নেদারল্যান্ডসের কাছে লজ্জার পরাজয় বাংলাদেশের

নেদারল্যান্ডসের কাছে লজ্জার পরাজয় বাংলাদেশের

সংগৃহীত

আফগানিস্তানের বিপক্ষে জয়ের পর টানা চার ম্যাচ হারে ব্যাকফুটে ছিল বাংলাদেশ। এরপর আশা বাঁচিয়ে রাখতে নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে ম্যাচটিই ছিল জয়ের ধারায় ফেরার শেষ সম্বল। কিন্তু সেই আশাও এবার মিলিয়ে গেল হতাশায়। আনকোরা ডাচদের কাছে পাত্তাই পেল না সাকিব বাহিনী। লজ্জার হারে বিশ্বকাপ থেকে বিদায় নিশ্চিত করল লাল-সবুজের দল।

শনিবার (২৮ অক্টোবর) কলকাতার ইডেন গার্ডেন্সে চলমান ওয়ানডে বিশ্বকাপে নিজেদের ষষ্ঠ ম্যাচে প্রথমে ব্যাট করে নির্ধারিত ৫০ ওভারে সবকটি উইকেট হারিয়ে ২২৯ রান করে ডাচরা। জবাবে লক্ষ্য তাড়ায় নেমে ৪২.২ ওভারে ১৪২ রানেই গুঁটিয়ে যায় টাইগাররা। এতে ৮৭ রানের লজ্জার হার নিয়ে মাঠ ছাড়ে বাংলাদেশ দল। এই হারে বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে যাওয়ার যে ক্ষীণ আশা জেগে ছিল সেটাও শেষ হয়ে গেল।

রান তাড়ায় শুরুতেই বিদায় নেন ওপেনার লিটন দাস। দলীয় ১৯ রানের মাথায় উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে বিদায় নেন লিটন (৩)। ডাচদের পরের শিকার তানজিদ তামিম। পরের ওভারেই মাঠছাড়া হন তামিম। জোড়া ধাক্কা খাওয়ার পর নাজমুল হোসেন শান্তও পারলেন না হাল ধরতে। পুরো বিশ্বকাপে ভুগতে থাকা শান্ত আজ বিদায় নিলেন ৯ রান করে।

দলের বিপদে যথারীতি হতাশ করেছেন সাকিবও। অধিনায়ক অবশ্য উইকেট উপহার দিয়ে আসলেন। ডাচ বোলার পলের অফ স্টাম্পের বাইরের বাউন্স বল চাইলে অনায়সে ছেড়ে দিতে পারতেন অধিনায়ক। সেটা না করে মারলেন খোঁচা। আর আউট হয়ে ফিরলেন ৫ রানে। একের পর উইকেট হারানোর ভিড়ে চোখেমুখে ধোঁয়া দেখছিল বাংলাদেশ। মাঝে মুশফিকুর রহিমও বিদায় নিলেন।

এরপর উইকেটে গিয়ে লেজের ব্যাটারদের নিয়ে আর কতটুকুই বা করার ছিল মাহমুদউল্লাহর। তিনি চেষ্টা করেছেন। কিন্তু আগের ম্যাচের মতো পারেননি শেষ পর্যন্ত টিকে থাকতে। দলীয় ১১৩ রানে বিদায় নেন মাহমুদউল্লাহ। ২০ রান করে তার বিদায়ের পর শেষ হয়ে যায় বাংলাদেশের সব আশা। বাংলাদেশকে থামিয়ে ইডেনে জয়ের রূপকথা লিখল স্কট এডওয়ার্ডসের দল। আর হেরে মাথা নিচু করে মাঠ ছাড়ল বাংলাদেশকে।

