ইন্দোনেশিয়ায় ফিলিস্তিনের সমর্থনে ৩ ধর্মের বিশাল সমাবেশ

ইন্দোনেশিয়ায় ফিলিস্তিনের সমর্থনে ৩ ধর্মের বিশাল সমাবেশ

ইন্দোনেশিয়ায় ফিলিস্তিনের সমর্থনে ৩ ধর্মের বিশাল সমাবেশ

হামাস-ইসরাইল যুদ্ধের চলমান ইস্যুতে গুটিকয়েক দেশ দখলদারদের পক্ষ নিলেও বিশ্বের বেশিরভাগ মানুষ মজলুম ফিলিস্তিনের পক্ষে নিজেদের অবস্থান ব্যক্ত করছে। তারই ধারাবাহিকতায় এবার ইন্দোনেশিয়ায় ফিলিস্তিনিদের সমর্থনে অনুষ্ঠিত হলো ৩ ধর্মের অনুসারীদের বিশাল সমাবেশ।

রোববার দেশটির রাজধানী জাকার্তার জাতীয় মনুমেন্ট কমপ্লেক্সে সমাবেশটি অনুষ্ঠিত হয়। এতে অংশ নেয় হাজার হাজার ফিলিস্তিনি সমর্থক। দি ইন্দোনেশিয়ান ওলামা কাউন্সিল আয়োজিত আন্তর্ধর্মীয় এ সমাবেশে মুসলিমদের পাশাপাশি খ্রিস্টান ও বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরাও অংশ নেন। তাছাড়া দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেতনো মারসুদিসহ সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারাও উপস্থিত হন।

সেদিন সকাল থেকেই তারা সাদা পোশাক পরে ন্যাশনাল মনুমেন্ট স্কয়ারে জড়ো হন। তাদের মাথায় ছিল সাদা ও কালো রঙের ঐতিহ্যবাহী ফিলিস্তিনি স্কার্ফ ‘কেফিয়্যাহ’। আর হাতে ছিল ফিলিস্তিনের পতাকা। অবিলম্বে গাজায় যুদ্ধবিরতি ও আন্তর্জাতিক আদালতে ইসরাইলি নৃশংসতার তদন্তের দাবি জানিয়ে ‘আল্লাহু আকবার’ ধ্বনি দিতে থাকেন তারা। এ সময় তারা ইসরাইলি পণ্য বয়কট, উপনিবেশবাদের অবসান ও স্বাধীন ফিলিস্তিন গঠনে বিশ্ব নেতৃত্বকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।

রেতনো মারসুদি বলেন, ‘আজ আমরা মানবতার প্রতি আমাদের সংহতি জানাতে নিজেদের বৈচিত্র্য নিয়ে এখানে সমবেত হয়েছি। ইন্দোনেশিয়া সরকারের পক্ষ থেকে আমরা ফিলিস্তিন জাতির সংগ্রামের প্রতি ইন্দোনেশিয়ার সমর্থন আবার নিশ্চিত করতে চাই। ফিলিস্তিন, তুমি আমার ভাই। আমি ও আমার ইন্দোনেশিয়া সব সময় তোমার সাথে থাকব। আমার ইন্দোনেশিয়া এবং আমি সব সময় তোমার সাথে রয়েছি, যতক্ষণ না উপনিবেশকারীরা তোমার বাড়ি ছেড়ে না যায়। গাজায় প্রতি ১০ মিনিটে একটি শিশু হত্যা করা হচ্ছে।
হাজার হাজার মাতাপিতা তাদের সন্তানদের হারিয়েছে। হাজার হাজার শিশু তাদের মাতাপিতাকে হারিয়েছে। আমার ইন্দোনেশিয়া ও আমি কখনো সাহায্য করা থেকে পিছপা হবো না।’

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ ইন্দোনেশিয়া একটি বৈচিত্র্যপূর্ণ ও বহু সাংস্কৃতিক একটি দেশ। ফিলিস্তিনের প্রতি সমর্থন জানিয়ে দেশটি ইসরায়েলের সাথে কোনো কূটনৈতিক সম্পর্ক রাখেনি। দেশটির দীর্ঘকাল ধরে ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে দখলদারির অবসান এবং ১৯৬৭ সালের আগের সীমারেখার ভিত্তিতে দ্বিরাষ্ট্রীয় সমাধানের জন্য আহ্বান জানিয়ে আসছে।

সমাবেশে অংশ নেয়া ৪০ বছর বয়সী ইসিয়ানা আরথারিনি বলেন, ‘একজন সাধারণ ব্যক্তি হিসেবে আমি পুরোপুরি শক্তি ও সামর্থ্যহীন। সর্বনিম্ন আমি যা করতে পারি তা হলো তাদের প্রতি সমর্থন দেখানো।’ পরিবারসহ সমাবেশে অংশ নেওয়া বারলিয়ান ইদরিস বলেন, ‘আহত ফিলিস্তিনি শিশুদের ছবি ও গাজায় ইসরাইলের ধ্বংসযজ্ঞের ছবি আমাকে কাঁদিয়েছে। আমরা হিতাহিত জ্ঞানসম্পন্ন মানুষ। আমরা ইসরাইলের নৃশংসতার নিন্দা জানাচ্ছি। আমরা ফিলিস্তিনকে সমর্থন করি এবং অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির দাবি জানাই।’

২২ বছর বয়সী সায়িফা বলেন, ‘আমি এই সমাবেশে অংশ নিয়েছি যেন আমি মানুষকে দেখাতে পারি যে ইন্দোনেশিয়ায় অনেক মানুষ আছে, যারা ফিলিস্তিনি ইস্যুতে খুবই সোচ্চার। আমি মনে করি, মানবতার জন্য আপনার কণ্ঠস্বর উঁচু করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ, বিশেষত ফিলিস্তিনি ইস্যুতে বর্তমানে যা ঘটছে তা কোনো সঙ্ঘাত নয়, তা সুস্পষ্ট গণহত্যা।’

সূত্র : আরব নিউজ ও আলজাজিরা