বগুড়ায় ডেঙ্গুর ভয়াবহতা বেড়েই চলছে

বগুড়ায় ডেঙ্গুর ভয়াবহতা বেড়েই চলছে

সংগৃহীত

বগুড়ায় ডেঙ্গুর ভয়াবহতা বেড়েই চলছে। হাসপাতালগুলোতে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা অন্যান্য বছরের চেয়ে অনেক বেশি। দিন যতই যাচ্ছে, পরিস্থিতি ততই ভয়াবহ হচ্ছে। আশঙ্কাজনকভাবে বেড়ে চলছে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা-পাল্লা দিয়ে বাড়ছে মৃত্যুও। এর মধ্যে গত ২৫ সেপ্টেম্বর বগুড়ায় ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়ে নারীসহ দুজনের মৃত্যু হয়েছে। চলতি বছরে এ পর্যন্ত বগুড়ায় মোট ৮১৫ জন ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছে। মৃত্যু হয়েছে ৮ জনের। বর্তমানে ভর্তি রয়েছেন ৩৪ জন। সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৭৩৩ জন।

জানা যায়, জুন মাস থেকেই ডেঙ্গু জ্বরের প্রাদুর্ভাব শুরু হয়। কিন্তু এবার বছরের শুরু থেকেই সর্বাধিক ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছে, আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে মৃত্যুও।

এদিকে, এডিস মশা নির্মূলে কার্যকর ও স্থায়ী কোনো সমাধান মিলছে না। জলবায়ু ও তাপমাত্রার ওঠানামার কারণেও ডেঙ্গু জায়গা করে নিয়েছে। আষাঢ়-শ্রাবণ এই দুই মাস বর্ষাকাল। কিন্তু এখন চলছে আশ্বিন মাস। জলবায়ুর পরিবর্তনের ফলে অসময়েও ভারী বৃষ্টিপাত হচ্ছে। এতে যত্রতত্র জমে থাকা পানিতে এডিস মশার বংশ বিস্তার বেড়েই চলেছে।

এ ছাড়াও বগুড়া শহরের যত্রতত্র ময়লা ফেলায় মশা-মাছি বৃদ্ধি পাচ্ছে। শহরের র‌্যাব অফিস সংলগ্ন, সেউজগাড়ী কারমাইকেল সড়কে, স্টেশন সড়কে, সপ্তবদী মার্কেটের দক্ষিণ পাশে, ফুলবাড়ীসহ বিভিন্ন স্থানে ময়লার ভাগাড়ে প্রতিদিন ময়লা-আবর্জনা ফেলা হচ্ছে। সময় মতো ময়লাগুলো অপসারণ না করায় সেখান থেকে দুর্গন্ধ ও রোগ জীবাণু ছড়াচ্ছে। একই সাথে মশা, মাছি বংশ বিস্তার করছে। সব মিলিয়ে কোনোভাবেই ডেঙ্গুর লাগাম টানা সম্ভব হচ্ছে না। অতিক্ষুদ্র এই মশার কামড় এতটাই বিপজ্জনক যে, আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসাসহ সেরে ওঠাই কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। অনেকের মৃত্যু নিশ্চিত হচ্ছে। গত কয়েক মাসে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ও মৃত্যুর চিত্র এমন বার্তাই দিচ্ছে বগুড়ায়। ডেঙ্গু রোগীর প্রধান চিকিৎসায় তরল ব্যবস্থাপনার অংশ হিসেবে স্যালাইন অতীব প্রয়োজনীয়। কিন্তু অনেক হাসপাতালে স্যালাইন সঙ্কট রয়েছে।

বগুড়ার সাধারণ জনগণ বলছেন, ডেঙ্গু এখন আর শুধুই বর্ষা মৌসুমের আতঙ্ক নয়। প্রায় সারা বছরই এই সঙ্কট মোকাবিলা করতে হচ্ছে। দিনকে দিন এর ভয়াবহতা বাড়ছে। এটি মোকাবিলায় দায়িত্বশীল সংস্থাগুলোর তৎপরতার পাশাপাশি সাধারণ মানুষকেও ব্যাপকভাবে সচেতন হতে হবে। এ ছাড়াও থেমে থেমে বৃষ্টি এডিস মশার বংশবৃদ্ধির অন্যতম কারণ। বিগত বছরগুলোর চেয়ে এ বছর ডেঙ্গু পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে।

বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, প্রতিবছর আগস্ট-সেপ্টেম্বর থেকে ডেঙ্গুর প্রকট বাড়লেও এ বছর আক্রান্তের আভাস ভিন্ন দেখা যাচ্ছে। এ বছরের আরো আগে থেকেই ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসছেন। হাসপাতালে এ পর্যন্ত ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়ে ৬১৮ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে মৃত্যুবরণ করেছেন ৭ জন। সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৫৮৪ জন। বর্তমানে চিকিৎসাধীন ২৭ জন। গত বছরের তুলনায় এ বছর রোগীর সংখ্যা বেশি। উন্নত চিকিৎসার উদ্দেশ্যে জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে স্বজনরা রোগীদের নিয়ে আসছেন।

বগুড়া মোহাম্মাাদ আলী হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, এ বছর ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়ে ১৯৭ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে একজন মৃত্যুবরণ করেছেন। সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ১৮৯ জন। বর্তমানে চিকিৎসার জন্য ভর্তি রয়েছেন সাতজন।

বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. মো. আব্দুল ওয়াদুদ জানান, জলবায়ুর পরিবর্তনের সাথে আবহাওয়ারও পরিবর্তন হয়েছে। তাই এখন বছরের যে কোনো সময় মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হতে পারে। বগুড়ায় নতুন করে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। বিশেষ করে ঢাকা থেকে ডেঙ্গু রোগের উপসর্গ নিয়ে অনেকেই বগুড়ায় আসছেন।

তিনি আরও জানান, প্রতিদিন জ্বর, ঠাণ্ডাসহ নানা উপসর্গ নিয়ে হাসপাতালে আসছেন রোগীরা। উপসর্গ দেখে যাদের শারীরিক অবস্থা জটিল তাদের হাসপাতালে ভর্তি করা হচ্ছে। আর যাদের শারীরিক অবস্থা আশঙ্কামুক্ত তাদের বাসায় চিকিৎসা নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। যারা ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত, তাদের পাশে সবসময় স্বজনদের থাকতে হবে। বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে ডেঙ্গু জ্বর চিকিৎসায় সর্বাধিক খোঁজ-খবর রাখা হচ্ছে যাতে বগুড়াবাসী নিরাপদ চিকিৎসা পান। ডাক্তার, নার্স সবাইকে নির্দেশ দেওয়া আছে ডেঙ্গু চিকিৎসায় কোনো গাফিলতি করা যাবে না।