ভারতে আদিবাসী ব্যক্তির মুখে মূত্রত্যাগ, রাজনৈতিক বিতর্ক তুঙ্গে

ভারতে আদিবাসী ব্যক্তির মুখে মূত্রত্যাগ, রাজনৈতিক বিতর্ক তুঙ্গে

কংগ্রেসের জাতীয় মুখপাত্র পবন খেড়া এটি টুইট করেছেন

ভারতের মধ্যপ্রদেশে একজন আদিবাসী ব্যক্তির মুখে ও মাথায় মূত্রত্যাগ করার ঘটনা নিয়ে তীব্র রাজনৈতিক বিতর্ক শুরু হলে অভিযুক্তকে আটক করে তার বিরুদ্ধে জাতীয় নিরাপত্তা আইনে চার্জ আনা হয়েছে।এর আগে ওই রাজ্যে ভাইরাল হওয়া একটি ভিডিওতে দেখা যায় একজন ব্যক্তি সিগারেট খেতে খেতে মাটিতে বসে থাকা একজন আদিবাসী ব্যক্তির গায়ে ভাবলেশহীন ভঙ্গীতে প্রস্রাব করে যাচ্ছেন।

ওই ব্যক্তিকে পরে পরভেশ শুক্লা নামে চিহ্নিত করা হয়। বিরোধী কংগ্রেস দাবি করেছে তিনি শাসক দল বিজেপির একজন নেতার ঘনিষ্ঠ সহযোগী, তবে বিজেপি বলছে দলের সঙ্গে ওই ব্যক্তির কোনও সম্পর্কই নেই।এদিকে এই ঘটনা নিয়ে তুমুল রাজনৈতিক বাগবিতন্ডার পর মধ্যপ্রদেশের বিজেপি সরকার অবশেষে আজ (বুধবার) ভোররাতের একটু আগে ওই অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করেছে।

মধ্যপ্রদেশ পুলিশ জানিয়েছে, গ্রেপ্তারি এড়াতে গত বেশ কয়েক ঘন্টা ধরে পরভেশ শুক্লা এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় পালিয়ে বেড়াচ্ছিলেন – কিন্তু এদিন রাত দুটোর দিকে তিনি পুলিশের জালে ধরা পড়ে যান।অভিযুক্ত ব্যক্তিকে এখন পুলিশ জেরা করছে। তার বিরুদ্ধে জাতীয় নিরাপত্তা আইন ছাড়াও এসসি/এসটি অ্যাক্ট (তফসিলি আইন) ও ইন্ডিয়ান পিনাল কোডের অন্যান্য ধারাতেও চার্জ আনা হয়েছে।

তবে বিরোধী দল কংগ্রেস বলছে, মধ্যপ্রদেশে বিজেপি সরকারের আমলে আদিবাসীদের বিরুদ্ধে ‘হিংসা ও নির্যাতনে’র যে সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে এই ঘটনা তারই একটি দৃষ্টান্ত।পুরো ঘটনাটিকে ধামাচাপা দিতে ভিক্টিম ওই আদিবাসী ব্যক্তিকে ভয় দেখিয়ে মিথ্যা হলফনামাও তৈরি করা হয়েছিল বলে কংগ্রেস অভিযোগ করেছে – যে হলফনামায় ভাইরাল ভিডিওটিকে ‘ফেক’ বা সাজানো বলে দাবি করা হয়।

ভিডিও নিয়ে হইচই

গতকাল (মঙ্গলবার) ৪ঠা জুলাই থেকেই সোশ্যাল মিডিয়াতে ছড়িয়ে পড়া মধ্যপ্রদেশের একটি ভিডিও নিয়ে শোরগোল পড়ে যায় – যাতে ওই মূত্রত্যাগের ঘটনাটি ধরে পড়েছে।ভিডিওতে দেখা গেছে, অভিযুক্ত পরভেশ শুক্লা ধূমপান করতে করতে প্যান্টের জিপার খুলে রাস্তার পাশে বসে থাকা একজন ব্যক্তির মুখে প্রস্রাব করছেন।বিবিসি বাংলা ওই ভিডিওটি দেখেছে – এবং আমাদের মতে সেটি শুধু অত্যন্ত অশালীনই নয়, চরম অমানবিক ও অমর্যাদাকরও বটে।

