পাল্টা আক্রমণ চালাতে ইউক্রেনের হাতে সময় আছে এক মাস : যুক্তরাষ্ট্র

পাল্টা আক্রমণ চালাতে ইউক্রেনের হাতে সময় আছে এক মাস : যুক্তরাষ্ট্র

পাল্টা আক্রমণ চালাতে ইউক্রেনের হাতে সময় আছে এক মাস : যুক্তরাষ্ট্র

শীত শুরু হওয়ার আগে ইউক্রেনের পাল্টা আক্রমণ চালিয়ে যাওয়ার জন্য ৩০ দিনের কিছু বেশি সময় বাকি আছে বলে মন্তব্য করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের সেনা প্রধান জেনারেল মার্ক মিলে।বিবিসির সানডে উইথ লরা কুয়েনসবার্গ অনুষ্ঠানে এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, শীত চলে এলে ঠান্ডা আবহাওয়ায় ইউক্রেনের পক্ষে যুদ্ধে জেতা আরো কঠিন হয়ে উঠবে।তিনি স্বীকার করেছেন, যে হারে আক্রমণ হওয়ার কথা তার চাইতে ধীর গতিতে হয়েছে।তবে তিনি আরো বলেছেন, ‘এখন প্রচণ্ড লড়াই চলছে। ইউক্রেনিয়রা এখনো ধীর গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে।’

জেনারেল মিলে বলেছেন, ‘পাল্টা আক্রমণ ব্যর্থ হয়েছে কি-না তা বলার সময় এখনো হয়নি। তবে ইউক্রেন, রাশিয়ার ফ্রন্ট লাইনের মধ্য দিয়ে খুব ধীর গতিতে অগ্রসর হচ্ছে। এখনো যথেষ্ট সময় আছে, হয়ত ৩০ থেকে ৪৫ দিন লড়াই চালিয়ে যাওয়ার মতো অনুকূল আবহাওয়া থাকবে। তাই ইউক্রেনিয়দের লড়াই এখনো শেষ হয়নি। তাদের যুদ্ধ এখনো শেষ হয়নি। তারা লড়াইয়ের মাধ্যমে যা অর্জনের চেষ্টা করছে সেই লড়াই এখনো শেষ হয়নি।’

চলতি বছরের গ্রীষ্মে কিয়েভের পাল্টা আক্রমণ শুরু হয়েছিল এবং ওই সময়ের মধ্যে ইউক্রেনের রাশিয়া-অধিকৃত অঞ্চল মুক্ত করার লক্ষ্য ছিল, কিন্তু লক্ষ্য অনুযায়ী এখনো সামান্য অগ্রগতি হয়েছে।তবে ইউক্রেনের জেনারেলরা দাবি করেছেন, তারা দক্ষিণে রাশিয়ার শক্তিশালী প্রথম সারির প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ভেঙে দিয়েছেন।জেনারেল মিলে বলেছেন, ‘আমি এই যুদ্ধের একেবারে শুরুতে বলেছিলাম যে এই লড়াই দীর্ঘ সময়ব্যাপী, ধীর-স্থির, কঠিন এবং এতে অনেক হতাহতের হতে চলেছে এবং এখন তাই হচ্ছে।’

ওই সাক্ষাৎকারে, যুক্তরাজ্যের চিফ অফ ডিফেন্স স্টাফ এডিএম স্যার টনি রাদাকিন বলেছেন, ‘ইউক্রেন জিতছে আর রাশিয়া হেরে যাচ্ছে। এর কারণ রাশিয়ার লক্ষ্য ছিল ইউক্রেনকে পরাধীন করা এবং দেশটিকে রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে রাখা। সেটি ঘটেনি এবং সেটা ঘটবে না এবং এ কারণেই ইউক্রেন জিতছে।’তিনি আরো বলেন, ইউক্রেন তার ভূখণ্ড পুনরুদ্ধারের যুদ্ধে এগিয়ে যাচ্ছে। রাশিয়ার দখলকৃত অঞ্চলের ৫০ শতাংশ তারা পুনরুদ্ধার করেছে।তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় অর্থনৈতিক চাপ এবং কূটনৈতিক চাপ প্রয়োগ করায় রাশিয়া ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

রুশ ড্রোন হামলা ব্যর্থ : ইউক্রেন
কিয়েভে রোববার ভোরে রুশ ড্রোন হামলার পর বেশ কয়েকটি জেলায় ধ্বংসাবশেষ ছড়িয়ে পড়েছিল। তবে ওই হামলায় কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি বলে ইউক্রেনিয় কর্মকর্তারা দাবি করেছেন।

