১০ হাজার বাঁশ দিয়ে পুকুরের ওপর পূজা মণ্ডপ!

১০ হাজার বাঁশ দিয়ে পুকুরের ওপর পূজা মণ্ডপ!

সংগৃহীত

১০ হাজার বাঁশ ও কাঠ  ব্যবহার করে পুকুরের ওপর ব্যতিক্রম ৮টি পূজামণ্ডপ নির্মিত হয়েছে রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দির জামালপুর ইউনিয়নের আলোকদিয়া গ্রামে। একজন দর্শনার্থীর ব্যতিক্রম এই পূজামণ্ডপ পুরোটা ঘুরে দেখতে হলে তাকে হাঁটতে হবে ১৪২৮ ফুট। দেবী দুর্গার সাথে মণ্ডপে ঠাঁই পেয়েছে সনাতন ধর্মের বিভিন্ন কাহিনী অবলম্বনে নির্মিত ৩০০ প্রতিমা।

সেই সাথে সরকারের উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের একটি বিশেষ চিত্র ফুটিয়ে তুলেছে জামালপুর ও আলোকদিয়া উত্তরপাড়া সার্বজনীন শ্রী শারদীয় দুর্গাপূজা উদযাপন কমিটি। স্বপ্নের পদ্মা সেতু ও ঢাকা মেট্রোরেল তৈরি করা হয়েছে মণ্ডপের মধ্যে। মেট্রোরেলের যাত্রী হিসেবে রয়েছেন বিভিন্ন সময়ে পৃথিবীতে জন্ম নেওয়া সনাতন ধর্মের ২০ জন মনীষী। মেট্রোরেল পরিদর্শন শেষে দর্শনার্থীরা পদ্মাসেতু পাড়ি দিয়ে উপভোগ করবেন শ্রীকৃঞ্চের কুঞ্জুবন, দক্ষযজ্ঞ, সতীর দেগত্যাগ, সতীর দেহ থেকে ৫১টি তীর্থ ক্ষেত্র।

পুকুরের ওপর নির্মিত মণ্ডপে প্রবেশের সময়ই দেখা মেলবে বিশালকৃতির শিবের প্রতিমা। এরপর মূল প্রবেশ পথ দিয়ে কিছুটা আগালেই চোখে পড়বে বড় মন্দির। সেখানেই দর্শনার্থীদের জন্য তুলে ধরা হয়েছে দক্ষযজ্ঞের কাহিনী। দক্ষযজ্ঞ থেকে শুরু করে সতীর পুনর্জন্ম ও ৫১টি শক্তিপীঠের কাহিনী নিয়ে সাজানো হয়েছে প্রতিমাগুলো। এরপর একেএকে ৩০০টি প্রতিমা সাজিয়ে রাখা হয়েছে। শেষ মণ্ডপে দেখা মিলবে কুঞ্জবনে শ্রীকৃঞ্চের শৈশব। এরপরই দেবীর ঘটকে বিদায়ের একটি দৃশ্য। দেবী ঘটকে বিদায়ের দৃশ্য দেখার শেষেই দর্শনার্থীরা প্রবেশ করবেন মূল পূজা মণ্ডপে।

প্রতিমা তৈরির কারিগর সুজিত কুমার পাল ও বাঁশ দিয়ে তৈরি মন্দির নির্মাণের কারিগর জ্ঞানেন্দ্রনাথ মন্ডল জানান, তাঁরা ৩৫ জন কারিগর তিন মাস ধরে মন্দির ও প্রতিমা তৈরির কাজ করেছেন। পুরো মণ্ডপ তৈরি করতে ১০ হাজার বাঁশ লেগেছে।

 

ভারতের কলকাতা থেকে আগত দর্শনার্থী কেকা চ্যাটার্জি জানান,  তাঁরা প্রতি বছরই দুর্গাপূজার ষষ্ঠী ও সপ্তমীতে বাংলাদেশে থাকার চেষ্টা করেন। আর বাংলাদেশে থাকলে তাঁরা পানির ওপর নির্মিত এই ব্যতিক্রম পূজামণ্ডপ দেখতে বালিয়াকান্দি আসেন। তাঁরা মনে করেন এটি দারুণ একটা আইডিয়া। একটি মণ্ডপ ঘুরে দেখলেই সনাতন ধর্মের অনেক কাহিনী ও ইতিহাস জানা যায়। এ ধরনের আয়োজনের জন্য তাঁরা আয়োজক কমিটিকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। 

ফরিদপুরের বোয়ালমারি শাহ জাফর টেকনিক্যাল কলেজের প্রভাষক বিপুল কুমার মন্ডল জানান,  দেশে অনেক দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হলেও এটির ভিন্নতা রয়েছে। প্রতি বছর পরিবারসহ এই মণ্ডপে আসেন তিনি। 

আয়োজক কমিটির সদস্য দেবাশীষ বিশ্বাস জানান, ১০ বছর ধরে এখানে তাঁরা ব্যতিক্রমী দুর্গাপূজার আয়োজন করে থাকেন। করোনার কারণে অনেকটাই ভাটা পড়েছিল। এবার সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে তাঁরা জাকজমক ভাবে আয়োজন করেছেন। এই আয়োজন থাকবে লক্ষীপূজা পর্যন্ত। আবহাওয়া ও পরিবেশ অনুকূলে থাকলে এ বছর দেশিবিদেশী ৫ লাখ ভক্ত ও দর্শনার্থী মণ্ডপে আসবেন বলে ধারণা করছেন। 

 

পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি বিধান ভট্রাচার্য বলেন, তাঁদের এই আয়োজনটি দেশ সেরা। এমন আয়োজন আর কোথাও হয় না। তাঁদের এই ব্যতিক্রমী আয়োজন দেখতে দেশের বিভিন্ন জেলা ও প্রতিবেশি দেশ ভারত থেকেও দর্শনার্থী আসেন। 

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রেজাউল করিম জানান, জেলার প্রতিটি পূজা মণ্ডপের নিরাপত্তায় পুলিশ দায়িত্ব পালন করছেন। আলোকদিয়ার আয়োজনটি একেবারেই ভিন্ন ও ব্যতিক্রম। এখানে দর্শনার্থীর সংখ্যা বিবেচনায় রেখে পূজা মন্ডটি তিন স্তরের নিরাপত্তা দেওয়া হয়েছে। 

ব্যতিক্রম এই পূজা মণ্ডপের আয়োজনটি গত বৃহস্পতিবার উদ্বোধন করেন রাজবাড়ী-২ আসনের সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা মো: জিল্লুল হাকিম। শুক্রবার সন্ধ্যায় মণ্ডপটি পরিদর্শনে আসেন ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার মো: সাবিরুল ইসলাম। এ সময় উপস্থিত ছিলেন জেলা প্রশাসক আবু কায়সার খান, পুলিশ সুপার জি. এম আবুল কালাম আজাদ, ইউএনও রফিকুল ইসলাম প্রমূখ।