দুই বিচারপতির পদত্যাগের দাবিতে রাজপথে কালো পতাকা মিছিল

দুই বিচারপতির পদত্যাগের দাবিতে  রাজপথে কালো পতাকা মিছিল

দুই বিচারপতির পদত্যাগের দাবিতে রাজপথে কালো পতাকা মিছিল

শোক দিবসের অনুষ্ঠানে নিজেদের ‘শপথবদ্ধ রাজনীতিবিদ’ উল্লেখ করে বক্তব্য দেয়ায় আপিল বিভাগের দু'জন বিচারপতির পদত্যাগের দাবিতে সুপ্রিম কোর্টে ও রাজপথে কালো পতাকা মিছিল করেছে বিএনপিসহ সরকার বিরোধী আইনজীবীদের মোর্চা ইউনাইটেড লইয়ার্স ফ্রন্ট।

মঙ্গলবার (২৯ আগস্ট) ইউনাইটেড 'ল' ইয়ার্স ফ্রন্ট সুপ্রিম কোর্ট ইউনিটের উদ্যোগে আয়োজিত কালো পতাকা মিছিলে শতাধিক আইনজীবী অংশ নিয়ে ‘শপথবদ্ধ রাজনীতিবিদ’ বলা বিচারকদের রাজনীতিবিদদের কাতারে আসার আহ্বান জানান।

তারা বলেন, আপনারা বিচারপতি হিসেবে থাকার আইনি ও নৈতিক যোগ্যতা হারিয়েছেন। রাজনীতি করতে মন চাইলে এখনই পদত্যাগ করুন। বিচারপতি পদে থেকে রাজনীতি করলে এদেশের জনগণ তার বিচার করবে।

মঙ্গলবার দুপুর সোয়া ১টায় ‘শপথবদ্ধ রাজনীতিবিদ’ বিচারপতিদের পদত্যাগের দাবিতে সুপ্রিম কোর্ট বার ভবন থেকে আইনজীবীরা কালো পতাকা ও বিভিন্ন লেখা সম্বলিত প্লাককার্ড নিয়ে মিছিল করেন। মিছিলটি হাইকোর্ট মাজার গেট দিয়ে রাজপথে প্রবেশ করে জাতীয় ঈদগাহ ময়দান, কদম ফোয়ারা হয়ে বার কাউন্সিলের পাশের গেট দিয়ে আবার হাইকোর্টে প্রবেশ করে। বেলা ২টার দিকে সুপ্রিম কোর্ট বার ভবনের সামনে সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মধ্য দিয়ে কালো পতাকা মিছিল শেষ হয়।

ইউনাইটেড 'ল' ইয়ার্স ফ্রন্ট সুপ্রিম কোর্ট ইউনিটের আহ্বায়ক শাহ আহমেদ বাদলের সভাপতিত্বে এবং কো-কনভেনার আইনজীবী মোহাম্মদ আলীর সঞ্চালনায় মিছিল পূর্ব সমাবেশে বক্তব্য রাখেন ফ্রন্টের আহ্বায়ক ও সুপ্রিম কোর্ট বারের সাবেক সভাপতি জয়নুল আবেদীন, সুপ্রিম কোর্ট বারের সাবেক সম্পাদক মাহবুব উদ্দিন খোকন, বিএনপির আইন সম্পাদক ও ফ্রন্টের প্রধান সমন্বয়ক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল, সুপ্রিম কোর্ট বারের সাবেক সম্পাদক ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল, ফ্রন্টের সমন্বয়ক সৈয়দ মামুন মাহবুব ও গাজী কামরুল ইসলাম সজল।

