বড় হারে সিরিজ খোয়ালো টাইগাররা

বড় হারে সিরিজ খোয়ালো টাইগাররা

ফাইল ছবি

ওয়ানডে ক্রিকেটে যে আধিপত্যর কথা বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের মুখে শোনা যায়, শেরে-ই-বাংলায় কান পাতলেই বোঝা যায়, সেই প্রবল আত্মবিশ্বাস আর হৃদয় নিংড়ানো গর্বে নিশ্চিতভাবেই প্রশ্নবোধক চিহ্ন এঁকে দিল আফগানিস্তান। অতিথিরা নিজেদের পারফরম্যান্স দিয়ে যতটা না ঘায়েল করলো, বাংলাদেশের ক্রিকেটের বর্তমান পরিবেশ, পরিস্থিতি আরো বেশি কাজটা সহজ করে দিল। 

ওয়ানডে অধিনায়ক তামিমের হঠাৎ অবসর, সেই অবসরকে ঘিরে নানা প্রতিক্রিয়া, জল্পনা, আলোচনা, সমালোচনা সব চলতে থাকে দেশের ক্রিকেটাঙ্গনে। হারিয়ে যেতে থাকে স্রেফ বাংলাদেশ আফগানিস্তান সিরিজই। মাঠের ক্রিকেটের থেকে যখন মাঠের বাইরের ইস্যু নিয়েই বেশি আলোচনা চলতে থাকে তখন ২২ গজের প্রক্রিয়া ঠিক থাকার কথা না। যাদের নিয়েই পথ চলার কথা তারাই যখন অনুপস্থিত তখন ক্রিকেটে মনোনিবেশ করা দুরুহ। 

আফগানিস্তানের বিপক্ষে দ্বিতীয় ওয়ানডেতে বাংলাদেশের পারফরম্যান্স এতোটাই তালগোল পাকানো ছিল যে ক্রিকেটাররা মাঠ থেকে স্রেফ উঠে আসতে পারলেই গাঁ বাঁচানো সম্ভব, এমন কিছুই মনে হচ্ছিল। নির্বিষ বোলিংয়ের সঙ্গে, যাচ্ছেতাই ফিল্ডিং। শরীরী ভাষায় নেই লড়াইয়ের তাড়না। এরপর দায়িত্বহীন ব্যাটিং। খাপছাড়া মনোভাব। সব মিলিয়ে বাজে এক পারফরম্যান্স। যা কেবল শুধু হার-ই এনে দেয় না বরং নিজেদের মানসিক শক্তি, একতা নিয়েও বড় প্রশ্ন তোলে! 

চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে আগে ব্যাটিং করে আফগানিস্তান ৯ উইকেটে ৩৩১ রানের বিশাল পুঁজি পায়। জবাবে বাংলাদেশ আটকে যায় ১৮৯ রানে। ১৪২ রানের জয় আফগানিস্তানের রানের হিসেবে তৃতীয় সর্বোচ্চ সাফল্য।  

ব্যাটিংয়ে নামার আগে রেকর্ড রান তাড়া করার চাপ ভর করে ব্যাটসম্যানদের। দেশের মাটিতে দ্বিতীয় ইনিংসে এতো বড় রান তাড়া করার রেকর্ড নেই। সেই চাপ নিতে হতো দুই উদ্বোধনী ব্যাটসম্যানকে। কিন্তু উদ্বোধনী ব্যাটসম্যানদের অসহায় আত্মসমর্পণের পর বাকিরা স্রেফ এসেছেন আর বিদায় নিয়েছেন। মাঝে কেবল মুশফিকুর রহিমই যা চোখে চোখ রেখে কথা বলেছেন। নিজের ২৫০তম ওয়ানডে ম্যাচ রাঙিয়ে তুলে নিয়েছেন ৬৯ রান।    

লিটন দুই চারে ভালো শুরুর পর তৃতীয় বলেই আউট হয়ে ফিরতে পারতেন। কিন্তু মুজিবের বলে আম্পায়ার এলবিডব্লিউর সিদ্ধান্ত দিলে রিভিউয়ে তৃতীয় আম্পায়ার তাকে ‘বাঁচিয়ে’ দেন। বল আগে ব্যাটে লেগেছে ব্যাখায় লিটন জীবন পেলেও ১৩ রানে ফারুকির শর্ট বলে মিড উইকেটে ক্যাচ তোলেন। নতুন ব্যাটসম্যান শান্তর বিদায়ঘণ্টা বাজে মুজিবের দ্রুতগতির স্পিন ডেলিভারীতে যা পেস বলের মর্যাদা পাওয়ার যোগ্য। লম্বা সময় পর জাতীয় দলে ফেরা মোহাম্মদ নাঈম শেখ পারেননি দলের দাবি মেটাতে। ফারুকির বল উইকেটে টেনে বোল্ড হন কেবল ৯ রানে।

