠার এ দিনটি প্রতিবছর 'ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দিবস' হিসেবে উদযাপন করা হয়। এবছর দিবসটির প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে বিশ্ববিদ্যালয়’। দিবসটি উপলক্ষ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন প্রবেশদ্বারে তোরণ নির্মাণ এবং গুরুত্বপূর্ণ ভবন ও স্থাপনাসমূহে আলোকসজ্জা করা হবে।