অথচ আজ বোলিংটা ঠিকঠাকই হয়েছল বাংলাদেশের। নেদারল্যান্ডসকে থামিয়ে দিয়েছিল মাত্র ২২৯ রানে। ইডেনের মাঠভর্তি দর্শকদের সামনে ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারেই সাফল্য পেয়ে যায় বাংলাদেশ। চোট কাটিয়ে ফেরা তাসকিন আহমেদের বলে ফ্লিক করতে গিয়ে ক্যাচ তুলে দেন বিক্রাম সিং। মিডঅফে সেই ক্যাচ লুফে নিতে ভুল করেননি সাকিব আল হাসান। দলীয় ৩ রানে প্রথম উইকেট হারায় ডাচরা, বিক্রামও করেন ৩ রান।

পরের ওভারেই দ্বিতীয় ধাক্কাটি দেন শরিফুল ইসলাম। প্রথম ওভারে ৩ রান দেওয়া শরিফুল নিজের দ্বিতীয় ওভারেই ফেরান ম্যাক্স ও’ডাউডকে। তরুণ এই পেসারের অফ স্টাম্পের বেশ বাইরের বল মোকাবিলায় ক্যাচ তুলে দেন। স্লিপে থাকা তানজিদ তা লুফে নিয়ে উচ্ছ্বাসে মাতেন।

মাত্র ৪ রানে জোড়া ধাক্কা খাওয়ার পরও নুয়ে যায়নি নেদারল্যান্ডস। তৃতীয় উইকেটে প্রতিরোধ গড়ে তোলে তারা। দলীয় ৬৩ রানে সেই জুটি ভাঙে বাংলাদেশ। বোলিংয়ে এসে মুস্তাফিজুর রহমান এসে ভাঙেন ওয়েসলি বারেসির প্রতিরোধ। মুস্তাফিজের বলে পিচের উপরেই বল তুলে দেন বারেসি। ছুটে এসে ক্যাচ নেন সাকিব আল হাসান। ৪১ বলে ৪১ রান করে থামেন তিনি।

পরের ওভারে সাকিবই পান উইকেটের দেখা। কোলিনকে থামিয়ে নিজের প্রথম শিকার তুলে নেন সাকিব। ৬৩ রানে ৪ উইকেট হারানোর পর কিছুটা চাপে পড়ে ডাচরা। তবে সেই চাপ সামলে আরেকটি জুটি পেয়ে যায় নেদারল্যান্ডস। উইকেটে এসে জুটি বাধেন ডে লেডে ও স্কট এডওয়ার্ডস। এই জুটিতে দুজন যোগ করেন ৪৪ রান। ২৭তম ওভারে এই জুটি ভাঙেন তাসকিন। মুস্তাফিজের হাতে ক্যাচ দেওয়ার আগে ৩২ বলে ১৭ রান করে বিদায় নেন ডে লেডে।

পরের জুটিতেও শক্ত প্রতিরোধ গড়ে নেদারল্যান্ডস। এবার স্কটের সঙ্গে জুটি বাধেন সাইব্রেন্ড। এই জুটিতে রানের গতি বাড়িয়ে নেয় ডাচরা। দুজন মিলে স্কোরবোর্ডে যোগ করেন ৭৮ রান। জমে যাওয়া এই জুটি ভেঙে বাংলাদেশকে স্বস্তি দেন মুস্তাফিজ। বাঁহাতি পেসারের বলে ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে মিরাজের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন স্কট এডওয়ার্ডস। ৬৮ রান করে থামেন ডাচ অধিনায়ক। ৮৯ বলে তার ইনিংস সাজানো ছিল ৬ বাউন্ডারিতে।

এরপর সাইব্রান্ডের প্রতিরোধ থামান মিরাজ। থিতু হওয়া জুটি ভাঙার পরও শেষ দিকে লেজের ব্যাটিংয়ে ভর করে ২২৯ রানে গিয়ে থামে নেদারল্যান্ডস।

বাংলাদেশের হয়ে বল হাতে ৪৩ রান দিয়ে দুটি উইকেট নেন চোট কাটিয়ে ফেরা তাসকিন আহমেদ। ৩৬ রান খরচায় মুস্তাফিজের শিকার দুটি। মেহেদী ও শরিফুলও নেন দুটি উইকেট। সাকিব এক উইকেট নিতে দিয়েছেন ৩৭ রান।