চতুর্থ উইকেটে হাল ধরার চেষ্টায় ছিলেন সাকিব ও তাওহীদ। কিন্তু দুজনের কেউই কঠিন সময় কাটানোর পর নিজেদের ইনিংস বড় করতে পারেননি। তাওহাদী রশিদ খানের স্পেলের তৃতীয় বলে বোল্ড হন ১৬ রানে। সাকিব চেনা প্রতিপক্ষ নবীর বল জোড়া পায়ে খেলতে গিয়ে এলবিডব্লিউ হন ২৫ রানে। আফিফ টানা দ্বিতীয় ম্যাচেও ফ্লপ। রশিদের গুগলিতে স্লিপে ক্যাচ দেন শূন্য রানে। 

৭২ রানে ৬ উইকেট হারানো বাংলাদেশ ম্যাচের শেষটা দেখে ফেলে তখনই। তবুও মিরাজ ও মুশফিক লড়াই করেছেন। মুশফিক প্রতি আক্রমণে গিয়ে রান তুলেছেন অনায়েসে। মিরাজ ছিলেন স্থির। দুজন ৮৭ রানের জুটি গড়ে পরাজয়ের ব্যবধান কমান। শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশ অপেক্ষায় ছিল মুশফিক কোথায় গিয়ে থামে সেটা দেখার জন্য। দলের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান হতাশ করেননি। ৮৫ বলে ৬ বাউন্ডারিতে ৬৯ রান করেন। তুলে নেন ক্যারিয়ারের ৪৫তম ফিফটি। 

এর আগে টস হেরে ব্যাটিং করতে নেমে আফগানিস্তান যা করেছে তা রীতিমত বিস্ময়কর, তাদের জন্য গর্বের। রহমানউল্লাহ গুরবাজ ও ইব্রাহিম জাদরান উদ্বোধনী জুটিতেই ২৫৬ রান করেন। ক্যারিয়ার সেরা ১৪৫ রানে আউট হন গুরবাজ, ইব্রাহিম করেন ১০০। 

দুজনের ২৫৬ রানের জুটি ওয়ানডেতে যে কোনো উইকেটেই আফগানিস্তানের সর্বোচ্চ জুটি। আগের রেকর্ড ২১৮ রানের জুটি ছিল করিম সাদিক ও মোহাম্মদ শেহজাদের। এছাড়া ৩৩৮ রানের পুঁজি ওয়ানডেতে তাদের তৃতীয় সর্বোচ্চ। 

গুরবাজ ছিলেন বেশ আক্রমণাত্মক। ৪৮ বলে ফিফটি করেছেন, সেটিকে ১০০ বলের সেঞ্চুরিতে পরিণত করেছেন। এরপর ৪৫ রান যোগ করেন মাত্র ২৫ বলে। সব মিলিয়ে ১২৫ বলে ১৪৫ রান করেন ১৩ চার ও ৮ ছক্কায়। ওয়ানডেতে এটি তার চতুর্থ সেঞ্চুরি, বাংলাদেশের বিপক্ষে দ্বিতীয়। 

অপরপ্রান্তে রয়েশয়ে খেলা ইব্রাহিম ওয়ানডে ক্যারিয়ারের চতুর্থ সেঞ্চুরি পান ১১৯ বলে। ৯ চার ও ১ ছক্কায় ১০০ রান করেন এই ডানহাতি ওপেনার। তাদের জুটি ভাঙার পর আফগানিস্তানের ব্যাটিং কোমড় সোজা করে দাঁড়াতে পারেননি। শেষ দিকে বোলিংয়ে কিছুটা লড়াই করে বাংলাদেশ। উদ্বোধনী জুটিতে ৩৬ ওভারে ২৫৬ রান তোলা আফগানিস্তান পরে ১৪ ওভারে ৯ উইকেট হারিয়ে যোগ করতে পারে আর ৭৫ রান। ৫০ রানে ২ উইকেট নিয়ে সাকিব ছিলেন দলের সেরা বোলার।

তামিমের ঘটনার পরপরই বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন বলেছিলেন, ‘দলের ওপর প্রভাব না পড়ার কোনো কারণ নেই। ইতিমধ্যে পড়েও গেছে।’ লিটন বলেছিলেন, ‘তামিমের অবসর দলের ওপর প্রভাব পড়বে না।’ বিসিবি সভাপতি ও লিটনের কথায় অমিল থাকলেও এখানে বোর্ড প্রধানের শঙ্কাই সত্যি হলো। হতশ্রী ক্রিকেটে আফগানিস্তানের বিপক্ষে প্রথমবার ওয়ানডে সিরিজ খোয়াল বাংলাদেশ। যা বেশ বিব্রতকরই বটে।