ভারতে আইনিভাবে নিষিদ্ধ হলো লিঙ্গবৈষম্যের ৪৩টি শব্দ

ভারতে আইনিভাবে নিষিদ্ধ হলো লিঙ্গবৈষম্যের ৪৩টি শব্দ

ফাইল ছবি

ভারতের সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড় বুধবার ‘হ্যান্ডবুক অন কমবাটিং জেন্ডার স্টিরিওটাইপস’ নামে একটি পুস্তিকা প্রকাশ করেছেন। তাতে ৪৩টি শব্দের একটি তালিকা দিয়ে বলা হয়েছে, দেশের বিচারপতিরা যেন রায়ে কোনওভাবে এই শব্দগুলি ব্যবহার না করেন। সেই সঙ্গে বলা হয়েছে, মামলার শুনানি চলাকালে বিচারপতি, আইনজীবী এবং মামলার পক্ষের লোকজনেরাও যেন শব্দগুলি এড়িয়ে চলেন। প্রধান বিচারপতি চন্দ্রচূড় বলেছেন, এই শব্দগুলির মধ্যে লিঙ্গবৈষম্য বিরাজ করছে। তাই সেগুলি বাদ দিয়ে রায় লেখা-সহ আদালতের যাবতীয় কাজ করতে বলা হয়েছে।

হ্যান্ডবুকে ওই ৪৩টি শব্দের বিকল্প শব্দও যুক্ত করা হয়েছে। বলা হয়েছে এখন থেকে বিকল্প শব্দগুলির ব্যবহার বাড়াতে হবে। যেমন স্লাট, বা বেশ্যা বা পতিতা শব্দটি ব্যবহার করা যাবে না। লিখতে বা বলতে হবে সেক্স ওয়াকার্স বা যৌনকর্মী। যদিও আদালত থেকে সংবাদমাধ্যম সর্বত্র যৌনকর্মী শব্দের ব্যবহার বহু বছর আগেই চালু হয়েছে। তবু আদালত সরকারিভাবে বেশ্যা বা পতিতা শব্দটির আইন-আদালতে ব্যবহার নিষিদ্ধ করল।

তালিকা অনুযায়ী ‘অ্যাফেয়ার’ কথাটি লেখা বা বলা যাবে না। পরিবর্তে ব্যবহার করতে হবে ‘রিলেশনশিপ আউটসাইড অফ ম্যারেজ’। লেখা বা বলা যাবে না ইভটিজিং শব্দটিও। পরিবর্তে লিখতে হবে স্ট্রিট সেক্সুয়াল হ্যারাসমেন্ট বা পথে যৌন হেনস্থা।

বলা হয়েছে, আনওয়েড মাদার বা অবিবাহিত মা কথাটি লেখা বা বলা যাবে না। এই ক্ষেত্রেও শুধু মা কথাটিই ব্যবহার করতে হবে। লেখা বা বলা যাবে না জারজ সন্তান কথাটিও। পরিবর্তে ব্যবহার করতে হবে ‘অ-বৈবাহিক সন্তান' বা, 'একটি শিশু যার পিতামাতা বিবাহিত নয়'। যেমন হাউস ওয়াইফ বা গৃহবধূ শব্দর ব্যবহার এড়িয়ে চলতে বলা হয়েছে। পরিবর্তে গৃহিণী শব্দটি ব্যবহার করতে সুপারিশ করা হয়েছে পুস্তিকায়।

পর্যবেক্ষকদের মতে, ডিওয়াই চন্দ্রচূড় প্রধান বিচারপতির দায়িত্বভার নেওয়ার পরে একদিকে যেমন সরকারের সঙ্গে শীর্ষ আদালতের সংঘাত বেড়েছে, অন্যদিকে, আদালতের কাজে গতিও ফিরেছে। সেই সঙ্গে প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে অনেক সংস্কারও হচ্ছে বিচার বিভাগের কাজকর্মে। তারমধ্যে উল্লেখযোগ্য হল ২২টি ভারতীয় ভাষায় সুপ্রিম কোর্টের রায়ের মূল অংশের অনুবাদ প্রকাশ করা হচ্ছে। মঙ্গলবার ১৫ অগাস্ট স্বাধীনতা দিবসের ভাষণে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এই ব্যাপারে সুপ্রিম কোর্টের ভূমিকার প্রশংসা করেন। পরদিন ১৬ অগাস্টই প্রকাশিত হল লিঙ্গ বৈষম্যমূলক শব্দ পরিহারের লক্ষ্যে পুস্তিকা।

সূত্র : ভয়েস অব আমেরিকা, দ্য হিন্দু