আশীর্বাদের বৃষ্টি সবুজ পাহাড়ে জুমের হাসি

আশীর্বাদের বৃষ্টি সবুজ পাহাড়ে জুমের হাসি

ছবিঃ সংগৃহীত।

পাহাড়ের যেদিকে চোখ যায় দৃষ্টিজুড়ে জুম ফসল ও ছোট ছোট মাচাংঘর। স্থানীয়দের ভাষায় জুমঘর। এসব মাচাংঘরে থেকেই গত তিন থেকে ছয় মাস পাহাড়ের চূড়া ও পাদদেশে জুমের ফসল ফলিয়েছেন স্থানীয় জুম চাষি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর লোকজন। পার্বত্য জেলা রাঙামাটির লংগদু উপজেলার সাতটি ইউনিয়নে উঁচু পাহাড় ও টিলা মিলিয়ে শত শত একর পাহাড়ি জমিতে এবার জুম চাষ হয়েছে।

পাহাড়ে এবার প্রচুর পরিমাণে বৃষ্টিপাত হওয়ায় জুমের ফসল উৎপাদন খুব ভালো হয়েছে। ধানের পাশাপাশি এবার জুম ফসল মারফা, চিনাল, বেগুন, সিমাই আলু, কাঁচা মরিচ, তিল, সিম, আমিলা গোটা, কচু, সাবারাং (এক প্রকার সুগন্ধি যুক্ত পাতা), লাউ, চাল কুমড়া, কলা, আদা, হলুদের ব্যাপক মিশ্র চাষাবাদ হয়েছে।

উপজেলার লংগদু ইউনিয়নের দাদিপাড়ার বাসিন্দা রত্ন মোহন চাকমা বলেন, পাহাড়ে এবার জুমের প্রচুর ফলন হয়েছে। দাদিপাড়া ছাড়াও আশপাশের প্রায় আট থেকে দশ গ্রামের কথাও তুলে ধরেন তিনি। হাজা ছড়া, শিলাছড়ি, কার্বারি পাড়া, ডানে লংগদু সহ পাহাড়ি বিভিন্ন এলাকায় এবার জুমের ব্যাপক ফলন হয়েছে।

এরইমধ্যে বাজারে জুমের ফসল মারফা, চিনাল, বেগুন, পেপে, আদা, সাবারাং, কচু, বিভিন্ন ধরনের লাউ, কুমড়া বাজারে আসতে শুরু করেছে।

ডানে লংগদু গ্রামের জুম চাষি জয় সংকর চাকমা বলেন, এবার পাহাড়ে জুমচাষ খুব ভালো হয়েছে। প্রতি হাটবারে বাজারে প্রায় অর্ধ লক্ষাধিক টাকার জুম ফসল বিক্রি হচ্ছে।

অন্যদিকে আটারকছড়ার ভাঙ্গামুড়া, সুপারি পাতাছড়া, গুলশাখালীর গুরুসতাং, বগাচতরের হেলিপ্যাড, শিবেরেগা, ভাসান্যাদমের খাগড়াছড়ি সহ শিলকাটাছড়া অঞ্চল থেকেও ব্যাপক হারে বাজারে জুমের ফসল আসতে শুরু করেছে। যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি, নদীতে ভরা যৌবন থাকায় ইঞ্জিন চালিতবোট ও ছোট নৌকায় করে জুমের ফসল খুব সহজেই বাজারজাত করা যাচ্ছে।

কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, এবছর উপজেলায় ৫৫০ হেক্টর পাহাড়ি জমিতে জুমের চাষ হয়েছে। যা উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ১৩৭৫ মেট্রিকটন। আরও জানা যায়, জুম চাষিদের এবার কৃষি অফিস থেকে ব্রি-৪৮ জাতের ধান বীজ সহ উফশি জাতীয় ফসলের বীজ ও কীটনাশক বিতরণ করা হয়েছে। পাশাপাশি জুম চাষিদের বিভিন্ন পরামর্শ সহ সহযোগিতা করছে উপজেলা কৃষি অফিস।

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা রতন চৌধুরী বলেন, পাহাড়ে অনেক আগে থেকেই সনাতন পদ্ধতিতে জুমচাষ হয়। তবে এখন অনেক চাষিই কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরে যোগাযোগ করে আধুনিক চাষাবাদ প্রক্রিয়া রপ্ত করেছে। তাই আগের তুলনায় অনেক বেশি ফলন পাচ্ছে।

লংগদু উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জাহিদুল ইসলাম বলেন, পাহাড়ের আবহাওয়া খুব বৈচিত্র্যময়। সারাদিন রোদ আর রাত হলেই বজ্রসহ ভারী বৃষ্টি এমনটাই দেখছি। বৈচিত্র্যের কারণেই পাহাড়ের মাটিরও ভিন্ন রূপ। এই মাটিতে যা রোপন করা হোক না কেন খুবই চমৎকার ফলন হয়। এবার লংগদুতে জুমের ভালো ফলন হয়েছে।

যদিও পাহাড়ি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর হাড়ভাঙা খাটুনিতে জুমের এই ব্যাপক ফলন। তবুও উপজেলা প্রসাশনের পক্ষ থেকে জুম চাষিদের মিশ্রফল বাগান করতে উৎসাহিত করা হচ্ছে।