ইবি ছাত্রী নওরীনের মৃত্যু:সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচারের দাবি শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের

ইবি ছাত্রী নওরীনের মৃত্যু:সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচারের দাবি শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের

ইবি ছাত্রী নওরীনের মৃত্যু:সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচারের দাবি শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) ল' অ্যান্ড ল্যান্ড ম্যানেজমেন্ট বিভাগের স্নাতকোত্তর পর্যায়ের শিক্ষার্থী নওরীন নুসরাত স্নিগ্ধার রহস্যজনক মৃত্যুর সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচারের দাবি জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। দাবি নিয়ে বিভাগের পক্ষ থেকে শনিবার (১২ আগস্ট) বেলা ১২টায় ক্যাম্পাসের প্রধান ফটকসংলগ্ন 'মৃত্যুঞ্জয়ী মুজিব' ম্যুরালের সামনে মানববন্ধনের আয়োজন করা হয়। 

এতে বিভাগের সভাপতি সাহিদা আখতার আশা, সহকারী শিক্ষক মেহেদি হাসানসহ বিভাগের শতাধিক শিক্ষার্থী ও বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের সদস্যরা অংশ নেন। এছাড়া দাবির সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে ইলেক্ট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. মাহবুবর রহমান মানববন্ধনে অংশ নিয়ে বক্তব্য দেন। 

মানববন্ধনে শিক্ষার্থীরা 'নওরীন ছাদ থেকে পড়লো নাকি ফেলে দেওয়া হলো?',  'আমার বোনকে কেন মরতে হলো?', 'তদন্ত কাজ কোনো গোষ্ঠীর দ্বারা প্রভাবিত না হোক',  'তদন্ত কাজে বিশ্ববিদ্যালয়কে পাশে চাই', 'মৃত্যুর তদন্ত দীর্ঘায়িত না হোক', 'শ্বশুড় বাড়ির নীরব ভূমিকা কী প্রমাণ করে?', 'নওরীনের শেষ বিদায়ে শ্বশুড়বাড়ির লোক অনুপুস্থিত কেন?' ইত্যাদি লেখা সংবলিত প্ল্যাকার্ড প্রদর্শন করেন।

মানববন্ধনে শিক্ষার্থীরা বলেন, আমরা তার পরিবারের মুখে শুনেছি, মৃত্যুর আগে নওরীনকে বিভিন্নভাবে টর্চার করা হতো। বিয়ের আগে তাকে পড়াশোনা করানোর কথা বললেও বিয়ের পর ক্যাম্পাসে আসতে বাধা দেন। এছাড়াও বিভিন্নভাবে নির্যাতন করা হয়। আমরা দীর্ঘদিন থেকে নওরীনকে জানি, তার মতো মেধাবী মেয়ে কোনভাবেই সামান্য নির্যাতনে আত্মহত্যার পথ বেছে নিতে পারে না। তারা হয়তো তাকে হত্যা করেছে অন্যথায়  অমানুষিক নির্যাতনের মাধ্যমে মৃত্যুকে বেছে নিতে বাধ্য করেছে। আমরা চাই সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে সত্য উন্মোচিত হোক এবং এর সঙ্গে জড়িতদের বিচার হোক।

কান্না জড়িত কণ্ঠে বিভাগের সভাপতি সাহিদা আখতার আশা বলেন, নওরীনের মতো মেধাবী শিক্ষার্থী শুধু বিশ্ববিদ্যালয় নয়, দেশের জন্য একটি সম্পদ ছিল। মারা যাওয়ার দুইদিন আগে নওরীন আমাকে ফোন করে বলছিল ক্যাম্পাসে আসতে পারছে না। একাডেমিক কাজে তার উপস্থিত প্রয়োজন কিন্তু আসছে না তখন মনে হচ্ছিল সামথিং রং। পরিবারের সাথে কথা বলে যা শুনেছি তা অত্যন্ত ভয়ংকর। নওরীনের নিয়মিত ওষুধও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। তাকে একটা ঘরে বন্দি করে রাখা হতো। সেখানে ইন্টারনেট কানেকশন ছিল না। নিয়মিত তাকে টর্চার করা হতো, ফোন চেক করা হতো এবং কারো সঙ্গে যোগাযোগ করতে দিত না।

তিনি বিচার দাবি করে বলেন, পুলিশের কাছে থাকা নওরীনের ফোন দুইটিতে অনেক আলামত পেয়েছে তারা। এটা হত্যা, আত্মহত্যা নাকি আত্মহত্যার প্ররোচনা সেটির তদন্ত সাপেক্ষে সুষ্ঠু বিচার দাবি করছি। আর কোনো নওরীনের যেন এমন পরিণতি না হয়। অতিদ্রুত পেছনে জড়িতদের শাস্তিত আওতায় না আনা হলে প্রতিটা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রতিবাদী কণ্ঠস্বর উঠবে।'

অধ্যাপক ড. মাহবুবর রহমান বলেন, আমি প্রশাসনিক দায়িত্বে থাকাকালীন অনেক আত্মহত্যার ঘটনা দেখেছি। কিন্তু এটিকে কোনো আত্মহত্যার প্রকৃতির সঙ্গে মেলাতে পারছি না। মারা যাওয়ার পর কেউ মুখ খুলতে চায়নি এটা অনেক কিছুকে অর্থবহ করে। কেউ কিন্তু এখনো বলেনি আমি লাফ দিতে দেখেছি। জাতির সামনে প্রকৃত ঘটনা উন্মোচন হওয়া জরুরি।

প্রসঙ্গত, বিয়ের মাত্র ১৮ দিনের মাথায় সাভারের আশুলিয়ার পলাশ বাড়ি নামা বাজার এলাকার ছয় তলা বাসার ছাদ থেকে পড়ে নওরীনের মৃত্যু হয়। স্বামীর সঙ্গে ওই বাসায় ভাড়া থাকতেন নওরীন। মৃত্যুর পর নওরীনের পরিবার বিভিন্ন ধরণের নির্যাতনের অভিযোগ করা করেন। পরিবারের পক্ষ থেকেও সুষ্ঠু তদন্তের দাবি করা হয়েছে। পরিবারের পক্ষ থেকে স্বামী ও শ্বশুরবাড়ি সদস্যদের বিরুদ্ধে মামলার প্রস্তুতি চলছে বলে জানা গেছে।