জামায়াতের আজকের সমাবেশ স্থগিত

জামায়াতের আজকের সমাবেশ স্থগিত

সংগৃহীত

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী আজক সোহরাওয়াদী উদ্যোনে অনুষ্ঠেয় পূর্বঘোষিত সমাবেশ স্থগিত করেছে। আজ এক সংবাদ সম্মেলনে এ সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছে সংগঠনটি। জামায়াতকে সমাবেশ করতে না দেয়ার প্রতিবাদে ৬ আগস্ট, রোববার বাংলাদেশের সকল বিভাগীয় শহরে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ মিছিলের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, 'আজকের সমাবেশ বাস্তবায়নে আমরা সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছিলাম। আমরা বারবার বলে আসছি, আমরা শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করতে চাই। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী কোনো ধরনের সংঘাত, সংঘর্ষে বিশ্বাসী নয়। প্রশাসন সহযোগিতার পরিবর্তে একটি সংঘাতমুখর পরিবেশের অবতারণা করেছে। তাই আমরা আজকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যোনের সমাবেশের কর্মসূচি স্থগিত করছি। এর প্রতিবাদে ৬ আগস্ট, রোববার বাংলাদেশের সকল বিভাগীয় শহরে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ মিছিলের কর্মসূচি ঘোষণা করছি। এই কর্মসূচি বাস্তবায়নে জনগনের অংশগ্রহণ এবং প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট সকলের সহযোগিতা কামনা করছি।'


ডা. তাহের তার লিখিত বক্তব্যে বলেন, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী (উত্তর ও দক্ষিণ)-এর উদ্যোগে আজ শুক্রবার ঐতিহাসিক সোহরাওয়াদী উদ্যোনে শান্তিপূর্ণ সমাবেশ ছিল।
সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের লক্ষ্যে অবিলম্বে কেয়ারটেকার সরকার ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা, আমিরে জামায়াত ডা. শফিকুর রহমানসহ গ্রেফতারকৃত সকল নেতাকর্মী ও আলেম-ওলামার মুক্তি এবং দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণের দাবিতে এ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছিল।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত আমির অধ্যাপক মুজিবুর রহমান গত ২৪ জুলাই সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে ১আগস্ট রাজধানীতে সমাবেশের কর্মসূচি ঘোষণা করেছিলেন। ওই দিন জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেটে সমাবেশ বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছিল। সমাবেশের বিষয়ে ২৫ জুলাই সকাল ১০টায় ই-মেইলে এবং বিকাল সাড়ে ৪টায় সুপ্রীমকোর্টের আইনজীবীদের একটি প্রতিনিধি দল ডিএমপি কমিশনারকে অবহিত করে চিঠি দিয়ে আসেন।

তিনি বলেন, 'পুলিশ প্রশাসন সহযোগিতা না করায় এবং ১ আগস্ট কর্ম দিবস হওয়ায় সমাবেশের কর্মসূচিটি বন্ধের দিন অর্থাৎ আজ ৪ আগস্ট, জুমাবার ঐতিহাসিক সোহরাওয়াদী উদ্যোনে নির্ধারণ করা হয়। আবারো ডিএমপি কমিশনারকে আনুষ্ঠানিকভাবে চিঠি দিয়ে অবহিত করা হয়। কিন্তু গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে ডিএমপি কমিশনার সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, শুক্রবার রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যোনে জামায়াতে ইসলামীর ডাকা সমাবেশ কর্মসূচিতে অনুমতি দেয়া হয়নি।
সভা সমাবেশ করা সংবিধান স্বীকৃতি অধিকার। সংবিধানের ৩৭ ধারায় সুস্পষ্টভাবে সভা সমাবেশ করার অধিকার দেয়া হয়েছে। এই অধিকার বাস্তবায়নে সহযোগিতা করা প্রশাসনের দায়িত্ব। কিন্তু প্রশাসন বারবার আমাদের সাংবিধানিক অধিকার হরণ করছে। আমরা তীব্র ভাষায় এর নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। এ ধরনের আচরণ অগনতান্ত্রিক, অন্যায়, অনৈতিক।
আমাদের সাথে বার বার অন্যায় করা হচ্ছে। দেশের সংবিধান বলেছে আইনের দৃষ্টিতে সবাই সমান। সরকারি দল যখন তখন অনুমতি ছাড়া সভা সমাবেশ করবে, আর আমাদের বেলায় অনুমতি লাগবে? এই দ্বৈত নীতি কেন?'

ডা. তাহের বলেন, 'জামায়াত আইনের দৃষ্টিতে সভা-সমাবেশ করার সুযোগ পাবে, এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু জামায়াতকে সে সুযোগ না দিয়ে সারা দেশে জামায়াত নেতাকর্মীদের হয়রানি করা হচ্ছে। গত এক সপ্তাহে রাজধানীসহ সারা দেশে জামায়াতের আট শতাধিক নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পুলিশ জামায়াত নেতাকর্মীদের বাড়িতে বাড়িতে হানা দিয়ে মূল্যবান আসবাবপত্র ভাঙচুর ও তছনছ করছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে মহিলাদেরকে নাজেহাল করছে। কোনো কোনো এলাকায় পুরুষ নেতাকর্মীদের না পেয়ে তাদের স্ত্রী-সন্তানদের গ্রেফতার করে নিয়ে যাচ্ছে। রাষ্ট্রের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর এসব কর্মকাণ্ড সম্পূর্ণ বেআইনী ও মানবাধিকার পরিপন্থী।'

ডা. তাহের বলেন, 'সামনে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। নির্বাচনকে অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক করার জন্য কেয়ারটেকার সরকারের দাবিতে গোটা জাতি ঐক্যবদ্ধ। কিন্তু সরকার জনগণের দাবি অগ্রাহ্য করে একতরফা নির্বাচনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। মূলত সরকার দলন, পীড়ণ, গ্রেফতার, জুলুম, নির্যাতন চালিয়ে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করে একতরফা নির্বাচনের দিকে যাচ্ছে। তারা ২০১৪ ও ২০১৮ সালের মতো নির্বাচনের নামে প্রহসন করে যেনতেনভাবে আবারো ক্ষমতায় আসতে চায়। দেশের জনগণ সরকারের এই ষড়যন্ত্র মেনে নিবে না।'

তিনি বলেন, 'জনগণের দাবি আদায়ে আমরা রাজপথে ছিলাম, আছি এবং থাকবো ইনশাআল্লাহ।'

কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও প্রচার সেক্রেটারি এডভোকেট মতিউর রহমান আকন্দের সঞ্চালনায় সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমির নূরুল ইসলাম বুলবুল, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের ভারপ্রাপ্ত আমির আব্দুর রহমান মুসা, কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের নায়েবে আমির ইঞ্জিনিয়ার গোলাম মোস্তফা, কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের নায়েবে আমির এডভোকেট হেলাল উদ্দিন, ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সহকারী সেক্রেটারি দেলওয়ার হোসাইন, কর্মপরিষদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার শেখ আল আমিন, মহানগরী মজলিসে শূরা সদস্য, প্রচার ও মিডিয়া বিভাগের পরিচালক আশরাফুল আলম ইমন প্রমুখ।-প্রেস বিজ্ঞপ্তি