ঢাবির মুহসীন হলে বিতর্কে চ্যাম্পিয়ন ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটি

ঢাবির মুহসীন হলে বিতর্কে চ্যাম্পিয়ন ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটি

সংগৃহীত

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) হাজী মুহম্মদ মুহসীন হলে ১৯৯৯ সালে যাত্রা শুরু হওয়া ডিবেটিং ক্লাব বরাবরের মতো এবারও আয়োজন করে তৃতীয় হাজী মুহম্মদ মুহসীন স্মারক আন্তঃ ক্লাব বিতর্ক প্রতিযোগিতার। ২ সেপ্টেম্বর থেকে ৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত অনুষ্ঠিত বিতর্ক প্রতিযোগিতার এবারের প্রতিপাদ্য ছিল- ‘যুদ্ধ নয়, মানবিক পৃথিবীর প্রত্যাশায়’।

প্রতিযোগিতায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৭টি হল এবং অন্যান্য ১২টি বিশ্ববিদ্যালয়সহ মোট ৩২টি টিম অংশগ্রহণ করে। এশিয়ান সংসদীয় পদ্ধতিতে ও প্রথম পর্যায়ে ট্যাব পদ্ধতি অনুসরণ করে বিতর্কটিতে ফাইনালে উঠে জাহাঙ্গীরনগর ইউনিভার্সিটি ডিবেটিং সোসাইটি ও ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটি ডিবেটিং ক্লাব। 

মঙ্গলবার (৫ সেপ্টেম্বর) বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবন অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত চূড়ান্ত বিতর্কে জাহাঙ্গীরনগর ইউনিভার্সিটি ডিবেটিং সোসাইটিকে (সরকারি দল) ৭-০ ব্যালটে হারিয়ে চ্যাম্পিয়নশিপ অর্জন করে ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটি ডিবেটিং ক্লাব (বিরোধী দল)। এসময় শ্রেষ্ঠ বিতার্কিক হওয়ার গৌরব অর্জন করেন বিরোধী দলের উপনেতা নাইমুর রহমান। এতে স্পিকার হিসেবে ছিলেন মুহসীন হল ডিবেটিং ক্লাবের সাবেক বিতার্কিক ড. মো শামীম রেজা।

এরপর সন্ধ্যায় অনুষ্ঠিত হয় পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান। এসময় বিতর্কে বিজয়ীদের পুরস্কার প্রদানের পাশাপাশি ইতিপূর্বে মুহসীন হল ডিবেটিং ক্লাব আয়োজিত কুইজ ও উপস্থিত বক্তৃতা প্রতিযোগিতার বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে বিজয়ী ছয়জনকে পুরস্কার দেওয়া হয়।

মুহসীন হল ডিবেটিং ক্লাবের সভাপতি ফুয়াদ হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান এবং প্রধান আলোচক হিসেবে আমন্ত্রিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল।

অনুষ্ঠানে অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেন, সহপাঠ্যক্রমের অংশ হিসেবে বিতর্কের গুরুত্ব অপরিসীম এবং এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এই বিতর্কের মাধ্যমেই মানবিক মানুষ হওয়ার সুযোগ তৈরি হয়। কারণ, বিতর্কের মাধ্যমে যুক্তির চর্চা হয় এবং বিভিন্ন মতামতের গ্রহণযোগ্যতা এখানে থাকে। যার ফলে, বিতর্ক করে যে সকল বিজ্ঞ মানুষ তৈরি হয় তারা মানবিক পৃথিবী তৈরিতে ভূমিকা পালন করতে পারে। আগামীতে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলার জন্য এই ধরনের বিতর্কের মাধ্যমে যুক্তিশীল ও স্মার্ট জনবল তৈরি করতে হবে।

মুহসীন হল ডিবেটিং ক্লাবের সভাপতি ফুয়াদ হোসেন বলেন, হাজী মুহম্মদ মুহসীনের মানবিকতা সর্বজনবিদিত। মুহসীন হল ডিবেটিং ক্লাব বিশ্বাস করে, বর্তমান বিশ্বে ম্যাটারিয়ালিস্টিক চিন্তা-ভাবনার এই ক্ষণে মানুষের মধ্যে মানবিকতার যে চর্চা সেটি ক্রমেই হ্রাস পাচ্ছে। আমরা বিশ্বাস করি, এরকম বিতর্ক প্রতিযোগিতার মাধ্যমে বিতার্কিক এবং অন্যান্যদের মধ্যে আমরা যদি মানবিকতার চর্চাকে সমন্বিত করতে পারি, সেটি আদতে ব্যক্তিজীবনে, সমাজজীবনে এবং রাষ্ট্রীয় জীবনে ইতিবাচক প্রভাব নিয়ে আসবে। এই ধারণায় বিশ্বাস করেই মুহসীন হল ডিবেটিং ক্লাব এই আয়োজন করে থাকে। আমরা বিশ্বাস করি, যুগের সাথে তাল মিলিয়ে এই ধরনের প্রতিযোগিতা বিতার্কিক, সমাজ এবং বুদ্ধিবৃত্তিক জগতে নতুন চিন্তার খোরাক দিবে। একইসাথে, আগামীর সমাজ, রাষ্ট্র ও পরিবার মানবিক গুণাবলিতে প্রসিদ্ধ হবে।

এছাড়া অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মাহবুবা নাসরীন, হাজী মুহম্মদ মুহসীন হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মাসুদুর রহমান, মুহসীন হল ডিবেটিং ক্লাবের মডারেটর আইনুল ইসলাম, শরীয়তপুর জেলা পুলিশ সুপার মো. মাহবুবুল আলম এবং ঢাকা ইউনিভার্সিটি ডিবেটিং সোসাইটির সভাপতি মো. মাহবুবুর রহমান মাসুম বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিলেন।

দুই দিনব্যাপী এই বিতর্ক প্রতিযোগিতাটির মূল বিচারক পর্ষদে ছিলেন, অনিন্দ্য রহমান, জিহাদ আল মেহেদি, নিপু ইসলাম তন্নী ও আবু তাহের।