শীর্ষ র‍্যাংকিং-এ থাকা পাকিস্তানের বিপক্ষে বাংলাদেশের চ্যালেঞ্জ যেখানে

শীর্ষ র‍্যাংকিং-এ থাকা পাকিস্তানের বিপক্ষে বাংলাদেশের চ্যালেঞ্জ যেখানে

শীর্ষ র‍্যাংকিং-এ থাকা পাকিস্তানের বিপক্ষে বাংলাদেশের চ্যালেঞ্জ যেখানে

মুখোমুখি পরিসংখ্যান, বর্তমান র‍্যাংকিং এবং দলের পরিস্থিতি – সব বিচারে পিছিয়ে থেকে পাকিস্তানের বিপক্ষে এশিয়া কাপের সুপার ফোরের প্রথম ম্যাচে মাঠে নামছে আজ বাংলাদেশ।

কাগজে-কলমে পিছিয়ে থাকা বাংলাদেশ দলের জন্য সবচেয়ে বড় দু:সংবাদটা জানা যায় মঙ্গলবার, যখন ঘোষণা করা হয় যে এখন পর্যন্ত টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক নাজমুল হাসান শান্ত হ্যামস্ট্রিং ইনজুরির জন্য বাকি ম্যাচগুলোতে খেলতে পারবেন না।এমনিতেই টুর্নামেন্ট শুরুর আগে পেসার এবাদত হোসেনের ইনজুরি এবং প্রথম দুই ম্যাচে লিটন দাসকে বাংলাদেশ দল পায়নি ইনজুরির কারণে। এবার দলের মধ্যে সবচেয়ে ভাল ফর্মে থাকা ব্যাটসম্যান ছিটকে গেলেন টুর্নামেন্ট থেকে।

নাজমুল হোসেনের ইনজুরির খবর ঘোষণা হওয়ার আগেই অবশ্য সোমবার লিটন দাস লাহোরে যোগ দেন দলের সাথে। তার পরদিন আনুষ্ঠানিকভাবে জানা যায় শান্তর ইনজুরির খবর।তবে শুধু শান্তর ইনজুরি নয়, আরো বেশ কয়েকটি হিসেবে বিবেচনা করলে এই ম্যাচে পাকিস্তানের চেয়ে অনেক ক্ষেত্রেই পিছিয়ে থেকে খেলতে নামবে বাংলাদেশ।

র‍্যাংকিং ও সাম্প্রতিক পারফরমেন্স

গত এক বছরে ওয়ানডে ম্যাচের পরিসংখ্যান ও খেলোয়াড়দের পারফরমেন্সের হিসেবে বাংলাদেশের চেয়ে অনেক এগিয়ে রয়েছে পাকিস্তান। এ সময়ের মধ্যে খেলা ২১ ম্যাচের মাত্র তিনটিতে হেরেছে তারা।এই টুর্নামেন্টও তারা শুরু করেছে আইসিসি র‍্যাংকিংয়ে ওয়ানডে’র শীর্ষ দল হিসেবে।

দলের টপ অর্ডারের তিন ব্যাটসম্যানের সাম্প্রতিক পরিসংখ্যানো ঈর্ষণীয়। অধিনায়ক বাবর আজম আর দুই ওপেনিং ব্যাটসম্যান ফখর জামান ও ইমাম উল হক তিনজনই রয়েছেন আইসিসি’র ওয়ানডে ব্যাটসম্যানদের র‍্যাংকিংয়ে শীর্ষ পাঁচজনের মধ্যে।সাম্প্রতিক সময়ে দুই দলের মুখোমুখি পরিসংখ্যানে বাংলাদেশ কিছুটা এগিয়ে আছে বলা যায়। নিজেদের মধ্যে খেলা শেষ ৫ ওয়ানডে ম্যাচের চারটিতেই জিতেছে বাংলাদেশ।তবে সেটিও অন্তত ৫ বছর আগের কথা। আর সেই পাকিস্তান দলের সাথে এই দলের যথেষ্ট পার্থক্য রয়েছে।

ঐতিহাসিকভাবে পাকিস্তানের বিপক্ষেই সবচেয়ে বেশি সময় জয় না পেয়ে ছিল বাংলাদেশ। ১৯৯৯ সালে বিশ্বকাপে পাকিস্তানকে হারানোর পর থেকে ২০১৫ পর্যন্ত ১৬ বছরে ৪০টি ওয়ানডে ম্যাচে বাংলাদেশকে হারিয়েছে পাকিস্তান।আর পাকিস্তানের মাটিতে এখন পর্যন্ত ৫টি টেস্ট, ১১টি ওয়ানডে আর তিনটি টি টোয়েন্টি ম্যাচ খেললেও আজ পর্যন্ত স্বাগতিকদের হারানো হয়ে ওঠেনি বাংলাদেশের।

