বিএটির ফাঁকির ২০৫৪ কোটি টাকা আদায়ের নির্দেশ

বিএটির ফাঁকির ২০৫৪ কোটি টাকা আদায়ের নির্দেশ

ফাইল ছবি

শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত বহুজাতিক কোম্পানি ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকোর (বিএটি) ফাঁকি দেওয়া ২ হাজার ৫৪ কোটি টাকা আদায়ের নির্দেশ দিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।

এনবিআর জানিয়েছে, প্রায় ৬ বছর ধরে সরকারের এই পাওনা আটকে রয়েছে। পাওনা আদায়ে এনবিআর সদস্যকে প্রধান করে কমিটি করা হয়েছে। কমিটির সদস্যরা সর্বসম্মতিক্রমে বহুজাতিক কোম্পানিটির ফাঁকি দেওয়া ভ্যাটের টাকা আদায়ের নির্দেশ দিয়েছে।

এর আগে এনবিআরের বৃহৎ করদাতা ইউনিট এলটিইউর (ভ্যাট) গঠিত কমিটি আর্থিক প্রতিবেদনসহ সার্বিক বিশ্লেষণ করে ২ হাজার ৫৪ কোটি টাকার চূড়ান্ত দাবিনামা জারি করে। পরবর্তী সময়ে একই অফিসের আরেক কমিটি পাওনা নেই বলে আরেকটি প্রতিবেদন দেয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে এনবিআর উচ্চপর্যায়ের আরেকটি কমিটি গঠন করে এক মাসের মধ্যে প্রতিবেদন জমার নির্দেশ দেয়।

তদন্ত কমিটি সংশ্লিষ্ট কমিশনারেটের কমিশনার, যুগ্ম কমিশনার থেকে যারা দাবি নেই বলে প্রতিবেদন দিয়েছিলেন সবার বক্তব্য গ্রহণ করে। উচ্চপর্যায়ের কমিটির সদস্যরা এনবিআরের পাওনার বিষয়ে একমত পোষণ করেন। যদিও বহুজাতিক কোম্পানির কাছে ভ্যাটের টাকা পাবে না বলে যে যুগ্ম কমিশনার প্রতিবেদন দিয়েছিলেন, সেই যুগ্ম কমিশনার ইমতিয়াজ এই কমিটির কাছে পাওনা বাতিল করার ব্যাখ্যা আমলে নেওয়ার মতো নয় বলেও কমিটিকে মতামত দিয়েছেন।

এনবিআরের একটি সূত্র বলছে, যাদের কারণে ঘটনা ঘটেছে বা কারা এই পাওনা বাতিল করেছেন বা এই ঘটনায় কোনো কর্মকর্তার সম্পৃক্ততা রয়েছে কি না, তা খুঁজে বের করতে নির্দেশ দিয়েছেন এনবিআর চেয়ারম্যান। এনবিআরের গঠিত কমিটি কর্মকর্তাদের শুনানি গ্রহণ করলেও কোম্পানিকে চিঠি দিয়ে শুনানিতে নিয়ে আসা যায়নি। প্রতিষ্ঠানটি এই বিষয়ে শুনানিতে অংশ নেয়নি। তারা আদালতে রিট করবে বলে জানিয়েছে।

এর আগে ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকোর চূড়ান্ত দাবিনামার বিষয়টি পুনঃপরীক্ষণের বিষয়ে উচ্চপর্যায়ের কমিটি গঠন করে এনবিআর। এতে এনবিআরের মূসক নিরীক্ষার দায়িত্বপ্রাপ্ত সদস্য ড. শহিদুল ইসলামকে আহ্বায়ক করে ছয় সদস্যের কমিটি করা হয়। কমিটিতে সদস্য সচিব ছিলেন ভ্যাট গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. আব্দুর রউফ। কমিটির অন্য সদস্যরা ছিলেন ঢাকা উত্তর ভ্যাটের কমিশনার নেয়াজুর রহমান, দক্ষিণ ভ্যাটের কমিশনার শওকত আলী সাদী, পশ্চিমের অতিরিক্ত কমিশনার কাজী জিয়া উদ্দিন, পূর্বের উপকমিশনার মোস্তাফিজুর রহমান।

ওই কমিটি গত সপ্তাহে এনবিআর চেয়ারম্যানের কাছে প্রতিবেদন দেয়। এনবিআর চেয়ারম্যান অনুমোদনের পর বিষয়টি আদেশ আকারে জারি করা হয় ২১ সেপ্টেম্বর। এরই মধ্যে বিষয়টি নিয়ে কাজ শুরু করেছে এলটিইউ ভ্যাট।

এই বিষয়ে বৃহৎ করদাতা ইউনিটের (ভ্যাট) মুখপাত্র ও যুগ্ম কমিশনার আব্দুল রশীদ মিয়া বলেন, ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকোর ভ্যাট-সংক্রান্ত এনবিআরের একটি আদেশের কপি এলটিইউতে এসেছে। এনবিআরের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পরবর্তী কার্যক্রম গ্রহণ করব।

এলটিইউ ভ্যাট সূত্রে জানা গেছে, ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো ২০১৬ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ে স্থানীয়ভাবে সংগ্রহ করা (ওভারহেড কস্ট) তামাক পাতার সংগ্রহের খরচ প্রতিষ্ঠানটির আর্থিক বিবরণীতে ছিল না। সেই হিসাবে স্থানীয় তামাক পাতা সংগ্রহের খরচ হলেও সেই ভ্যাট প্রতিষ্ঠানটি ভ্যাট অফিসকে দেয়নি।

পরে এলটিইউ ভ্যাটের পক্ষ থেকে ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকোর ভ্যাট নির্ধারণে কমিটি গঠন করা হয়। তদন্ত শেষে কমিটি বহুজাতিক এই সিগারেট কোম্পানির কাছে ২ হাজার ৫৪ কোটি টাকা ভ্যাট বাবদ পাওনা আদায়ের সুপারিশ করে। পরবর্তী সময়ে ভ্যাট আইনে ৫৫-এর ৩ ধারা অনুযায়ী চূড়ান্ত দাবিনামা জারি করা হয় এলটিইউ থেকে। এতে নড়েচড়ে বসে প্রতিষ্ঠানটি। পরে এলটিইউ ভ্যাটে আসেন কমিশনার ওয়াহিদা রহমান চৌধুরী। তিনি বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে কথা বলেন এবং বিএটির শুনানি শেষে প্রতিষ্ঠানটির কাছে পাওনা বাতিলের বিচারাদেশ করেন।

তবে বিষয়টি নিয়ে অন্ধকারে ছিল জাতীয় রাজস্ব বোর্ড। এই বিচারাদেশের কারণে ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকোও তাদের কাছে ভ্যাটের পাওনা অস্বীকার করছে। এই জটিলতা নিরসনে তদন্ত কমিটি করেছে এনবিআর। সর্বশেষ কমিটি বিশাল অঙ্কের এই রাজস্ব আদায় করতে সংশ্লিষ্ট কমিশনারেটকে নির্দেশ দিয়েছে।