২৫ দিন ধরে কর্মবিরতিতে ইমাম ও বাওয়ানী চা বাগানের শ্রমিকরা

২৫ দিন ধরে কর্মবিরতিতে ইমাম ও বাওয়ানী চা বাগানের শ্রমিকরা

ছবিঃ সংগৃহীত।

বার বার আশ্বাস দিয়েও বকেয়া টাকা পরিশোধ না করায় ২৫ দিন ধরে মানবেতর জীবনযাপন করছে হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলার ইমাম ও বাওয়ানী চা বাগানের চা শ্রমিকরা।

চলমান তলব, রেশন, বকেয়া মজুরি, বোনাস, উৎসব ভাতা, ভবিষ্যত তহবিলের বকেয়া টাকা, চিকিৎসা ও স্থায়ী বাসস্থান নিশ্চিত করণের দাবিতে দফায় দফায় নানা কর্মসূচি পালন করে এলেও মিলছে না সমাধান। টানা ২৫ দিন ধরে লাগাতার কর্মবিরতি পালন করে আসছে দুটি চা বাগানের প্রায় ৩৬০ জন চা শ্রমিক।

চা শ্রমিকদের অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, নবীগঞ্জ উপজেলার পানিউমদা ইউনিয়নে অবস্থিত ইমাম ও বাওয়ানী চা বাগান। এইদুটি বাগানে কাজ করেন ৩৬০ জন চা শ্রমিক। বাংলাদেশীয় চা-সংসদ ও বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের মধ্যে সম্পাদিত শ্রমচুক্তি মোতাবেক তাদের বকেয়া অর্থ পরিশোধ করছে না মালিকপক্ষ। এ নিয়ে ২৫ জুন চা শ্রমিকদের সাত দফা দাবি বাস্তবায়ন করার জন্য ইমাম টি এস্ট্রেট লিমিটেডের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালকের বরাবর লিখিতভাবে জানায় চা শ্রমিকরা। মালিক পক্ষ শ্রমিকদের অভিযোগ আমলে না নেয়ায় তিন থেকে ১১ জুলাই পর্যন্ত কর্মবিরতী পালন করে চা শ্রমিকরা।

শ্রমিকদের দাবি, ইমাম ও বাওয়ানী চা বাগানের ৩৬০ জন শ্রমিকের শ্রমচুক্তি মোতাবেক শ্রমিকদের বকেয়া মজুরি বা এরিয়ার অর্থ বাবদ ২০১৯-২০ ও ২০২১-২২ অর্থ বছরের ৮১ লাখ ৫৯ হাজার টাকা, এরিয়া বোনাসের ১৪ লাখ ৪৭ হাজার টাকা পরিশোধ করছে না মলিকপক্ষ। এছাড়া চা বাগান শ্রমিক ভবিষ্যত তহবিলের (পিএফ) ৫৫ লাখ ৮৯ হাজার টাকা মালিক পক্ষ পিএফ কার্যালয়ে জমা প্রদান না করার ফলে অবসর প্রাপ্ত শ্রমিকগণ পিএফ অর্থ পাচ্ছেন না।

অন্যদিকে চা শ্রমিকদের রোদ-বৃষ্টিতে বাসস্থানে অবস্থান করতে দুর্ভোগ পোহাতে হয়। ডাক্তার না থাকায় চিকিৎসা সেবা থেকেও বঞ্চিত তারা। সঙ্কট সমাধানে (১১ জুলাই) বিকেলে শ্রীমঙ্গল বিভাগীয় শ্রম অধিদফতরের সমঝোতায় বৈঠকে বসে ইমাম টি এস্ট্রেট লিমিটেড ও বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের নেতারা। এ সময় ইমাম টি এস্ট্রেট লিমিটেডের চেয়ারম্যান জিকে মাইনুদ্দিন চৌধুরী ১৮ জুলাইয়ের মধ্যে শ্রমিকদের বকেয়া মজুরি/এরিয়ার অর্থ পরিশোধ, ভবিষ্যত তহবিলের টাকা ৩০ আগস্টের মধ্যে পিএফ কার্যালয়ে কিস্তি আকারে জমাসহ যাবতীয় সুযোগ-সুবিধা প্রদানে আশ্বাস দেন। এ সময় উভয় পক্ষের মধ্যে এ নিয়ে চুক্তি সই হয়। এরপর ১২ জুলাই থেকে কাজে যোগদেন শ্রমিকরা। ১৮ জুলাই বকেয়া মজুরি/এরিয়ার অর্থ পরিশোধ করতে ব্যর্থ হয় মালিক পক্ষ। পুনরায় নতুন তারিখ হিসেবে ২০ জুলাই বকেয়া টাকা পরিশোধ করার আশ্বাস দেয়া হয়। তবে ২০ জুলাইও বকেয়া পরিশোধ করেনি মালিকপক্ষ। এছাড়া ১২ জুলাই হতে ২০ জুলাই পর্যন্ত চা শ্রমিকরা বাগানে কাজ করলেও আট দিনের দৈনিক তলব (মুজুরি) ও রেশন শ্রমিকদের দেয়নি মালিকপক্ষ। ফলে শুক্রবার (২১ জুলাই) থেকে আবার কর্মবিরতি পালন শুরু করে শ্রমিকরা।

