কেমন আছে মহাকবি মাইকেল মধুসূদনের সাগরদাঁড়ী?

কেমন আছে মহাকবি মাইকেল মধুসূদনের সাগরদাঁড়ী?

কেমন আছে মহাকবি মাইকেল মধুসূদনের সাগরদাঁড়ী?

 ‘‘সতত, হে নদ তুমি পড় মোর মনে

সতত তোমার কথা ভাবি এ বিরলে’’

ফ্রান্সের ভার্সাই নগরীতে প্রবাস জীবনে অবস্থান কালে প্রিয় জন্মভূমির প্রিয় স্থান কপোতাক্ষ নদ কবিতাটি রচনা করেন বাংলা সাহিত্যের সনেট ও অমিত্রাক্ষর ছন্দের প্রবক্তা মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত।

ঊনবিংশ শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ বাঙালি কবি এবং নাট্যকার ও প্রহসন রচয়িতা তিনি। যাকে বাংলার নবজাগরণ সাহিত্যের অন্যতম পুরোধা ব্যক্তিত্ব এবং আধুনিক বাংলা সাহিত্যের প্রথম বিদ্রোহী কবি গণ্য করা হয়।

বাংলা সাহিত্যের প্রথম অমিত্রাক্ষর ছন্দে ‘মেঘনাদবধ’ মহাকাব্যটি রচনা করেছিলেন তিনি। প্রথম পত্রকাব্য ‘বীরাঙ্গনা’ ছাড়াও বাংলাতেই তিনিই প্রথম চালু করেছিলেন প্রবহমান ‘পয়ার ছন্দ’।

এই সেই ঐতিহাসিক কপোতাক্ষ নদ। যে নদকে বাংলাদেশের সীমানা পেরিয়ে বিশ্ব পরিমন্ডলে পরিচিতি এনে দিয়েছিলেন ১৩টি ভাষা জ্ঞান ও আইন বিষয়ে পারদর্শী কবি মধুসূদন দত্ত। এই নদের তীরেই কেটেছে কবির শৈশব। বর্তমানে কপোতাক্ষ তীরে নির্মাণ করা হয়েছে সান বাধানো ঘাট ও পর্যটকদের জন্য হাটা রাস্তা। পাশেই রয়েছে মাইকেল মধুসূদন পাঠাগার। তার সামনে শোভা পাচ্ছে কবির ভাস্কর্য।

দর্শনার্থীরা বলেন, মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের বাড়িতে এসে আমরা বিভিন্ন স্পট দেখার সুযোগ মেলে। কপোতাক্ষ নদের তীরে যেখানে কবিতার মহিমা এবং ছন্দ তুলতেন তা স্বচক্ষে দেখে আমরা স্মৃতিকাতর হই। এখান থেকে অনেক কিছু শেখারও আছে বলে মনে করেন তারা।  

১৮২৪ সালের ২৫ জানুয়ারি যশোর জেলা শহর থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার দূরে কেশবপুরের নিভৃত মধুপল্লী সাগরদাঁড়ির এই দত্ত বাড়িতে জন্ম গ্রহণ করেন কবি। কবির পিতা রাজনারায়ন দত্তের তৈরি বাড়িটি বর্তমানে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের অধিন জাতীয় সম্পদ হিসেবে রক্ষণাবেক্ষণ করা হচ্ছে। বাড়ির সামনে নির্মিত কবির আবক্ষ। ঘাটে সান বাধানো পুকুর। বাড়ির শোভা বর্ধনকারী গেট দর্শনার্থীদের স্মরণ করিয়ে দেয় কবির সম্ভ্রান্ত কায়স্থ বংশের জৌলুস। বাড়ির ভেতর জাদুঘরে স্বযতেœ এখনো সংরক্ষণ করা হচ্ছে ঐ সময়ের মূল্যবান আসবাবপত্র।

মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের জন্মদিবস উপলক্ষ্যে সাগরদাঁড়ীর মাইকেল মধুসূদন ইনস্টিটিউট প্রাঙ্গনে নির্মিত মধুমে  আয়োজন করা হয় জমজমাট সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, আলোচনা সভা ও মধুমেলার।

কবির জীবন ছিল নাটকীয় এবং বেদনাঘন। মাত্র ৪৯ বছর বয়সে ১৮৭৩ সালের ২৯ জুন কলকাতায় মৃত্যু হয়। তার সমাধিস্থলে খোদাই করা কবির রচিত ‘সমাধি-লিপি’ কবিতার পঙক্তিমালা।

‘‘দাঁড়াও পথিক-বর, জন্ম যদি তব

বঙ্গে! তিষ্ঠ ক্ষণকাল! এ সমাধিস্থলে’’