ভিডিওটি ভাইরাল হওয়ার কিছুক্ষণ পরেই রাজ্যে কংগ্রেসের সিনিয়র নেতা আব্বাস হাফিজ টুইট করেন, অভিযুক্ত ব্যক্তি রেওয়া আসনের বিজেপি এমএলএ সিধি কেদারনাথ শুক্লার একজন প্রতিনিধি বলে তিনি জানতে পেরেছেন।ওই বিজেপি নেতার সঙ্গে অভিযুক্ত পরভেশ শুক্লার বেশ কয়েকটি ছবিও তিনি সোশ্যাল মিডিয়াতে পোস্ট করেন।

আম আদমি পার্টির নেতা নরেশ বালিয়ান আবার মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ সিং চৌহানকে উদ্দেশ্য করে লেখেন, “এই ‘শয়তান’ ব্যক্তি ওই হতভাগ্য আদিবাসীর সঙ্গে ও কাজ করেনি, করেছে আসলে আপনার সিস্টেমের ওপর!”বিজেপি অবশ্য প্রথম থেকেই দাবি করছে, অভিযুক্ত পরভেশ শুক্লার সঙ্গে তাদের দলের কোনও সম্পর্ক নেই। দলীয় এমএলএ কেদারনাথ শুক্লা অবশ্য স্বীকার করেছেন তিনি ওই ব্যক্তিকে চেনেন।

মি শুক্লা জানান, “এই লোকটি আমার কেন্দ্রের বাসিন্দা, সেই সুবাদেই আমি তাকে চিনি। কিন্তু তিনি মোটেও বিজেপির কর্মী নন, আমারও সহযোগী নন।”তবে এই ঘটনার পর রাজনৈতিক চাপের মুখে মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ সিং চৌহান কথা দেন, দোষী ব্যক্তির বিরুদ্ধে কঠোরতম ব্যবস্থা নেওয়া হবে এবং ‘সামাজিক স্থিতিশীলতা’ নষ্ট করার অভিযোগে ন্যাশনাল সিকিওরিটি অ্যাক্টও প্রয়োগ করা হবে।

মিথ্যা হলফনামা তৈরি?

যে আদিবাসী ব্যক্তির গায়ে মূত্রত্যাগ করার ঘটনাটি ঘটেছে, তাকে পরে দাসমাত রাভাত নামে শনাক্ত করা হয়েছে।৩৬ বছর বয়সী ওই ব্যক্তি মধ্যপ্রদেশের কারাউন্ডির বাসিন্দা বলেও জানা গেছে। স্থানীয়রা যারা তাকে চেনেন, তারা দাসমাত রাভাত-কে কিছুটা ‘মানসিক ভারসাম্যহীন’ বলেও বর্ণনা করেছেন।তবে পুলিশ তাকে যখন জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ধরে নিয়ে আসে, তিনি নাকি ভাইরাল হওয়া ভিডিওটি ‘ফেক’ বলে দাবি করেছিলেন।

এমন কী, দাসমাত রাউতকে দিয়ে সরকারি স্ট্যাম্প পেপারে একটি হলফনামাও তৈরি করানো হয়েছিল, যাতে বলা হয় মূত্রত্যাগের ভিডিওটি আসলে ‘ফেক’ বা সাজানো এবং পরভেশ শুক্লাকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসাতেই সেটি তৈরি করা হয়েছিল।কিন্তু কংগ্রেস নেতৃত্ব সেই হলফনামার ছবিও টুইটারে পোস্ট করে অভিযোগ জানান, ওই আদিবাসী ব্যক্তিকে ও তার বাবাকে চাপ দিয়ে এবং ভয় দেখিয়েই হলফনামাতে সই করতে বাধ্য করা হয়েছিল।সেই হলফনামার বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠার পর তা অবশ্য আদালতে বা কর্তৃপক্ষের কাছে পেশ করা হয়নি।

সূত্র : বিবিসি