গত ২২ জুলাই ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ মিছিল করে চা শ্রমিকরা। ২৬ জুলাই দুপুরে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে নবীগঞ্জ উপজেলার ইমাম ও বাওয়ানী বাগানের চা শ্রমিকরা মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করেন। পরে জেলা প্রশাসকের সাথে বৈঠকে বসেন চা শ্রমিক নেতারা। এ সময় চা শ্রমিকদের দাবি পূরণসহ বর্তমান মালিকপক্ষের লিজ দ্রুত বাতিল করে নতুন মালিক নিয়োগ করে বাগান পরিচালনা করার ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানান চা শ্রমিক ইউনিয়নের নেতারা। এ সময় জেলা প্রশাসনের হস্তক্ষেপে মালিকপক্ষ ৩০ জুলাই বকেয়া অর্থ পরিশোধ করার আশ্বাস দেয়। ফের আশ্বাস ভঙ্গ করে মালিকপক্ষ। ৩০ জুলাই টাকা না দেয়ায় (২ আগস্ট) পুনরায় মহাসড়কে বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। বার বার আশ্বাস দিয়েও বকেয়া অর্থ পরিশোধ করেনি মালিকপক্ষ। ফলে গত ২৫ দিন ধরে মানবেতর জীবনযাপন করছে ইমাম ও বাওয়ানী চা বাগানের চা শ্রমিকরা।

ইমাম চা বাগানের সভাপতি রামভজন রবিদাশ বলেন, বার বার আমাদেরকে আশ্বাস দিয়েও মালিকপক্ষ বকেয়া পরিশোধ করেনি। ফলে আমরা মানবেতর জীবনযাপন করছি। গত ২৫ দিন ধরে দুটি বাগানের ৩৬০ জন শ্রমিকের পরিবার অনাহারে দিন-যাপন করছে। আশ্বাসের বেড়াজাল থেকে বের হয়ে দ্রুত এই সঙ্কট সমাধানে কার্যকরী উদ্যোগ নেয়া হউক।

বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নৃপেন পাল বলেন, ইমাম ও বাওয়ানী চা বাগানের মালিকপক্ষ চা শ্রমিকদের সাথে বৈষম্য করছে, বারবার আশ্বাস দিয়েও টালবাহানা অব্যাহত রেখেছে মালিকপক্ষ। দ্রুত সমস্যার সমাধান করা না হলে বৃহৎ আকারে কর্মসূচি দেয়া হবে।

ইমাম ও বাওয়ানী চা বাগানের মহাব্যবস্থাপক ফখরুল ইসলাম বলেন, মালিকপক্ষ শ্রমিকদের বকেয়া পরিশোধ করতে হবে, বাগান পরিচালনায় মালিকপক্ষ নানা অর্থনৈতিক সঙ্কটে পড়েছে। চা শ্রমিক ইউনিয়নের নেতাদের সাথে আলাপ-আলোচনা করে বকেয়া বেতন পরিশোধ করা হবে।

এ বিষয়ে নবীগঞ্জ উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) শাহীন দেলোয়ার বলেন, শ্রমিকদের বকেয়ার পাশাপাশি বাগান কর্তৃপক্ষের কাছে সরকার ৮০ লাখ টাকা ভূমি উন্নয়ন কর পাওনা। কোনোটিই তারা শোধ করছে না। এ জন্য লিজ বাতিলের জন্য সুপারিশ করা হয়েছে।