গাজার হাসপাতালে ইসরায়েলি বিমান হামলা, নিহত ৫০০

গাজার হাসপাতালে ইসরায়েলি বিমান হামলা, নিহত ৫০০

সংগৃহীত

ইসরায়েলি বিমান হামলায় গাজা শহরের আল-আহলি আরব হাসপাতালে শত শত ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। ধারণা করা হচ্ছে যে কমপক্ষে ৫০০ ফিলিস্তিনি মারা গেছেন। 

এ হাসপাতালটিতে হাজার হাজার লোক চিকিৎসা নিচ্ছেন। অনেকে এখানে আশ্রয় নিয়েছিলেন ভারী বোমা হামলা থেকে বাঁচতে।

প্রাথমিকভাবে যেটা জানা যাচ্ছে তা হচ্ছে গাজা ভূখন্ডের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত ব্যাপটিস্ট হসপিটালে এই ইসরায়েলি বিমান হামলা হয়েছে। আল-জাজিরা টিভি চ্যানেলে প্রকাশিত ফুটেজে দেখা গেছে, হাসপাতালের প্রায় সব জায়গায় মানুষের তাজা রক্ত পড়ে আছে। 

গাজার হামাস নিয়ন্ত্রিত সরকার হাসপাতালের উপর এ হামলাকে ‘যুদ্ধাপরাধ’ হিসেবে অভিহিত করেছে।

বিবিসির সংবাদদাতা টম বেটম্যান আল আহলি আরব হাসপাতালে পৌঁছিয়েছেন। তিনি জানান, চার দিকে রক্তাক্ত, নিস্তব্ধ মানুষগুলো পড়ে আছেন। বিদ্যুৎ নেই, তাই অন্ধকারের মধ্যেই তাদের স্ট্রেচারে করে হাসপাতালে নিয়ে আসা হচ্ছে।

হাসপাতালের বাইরে লাশ পড়ে আছে, বিধ্বস্ত গাড়ি দেখতে পাচ্ছেন বিবিসি সংবাদদাতা।

কিছু ভিডিও বিবিসির কাছে এসেছে, যেগুলো যাচাই করে দেখা সম্ভব হয়নি। ওই ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে একটা বিরাট বিস্ফোরণ হচ্ছে।

স্থানীয়রা বলেছেন, হাসপাতালের একটা বড় হলে আশ্রয় নিয়েছিলেন কয়েক শ’ মানুষ।

অসামরিক প্রতিরক্ষা কর্মীরা জানান, ইসরায়েলি বিমান হামলার কারণেই ওই বিস্ফোরণ ঘটে। কয়েক শ’ মানুষ ধ্বংস্তূপে আটকিয়ে পড়েছেন।

এ ইসরায়েলি বিমান হামলার পর ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ-এর (পিএ) প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস তিন দিনের শোক ঘোষণা করেছেন।

ইরান, তুরস্ক, কাতার, মিশর এবং জর্ডান আল-আহলি আল-আরব হাসপাতালে ইসরায়েলি বিমান হামলার নিন্দা করেছে। 

ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র নাসের কানানি এই হামলাকে যুদ্ধাপরাধ ও গণহত্যার নৃশংস কাজ বলে নিন্দা করেছেন।

এর আগে জানা যায় যে গাজার একটি বিদ্যালয়ের ওপরেও ইসরায়েলি বিমান হামলা হয়। জাতিসংঘ বলেছে, ওই হামলায় অন্তত ছয়জন মারা গেছেন যারা ওই স্কুলে আশ্রয় নিয়েছিলেন। ওই বিমান হামলায় আরও অনেকে আহত হয়েছেন বলে আনুষ্ঠানিকভাবে জানিয়েছে ইউএনআরডব্লিউএ।

এ বিষয়ে জাতিসংঘের ত্রাণ বিষয়ক সংস্থা ‘ইউএন রিলিফ অ্যান্ড ওয়ার্কস এজেন্সি’ থেকে তামারা আল-রিফাই বলেছেন, ওই এলাকায় সরাসরি বোমাবর্ষণ করেছে ইসরায়েল। অথচ এটা ছিল একটি শরণার্থী কেন্দ্র। এটা একটি মর্মান্তিক ঘটনা। এটি আন্তর্জাতিক মানবিক আইনের অত্যন্ত দুঃখজনক লঙ্ঘন।’

অপরদিকে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন যে এই অঞ্চলে ইরানপন্থী গোষ্ঠীগুলো কয়েক ঘণ্টার মধ্যে ইসরায়েলবিরোধী সামরিক অভিযান শুরু করতে পারে।

এদিকে জাতিসংঘের ত্রাণ ও কর্ম সংস্থা বলেছে, গাজায় মৃতদেহ রাখার জন্য পর্যাপ্ত বডি-ব্যাগ নেই।

এর আগে সোমবার ইসরায়েলি ও পশ্চিমা সংবাদমাধ্যমগুলো জানিয়েছিল যে সকাল ৯টা থেকে যুদ্ধবিরতি হবে। সেই সময় গাজা থেকে বিদেশিরা মিসরের রাফাহ ক্রসিং দিয়ে বের হতে পারবেন এবং গাজায় মানবিক ত্রাণ পৌঁছতে পারবে। তবে খবর প্রকাশের পর এমন তথ্য অস্বীকার করে ইসরায়েল।

চিকিৎসা সরঞ্জামের অভাব ও বিদ্যুৎ সরবরাহের ঘাটতির কারণে গাজার হাসপাতালগুলো ‘কবরস্থানে’ পরিণত হয়েছে বলে জানিয়েছে মানবিক সহায়তা সংস্থা রেড ক্রস।

ইসরায়েলের অব্যাহত বিমান হামলায় কার্যত ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে গাজা। এ যেন মৃত্যু আর আতঙ্কের উপত্যকা। আকাশে যুদ্ধবিমানের বিকট শব্দ। চারদিকে বিধ্বস্ত ভবনের ইট-পাথর।

ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের সর্বাত্মক অবরোধ আরোপের কারণে হাসপাতালগুলোতে ফুরিয়ে আসছে জ্বালানি। আর মাত্র ২৪ ঘণ্টার মতো জ্বালানি মজুত আছে বলে সতর্ক করেছে জাতিসংঘ।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি জানিয়েছে, বিশ্ব সংস্থাটির মানবিক দফতরের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, ‘জেনারটরের ব্যাপকআপ না থাকায় হাজার হাজার রোগীর জীবন চরম ঝুঁকির মুখে পড়তে যাচ্ছে।’

ইসরায়েলি হামলায় ধ্বংসযজ্ঞ গাজায় সুপেয় পানি ও ত্রাণ সরবরাহ পাঠানোর সুযোগ করে দিতে এর আগে অনুরোধ জানিয়েছিল একাধিক ত্রাণ সংস্থা।

সূত্র : মিডল ইস্ট আই, আল-জাজিরা, বিবিসি