কালো পতাকা মিছিলে অংশ নেন আইনজীবী আক্তারুজ্জামান, কামরুজ্জামান মামুন, মুপ্রিম কোর্ট বারের সাবেক ট্রেজারার মো: কামাল হোসেন, সাবেক সহ-সম্পদক মোরশেদ আল মামুন লিটন, মাহমুদ হাসান, মাহবুবুর রহমান খান, রেজাউল করীম রেজা, সগীর হোসেন লিওন, সাইফুদ্দিন রতন, মাহফুজুর রহমান মিলন, মিজানুর রহমান, মোস্তাফিজুর রহমান, মো: জহিরুল ইসলাম সুমন, শহিদুল ইসলাম সপু, আইয়ুব আলী আশ্রাফী, শামীমা সুলতানা, আঞ্জুমান আরা বেগম মুন্নী, সালমা সুলতানা, ফাতেমা আক্তার, আনিসুর রহমান রায়হান, মো: মাসুদুল আলম দোহা, মো: মাকসুদ উল্লাহ, মীর আব্দুল হলীম, মো: উজ্জ্বল হোসেন, কে আর খান, এ কে এম এহসানুর রহমান, মু. কাইয়ুমসহ শতাধিক আইনজীবী। জয়নুল আবেদীন বলেন, আজ বিচার বিভাগ ধ্বংসের পথে। বিচার বিভাগের প্রতি মানুষের একটা আস্থা ছিল। কিন্তু শপথ পাঠ করে কেউ কেউ রাজনীতি করতে চাচ্ছেন। 

তিনি বিচারপতি আবব্দুস সাত্তার ও বিচারপতি কে এম হাসানের নাম উল্লেখ করে বলেন, আগের দিনে বিচারপতিরা শপথ নেয়ার পর রাজনীতি করেননি। দলবাজী কনেনি। মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, রাজনীতি করতে মন চাইলে এখনই পদত্যাগ করুন। বিচারপতি পদে থেকে রাজনীতি করলে এদেশের জনগণ তার বিচার করবে। 

ব্যারিস্টার কায়সার কামাল বলেন, যারা নিজেদের ‘শপথবদ্ধ রাজনীতিবিদ’ হিসেবে নিজেদের বিবেচনা করেন তারা রাজনীতিবিদদের কাতারে আসেন। আইনজীবীরা বিচারপতিদের রাজনীতিবিদ হিসেবে দেখতে চায় না।তিনি বলেন, দেশে বিচারের নামে প্রহসন চলছে। জনস্বার্থের রিটে আমাদের একজন আইনজীবীর পক্ষভুক্তির আবেদন গ্রহণ করা হয়নি। অথচ সরকারি দলের একজন সংসদ সদস্য তারেক জিয়ার কণ্ঠরোধ করার জন্য আবেদন নিয়ে যাওয়ার সাথে সাথে শুনানি না করেই ৩০ সেকেন্ডের মধ্যে তা গ্রহণ করেন। এবং অনলাইন প্লাটফর্ম থেকে তারেক রহমানের বক্তব্য অপসারণের নির্দেশ দেন।

ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল বলেন, আইনজীবীরা লড়াই করছেন তারেক রহমানের জন্য নয়, আমরা লড়াই করছি দেশের মানুষের বাকস্বাধীনতা রক্ষার জন্য। আপনারা এমন কোনো আদেশ দেবেন না যাতে দেশের মানুষের বাকস্বাধীনতা ক্ষুণ্ন হয়।ফ্রন্টের সমন্বয়ক সৈয়দ মামুন মাহবুব বলেন, তারেক রহমানের বিরুদ্ধে এই রায়ে তার কোনো ক্ষতি হয়নি। বরং দেশের সর্বোচ্চ আদালত প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। কারণ দেশের প্রধান বিরোধী দলের নেতার বক্তব্য এভাবে থামানো যাবে না। তিনি বলেন, তারেক রহমান দেশের চলমান গণতান্ত্রিক আন্দোলনের পূরধা।

ফ্রন্টের সমন্বয়ক গাজী কামরুল ইসলাম সজল বলেন, শুনেছি আমাদের কয়েকজন আইনজীবীদের নামে আদালত অবমাননার আবেদন করা হয়েছে। দেশের মানুষের জন্য গণতন্ত্র ও বাকস্বাধীনতা রক্ষার জন্য যদি আমাদের বিরুদ্ধে আদালত আবমাননার অভিযোগ করা হয় তাতে আইনজীবীরা ভয় পায় না।মোহাম্মদ আলী বলেন, তারেক রহমান দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় ব্যক্তি। তার বিরুদ্ধে আজ আদালতকে ব্যবহার করা হচ্ছে।তিনি বলেন, যেসব বিচারপতি নিজেদের শপথবদ্ধ রাজনীতিবিদ মনে করেন তারা অবিলম্বে পদত্যাগ করুন।