ম্যাচ ও মাঠের কন্ডিশন

গাদ্দাফি স্টেডিয়ামের পিচে সাধারণত ব্যাটসম্যানরা বোলারদের তুলনায় বেশি সুবিধা পেয়ে থাকে। এবারের এশিয়া কাপের দুই ম্যাচ আর সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান সেরকম ধারণা দেয়।এই মাঠে হওয়া শেষ ৫ ম্যাচের তিনটিতেই আগে ব্যাটিং করা দল তিনশ’র বেশি রান করেছে। মঙ্গলবার আফগানিস্তানের বিপক্ষে শ্রীলংকার স্কোর ছিল তিনশ’র কাছাকাছি।তাই স্বাভাবিকভাবেই ধারণা করা যায় যে টস জিতলে দুই দলই আগে ব্যাটিং করে বড় স্কোর ছুঁড়ে দিয়ে প্রতিপক্ষের ওপর চাপ তৈরি করতে পারবে।

আর আবহাওয়া পূর্বাভাস অনুযায়ী লাহোরে ম্যাচের দিন যথেষ্ট গরম থাকবে। তাই আগে ফিল্ডিং করে শক্তি ক্ষয় করতে চাইবে না হয়তো কোনো দলই।তবে এই পাকিস্তান দল এ ধরণের কন্ডিশনেও বড় রান তাড়া করার প্রমাণ দিয়েছে বেশ কয়েকবার। গত বছরের মার্চে এই মাঠেই অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৩৪৮ রান তাড়া করে জিতেছিল তারা।

স্বাভাবিক হিসেবে এই মাঠে স্পিনারদের খুব বেশি সুবিধা পাওয়ার কথা না। সেই অনুযায়ী এরই মধ্যে নিজেদের ঘোষনা করা দলে চার পেসার রাখার সিদ্ধান্ত জানিয়েছে পাকিস্তান। মোহাম্মদ নাওয়াজের জায়গায় খেলবেন মিডিয়াম পেসার ফাহিম আশরাফ, যিনি ব্যাট হাতেও বড় শট খেলতে পারেন।বাংলাদেশও হয়তো চিন্তা করবে একজন অতিরিক্ত পেসার দলে নিয়ে খেলা যায় কিনা। সেক্ষেত্রে একাদশ থেকে বাদ পড়তে পারেন আগের ম্যাচ খেলা আফিফ আহমেদ ও শামীম হোসেনের একজন।

যাদের ওপর নজর থাকবে

বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ের সবচেয়ে বড় ভরসার জায়গা নাজমুল হোসেন শান্ত না থাকায় অভিজ্ঞ সাকিব, মুশফিক, লিটনদের ওপর যে কিছুটা প্রত্যাশার চাপ বাড়বে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না।

লিটন দাস অসুস্থতা থেকে ফিরলেও ওপেনিংয়ে হয়তো দেখা যাবে তাকেই। ডান হাতি-বাম হাতি কম্বিনেশনের হিসেব করলে তার সাথে ওপেন করতে পারেন নাইম অথবা এক ম্যাচ খেলা তামিম।আগের ম্যাচে ওপেনিংয়ে নেমে সেঞ্চুরি করা মেহেদি মিরাজকে হয়তো শাহীন শাহ আফ্রিদি আর নাসিম শাহ এর মত ফাস্ট বোলারদের বিপক্ষে নতুন বল মোকাবেলা করতে দিতে চাইবে না বাংলাদেশ।তবে বাংলাদেশ তাকিয়ে থাকবে হয়তো অধিনায়ক সাকিব আল হাসানের দিকে। পাকিস্তানের বিপক্ষে সাকিবের পরিসংখ্যানও সেরকমই ইঙ্গিত দেয়।

ওয়ানডেতে পাকিস্তানের বিপক্ষে খেলা ১৬ ম্যাচে সাকিবের ব্যাটিং গড় ৪২.৫। বল হাতেও নিয়েছেন ৩৩ গড়ে ২১ উইকেট।অন্যদিকে পাকিস্তানের তিন ফাস্ট বোলারকে কীভাবে খেলা যায়, তা নিশ্চিতভাবে থাকবে বাংলাদেশের গেম প্ল্যানের কেন্দ্রে।নতুন বলে শাহীন শাহ আফ্রিদি আর নাসিম শাহ বিশ্বের যে কোনো পিচেই ভয়ংকর হয়ে উঠতে পারেন। প্রথম ছয় থেকে আট ওভার এই দুই বোলারের বিপক্ষে ব্যাট করা হতে পারে বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।

পাকিস্তানের টপ অর্ডার ব্যাটিংকে আটকাতেও নিশ্চিতভাবে আলাদা করে ভাবতে হচ্ছে বাংলাদেশকে। আগে ব্যাট করে বড় স্কোর ছুড়ে দিলেও এই ধরণের পিচে পাকিস্তানের ইনফর্ম ব্যাটিংয়ের বিপক্ষে জয়ের নিশ্চয়তা নেই।বাবর আজমের শেষ ২১টি ওয়ানডে ম্যাচে করা ৩টি সেঞ্চুরিতেই রান তাড়া করে দলকে জিতিয়েছেন। ফখর জামানের শেষ ছয় ম্যাচের স্কোর খুব একটা ভালো না হলেও এ বছরই নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে টানা তিন ম্যাচে সেঞ্চুরি করেন তিনি, যার মধ্যে রাওয়ালপিন্ডিতে দুই ম্যাচে তার সেঞ্চুরি আসে রান তাড়া করে।

সূত্র : বিবিসি