রূপপুর বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জ্বালানি হস্তান্তর আজ

রূপপুর বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জ্বালানি হস্তান্তর আজ

সংগৃহীত

আরও এক ইতিহাসের অংশ হতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। দেশের সবচেয়ে বড় মেগা প্রকল্প রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের (আরএনপিপি) পারমাণবিক জ্বালানি হস্তান্তর অনুষ্ঠান (গ্র্যাজুয়েশন অনুষ্ঠান) আজ বৃহস্পতিবার (৫ অক্টোবর)। ঈশ্বরদীর প্ল্যান্ট সাইটে এই অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হবে। এর মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে পারমাণবিক ক্লাবের ৩৩তম সদস্য হচ্ছে বাংলাদেশ।

পরমাণু হস্তান্তর অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের ভার্চুয়ালি যোগ দেয়ার কথা রয়েছে। দেশটির বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক মন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন। আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থার (আইএইএ) মহাপরিচালক রাফায়েল গ্রসি অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি উপস্থিত থাকবেন। রোসাটমের মহাপরিচালক অ্যালেক্সি লিখাচেভও রূপপুর সাইটে উপস্থিত থাকবেন।

পরমাণু হস্তান্তরকে কেন্দ্র করে এরই মধ্যে সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে রূপপুর প্রকল্প কর্তৃপক্ষ। বর্ণিল আয়োজনে সাজানো হয়েছে পুরো প্রকল্প এলাকা।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, দুই নেতার ভার্চুয়াল প্লাটফর্মের মাধ্যমে পারমাণবিক জ্বালানির সনদ ও মডেল হস্তান্তর অনুষ্ঠানে যোগদান করার কথা রয়েছে।

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সচিব মো. আলী হোসেন বলেন, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ঐতিহাসিক অনুষ্ঠান এবং পারমাণবিক জ্বালানির সনদ ও মডেল হস্তান্তরের সব আয়োজন সম্পন্ন হয়েছে। আমরা সফলভাবে কর্মসূচি পালনের জন্য প্রস্তুত। অতিথিরা চারটি পয়েন্ট থেকে অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন ও বক্তৃতা দেবেন।

রূপপুর বিদ্যুৎ প্রকল্পটি মোট ২ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট সক্ষমতার। দুটি ইউনিটে বিভক্ত এ প্রকল্পের প্রথম ইউনিটের কাজ এরই মধ্যে ৯০ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে এবং দ্বিতীয় ইউনিটের কাজ ৭০ শতাংশ এগিয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রকল্পসংশ্লিষ্টরা।

প্রকল্প এলাকা পরিদর্শনে গিয়ে গতকাল ইয়াফেস ওসমান বলেন, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র দেশের জিডিপিতে ২ শতাংশ অবদান রাখবে। সঞ্চালন লাইনসহ অন্যান্য অবকাঠামো তৈরি হওয়ার পরই পরীক্ষামূলক উৎপাদন শুরু হবে। ২০২৫ সালের শুরুতে প্রথম ইউনিটের বাণিজ্যিক বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হবে। উত্তরবঙ্গের পিছিয়ে পড়া জনগণ এ প্রকল্প থেকে উপকৃত হবে।

বাংলাদেশ আইএইএর গভর্নিং বডির সদস্য নির্বাচিত হয়েছে। ইউরেনিয়াম প্রকল্প এলাকায় আসার পরই এটি পারমাণবিক স্থাপনা হিসেবে স্বীকৃতিও পেয়েছে। বাংলাদেশ নিউক্লিয়ার ক্লাবের ৩৩তম সদস্য হতে যাচ্ছে উল্লেখ করেন প্রযুক্তিমন্ত্রী।

ওয়ার্ল্ড নিউক্লিয়ার অ্যাসোসিয়েশনের ওয়েবসাইট অনুসারে পরমাণু শক্তি ব্যবহারকারী দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, চীন, ফ্রান্স, রাশিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া, কানাডা, ইউক্রেন, জার্মানি, জাপান, স্পেন, সুইডেন, বেলজিয়াম, যুক্তরাজ্য, ভারত, চেক প্রজাতন্ত্র, ফিনল্যান্ড, সুইজারল্যান্ড, বুলগেরিয়া, পাকিস্তান, হাঙ্গেরি, স্লোভাকিয়া, ব্রাজিল, দক্ষিণ আফ্রিকা, মেক্সিকো, রোমানিয়া, আর্জেন্টিনা, সংযুক্ত আরব আমিরাত, বেলারুশ, স্লোভেনিয়া, নেদারল্যান্ডস, ইরান ও আর্মেনিয়া।

গত ২৮ সেপ্টেম্বর রাশিয়া থেকে দেশে আসে রূপপুর বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জ্বালানি। কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে পরদিনই তা প্রকল্প এলাকায় নেয়া হয়। রূপপুর প্রকল্পসংশ্লিষ্ট সূত্র জানা গেছে, জ্বালানি হস্তান্তর হওয়ার এক বছর পর অর্থাৎ আগামী বছরের সেপ্টেম্বরে কেন্দ্রটির প্রথম ইউনিট পরীক্ষামূলক উৎপাদনে যাবে।

বিষয়টি নিয়ে প্রকল্প পরিচালক ড. মো. শৌকত আকবর বলেন, আগামী বছরের সেপ্টেম্বরে পরীক্ষামূলক উৎপাদনে যাবে রূপপুরের প্রথম ইউনিট। প্রথমে ইউনিটটি উৎপাদন সক্ষমতার ২০-৩০ শতাংশ এবং পরে ৫০ শতাংশে যাবে। এভাবে কয়েক ধাপে টানা প্রায় ১০ মাসে শতভাগ পরীক্ষামূলক উপাদনে যাবে কেন্দ্রটি। তবে এ ইউনিটের বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু হবে ২০২৫ সালের শুরুর দিকে।’

প্রকল্পসংশ্লিষ্টরা জানান, ইউরেনিয়াম হলো পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির জ্বালানি। কেন্দ্রটি উৎপাদনে আনার চূড়ান্ত ধাপ এটি। এটি হস্তান্তরের পর কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু হবে। পরীক্ষা-নিরীক্ষার কাজ চলবে বছরজুড়ে।

রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের প্রকল্পটি দেশের সবচেয়ে বড় একক প্রকল্প। এটি নির্মাণে ব্যয় হচ্ছে ১ হাজার ৩৫০ কোটি মার্কিন ডলার বা ১ লাখ ৪৮ হাজার ৫০০ কোটি টাকা (প্রতি ডলার ১১০ টাকা ধরে)। মোট ব্যয়ের প্রায় ৮০ শতাংশ অর্থ রাশিয়া ঋণ হিসেবে দিচ্ছে।

রূপপুর বিদ্যুৎ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন পরমাণু শক্তি কমিশন। এ প্রকল্পের আওতায় ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াটের দুটি ইউনিট নির্মাণ করছে রাশিয়ার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান অ্যাটমস্ট্রয় এক্সপোর্ট। পারমাণবিক জ্বালানি উৎপাদন করছে রোসাটমের সহযোগী প্রতিষ্ঠান টিভিইএল ফুয়েল কোম্পানি।