এর আগে রাজধানী কিয়েভে কমপক্ষে ১০টি বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়। ওই সময় বিমান হামলার সাইরেন বাজানো হয়, যা বাসিন্দাদের নিরাপদে আশ্রয় নেয়ার ব্যাপারে সতর্ক করে। পরে অল ক্লিয়ার বা আতঙ্কের কিছু নেই- এমন শব্দ বেজে ওঠে।কিয়েভের সামরিক প্রশাসনের প্রধান সেরহি পপকো বলেছেন, ধ্বংসাবশেষের কারণে একটি আবাসিক ভবনে আগুন ধরে যায়, তবে তা নিভিয়ে ফেলা হয়।এর আগেও কিয়েভে ড্রোন হামলা চালিয়েছে রাশিয়া।

রোববার নগর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, পডিলস্কি, সোভিয়াটোশিনস্কি ও শেভচেনকিভস্কি- এই তিন জেলা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।তিনটি জেলারই অবস্থান শহরের প্রাণকেন্দ্রের কাছাকাছি।কিয়েভের বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা শহরটিকে লক্ষ্য করে ছোড়া বেশিরভাগ রুশ ড্রোন এবং ক্ষেপণাস্ত্র ধ্বংস করতে কার্যকর প্রমাণিত হয়েছে।পপকো বলেন, রোববার ইরানের তৈরি প্রায় ২০টি শাহেদ অ্যাটাক ড্রোন ভূপাতিত করা হয়েছে।

তারা বিভিন্ন দিক থেকে ঝাঁকে ঝাঁকে কিয়েভের ওপর দিয়ে উড়ে যাচ্ছিল বলে তিনি জানান।বেশিরভাগ ধ্বংসাবশেষ খোলা প্রাঙ্গণে আছড়ে পড়েছিল, তবে কিছু গাড়ি এবং ট্রলি-বাসের তার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।তবে রাশিয়া বলেছে, তারা ক্রাইমিয়ান উপদ্বীপের কাছে, যা রুশ বাহিনী ২০১৪ সাল থেকে দখল করে আছে, সেখানে কৃষ্ণ সাগরের ওপর দিয়ে ইউক্রেনের ছোড়া আটটি ড্রোন ধ্বংস করেছে।ড্রোনকে মনুষ্যবিহীন এরিয়াল ভেহিকলও (ইউএভি) বলা হয়।

ইউক্রেন থেকে ছোড়া ড্রোন এর আগে মস্কোসহ রাশিয়ার অনেক ভেতরে গিয়ে পড়েছে এবং সম্প্রতি পেসকভের একটি সামরিক বিমানঘাঁটিতে অনেক বিমানের ওপরও আঘাত হেনেছে।তবে ইউক্রেনের কর্মকর্তারা সাধারণত এ ধরনের অভিযানে তাদের জড়িত থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করে না, আবার অস্বীকারও করেন না।

রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় আরো বলেছে, তাদের নৌ-বিমান ক্রাইমিয়ার দিকে যাওয়া ইউক্রেনের তিনটি সামরিক স্পিডবোট ধ্বংস করেছে।এতে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি নৌযানগুলোয় নৌ সেনারা ছিলেন। স্নেক আইল্যান্ডের উত্তর-পূর্ব দিকে ওইসব নৌযানে আঘাত হানা হয়, তবে বিবিসি এই তথ্য যাচাই করতে পারেনি।

এর আগে, ইউক্রেনের নতুন প্রতিরক্ষামন্ত্রী রুস্তেম উমেরভ পশ্চিমা মিত্রদের যুদ্ধে জয়ী হতে অস্ত্র সরবরাহ অব্যাহত রাখার আহ্বান জানান।তিনি বলেন, ‘এখন পর্যন্ত দেয়া সব ধরনের সহায়তার জন্য আমরা কৃতজ্ঞ। আমাদের আরো ভারী অস্ত্র দরকার এবং সেগুলো এখনই দরকার।’তিনি আরো বলেছিলেন, ‘ইউক্রেনিয় যোদ্ধারা আজ গণতন্ত্র ও স্বাধীনতার মূল মূল্যবোধের জন্য তাদের জীবন উৎসর্গ করছে এবং তাদের এখন আপনাদের সহায়তা দরকার।’
সূত্র : বিবিসি