পঞ্চায়েত ভোট শুরু হতেই বোমা, গুলি, মৃত্যু ও বুথদখল

পঞ্চায়েত ভোট শুরু হতেই বোমা, গুলি, মৃত্যু ও বুথদখল

সংগৃহীত

শনিবারের সকাল। পশ্চিমবঙ্গে পঞ্চায়েত ভোট শুরু হলো। শুরু হলো বোমা, গুলি, বুথদখল ও ভাঙচুর। শুরু মৃত্যুমিছিল।

পঞ্চায়েত ভোট শুরু হতেই আরম্ভ হয়ে গেল লাশ গোনা। শুরু হয়ে গেল বোমা বৃষ্টি, সমানে গুলি চললো, বুথ দখল হলো, ব্যালট বাক্স বাইরে ফেলে দেয়া হলো। ব্যালট বাক্সে আগুন ধরিয়ে দেয়া হলো। দেখা গেল সেই ছবি, বাইরে ভোটদাতারা দাঁড়িয়ে, ভিতরে ছাপ্পা ভোট দেয়ায় ভোটপর্ব শেষ।

কোথাও প্রিসাইডিং অফিসার বললেন, ব্যালট ছিনতাই হয়েছে, কোথাও বললেন, কারা ভোট দিয়ে চলে গেছে জানি না। ভোটদাতারা বুথ ঘিরে দাঁড়িয়ে থাকলেন ভোট দেয়ার দাবি তুলে। কোচবিহারে খাটামারিতে বুথদখল করে ব্যাপক ভাঙচর চললো। মারা হলো প্রিসাইডিং অফিসারকে। আরেকটি জায়গায় ব্যালটে জল ঢেলে দেয়া হলো।

শুক্রবার রাত থেকে শুরু হয়ে যায় হামলা ও মৃত্যু। সবচেয়ে খারাপ অবস্থা মুর্শিদাবাদে। শুক্রবার রাত ও শনিবার সকাল মিলিয়ে তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। সকলেই তৃণমূল কর্মী। মনোনয়নপত্র জমা দেয়া শুরু হতেই যে রানিনগরে গোলমাল ও সহিংসতা শুরু হয়েছিল, সেখানে ভোটের দিন সকালেও ব্যাপক তাণ্ডব হয়েছে। উত্তর ২৪ পরগনার ব্যারাকপুরে ব্যাপক বোমাবাজি। মোহনপুরে পিস্তল হাতে দাপাদাপি। অভিযোগ তৃণমূলের দিকে।

কোচবাহিরে খুন হয়েছেন বিজেপি-র পোলিং এজেন্ট। দিনহাটায় গুলিবিদ্ধ হয়েছেন কংগ্রেস ও নির্দল প্রার্থী। সামসেরগঞ্জে ও ইসলামপুরে বোমায় দু’জন আহত হয়েছেন, নিমতিতায় ব্যালট লুট হয়েছে, দিনহাটায় বুথ তছনছ, করা হয়েছে, রামপুরহাটে বুথে তাণ্ডব, চালানো হয়েছে, বীরভূমে ব্যাপক ছাপ্পা ভোট দেয়ার অভিয়োগ উঠেছে। বিভিন্ন জায়গায় বোমাবাজির পর রাস্তায় রক্ত পড়ে থাকতে দেখা গেছে। ডায়মন্ডহারবারের ন্যাতড়ায় বুথে ঢুকে তাণ্ডব চালানো হয়েছে। মালদহে খুন হয়েছেন তৃণমূল কর্মী। পূর্ব বর্ধমানের আউশগ্রামে সিপিএম কর্মীর মৃত্যু।

পঞ্চায়েত ভোটপর্ব শুরু হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত ২৬ জনের মৃত্যু হলো।

এত সংঘর্ষ, গুলি, বোমার মধ্যে টিভির পর্দায় দেখা গেছে কেন্দ্রীয় বাহিনী ও পুলিশ অধিকাংশ জায়গায় মূলত দর্শক হয়েই থেকেছে।

ভাঙরের অবস্থা
মনোনয়নপর্বে ভয়ঙ্কর সহিংসতা দেখেছিল ভাঙর। কলকাতা থেকে মাত্র এক ঘণ্টা দূরের এই জায়গায় সকাল থেকেই সহিংসতা হয়েছে।

চকমরিচা গ্রামে বুথে যাওয়ার রাস্তায় শুধু বোমার চিহ্ন। রাস্তার দুইপাশে ছড়িয়ে আছে বোমার টুকরো। কিছুটা দূরে রাস্তায় চাপ চাপ রক্ত। অভিযোগ, আইএসএফ কর্মীদের লক্ষ্য করে বোমা মারা হয়েছিল। দুই জন আহত হয়েছেন। তাদের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।

ভাঙরে একটি বুথের বাইরে দেখা গেল, আইএসএফের বুথ কর্মী মশিদুল মোল্লা ব্যথায় কাতরাচ্ছেন। তার অভিযোগ, তৃণমূলের দুষ্কৃতীরা তাকে মেরেছে। তিনি বুথ থেকে বেরিয়ে এসেছেন।

ভাঙরের হাতিশালায় তো আইএসএফের নারী প্রার্থী হাজিরা বিবির বাড়িতে বাইরে থেকে তালা লাগিয়ে দেয়া হয়। টিভিতে সেই ছবি দেখার পর পুলিশ বেলা দশটা নাগাদ সেখানে যায়। কিন্তু আইএসএফ প্রার্থী জানিয়ে দেন, পুলিশের উপর তার ভরসা নেই। তিনি এখন বাড়ির বাইর যাবেন না।
সূত্র : ডয়চে ভেলে