গার্মেন্টস শ্রমিক আন্দোলনে বিএনপির ইন্ধন রয়েছে : স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

গার্মেন্টস শ্রমিক আন্দোলনে বিএনপির ইন্ধন রয়েছে : স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

গার্মেন্টস শ্রমিক আন্দোলনে বিএনপির ইন্ধন রয়েছে : স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

পোশাক শ্রমিকদের বেতন বাড়ানোর আন্দোলনে বিএনপির ইন্ধন রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান।রবিবার (১২ নভেম্বর) সচিবালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এসব কথা বলেন।তিনি বলেন, বিএনপির কর্মীরাই গার্মেন্টস শ্রমিকদের উসকে দিচ্ছে। সব দিকে ফেল করে গার্মেন্টস খাতে অস্থিরতা সৃষ্টির চেষ্টা করছে বিএনপি।

মন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী এর আগেও গার্মেন্টস কর্মীদের বেতন বাড়িয়েছেন, আবার বেতন বাড়িয়েছেন। গার্মেন্টস সমস্যা মালিক সমাধান করবে।

রাজনৈতিক প্রতিহিংসায় বিএনপি নেতাদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে, জাতিসংঘের এমন বক্তব্যে মন্ত্রী বলেন, এ কথা সঠিক নয়। তারা ২৮ তারিখ একজন পুলিশকে হত্যা করেছেন, অনেককে আহত করেছে।তিনি আরও বলেন, আমি মনে করি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সঠিক কাজ করছেন। নেত্রীকে পিটানো, বিচারপতির বাড়িতে হামলা, পুলিশকে হামলা এসব ঘটনা ভিডিও দেখে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে।

এদিকে বেগম জিয়ার বিদেশে চিকিৎসার সুযোগ দিয়ে মুক্তি দিতে, জাতিসংঘের মানবাধিকার প্রধানের বক্তব্যে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, সাজা স্থগিত করে বাসায় রেখে চিকিৎসা ব্যবস্থা করে দিয়েছে প্রধানমন্ত্রী।

মন্ত্রী আরও বলেন, বিদেশ গেলে কী হবে জানি না। তবে বিদেশ থেকে চিকিৎক আনার সুয়োগ করে দিয়ে সর্বোচ্চ চিকিৎসার করা হয়েছে।তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশন তফসিল ঘোষণা করলে, নির্বাচনে আসবে কি না তাদের বিষয়।মন্ত্রী বলেন, গাড়ি-ট্রেন সব চলছে, মানুষের মধ্যে একটা আতঙ্ক কাজ করছে। এ ছাড়া যারা পেট্রোলের বোতল নিয়ে ঘুরছে তাদের জনগণই প্রতিহত করবে।

ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণ করে দেওয়ার পরেও তৈরি পোশাক শিল্পে অস্থিরতা চলছে- এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমাদের কাছে যে তথ্য আছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাদের ৫৬ দশমিক ২৫ শতাংশ মজুরি বাড়িয়েছেন। শ্রম মন্ত্রণালয়ের পরামর্শ অনুযায়ী পোশাক ব্যবসায়ীরা এই বেতন বাড়িয়েছেন। ৮ হাজার থেকে সাড়ে ১২ হাজার টাকা করেছেন।

তাদের মনে অনেক সংশয় আছে বলে আমরা শুনতে পেয়েছি যে সেকেন্ড গ্রেড, থার্ড গ্রেড- এগুলোর কী হবে? গার্মেন্টেসের মালিকপক্ষ এগুলোর সমাধান করে দেবেন। তারাও তো ব্যবসা করেন।আগুন, ভাঙচুর কিংবা রাস্তা অবরোধ করে এই সমস্যার সমাধান হবে না বলেও জানিয়েছেন আসাদুজ্জামান খান।

তিনি বলেন, সবচেয়ে প্রণিধানযোগ্য হচ্ছে, বিক্ষোভের যেসব ভিডিও ফুটেজ পাচ্ছি, তাতে দেখা যাচ্ছে- এরা সবাই বিএনপির কর্মী। কুষ্টিয়ার এক বিএনপির নেতা কোণাবাড়িতে এসে গার্মেন্টস কর্মীদের ঐক্যবদ্ধ করছিলেন। এভাবে যারা ক্যামেরাবন্দি হয়েছেন কিংবা ধরতে পেরেছি, তারা সবাই বিএনপির কর্মী বলে আমাদের কাছে তথ্য আছে।তারা নিরীহ শ্রমিকদের ইন্ধন দিচ্ছেন, তাদের জড়ো করছেন। সব জায়গায় ব্যর্থ হয়ে এই জায়গায় এসে সফলতা পাওয়া যায় কি না, তারই একটা ব্যবস্থা তারা করতে চাচ্ছেন।

আমি মনে করি, শ্রমিকদের যদি আরও কিছু দাবি থাকে, তাহলে তা বিজিএমই’র নেতাদের সঙ্গে বসে ফয়সালা করা যাবে। সেগুলো না করলে নিজেদের ও দেশের ক্ষতি হচ্ছে বলে তাদের চিন্তা করা উচিত।

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার চিকিৎসা নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, দেশের সেরা হাসপাতাল থেকে তিনি চিকিৎসা সেবা নিচ্ছেন এবং বিদেশ থেকেও বিশেষজ্ঞরা এসে তাকে চিকিৎসা দিচ্ছেন। কাজেই চিকিৎসার ঘাটতি হচ্ছে বলে আমার মনে হচ্ছে না।কয়েকদিন পর আগামী জাতীয় নির্বাচনের তফসিল হবে। কিন্তু বর্তমানে যেভাবে অবরোধের নামে গাড়ি পোড়ানো হচ্ছে, এ নিয়ে মানুষের মধ্যে আতঙ্ক রয়েছে।

নির্বাচন পর্যন্ত কী এভাবে চলতে থাকবে, প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি তো সেটা বলিনি। আমি বলেছি, তাদের চরিত্রই এমন। তারা সবসময়ই সন্ত্রাস ডেকে ষড়যন্ত্র করে একটা অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে এসব কর্মসূচি দিচ্ছে।

আমি কয়েকটি উদহারণও দিয়েছি। সময়মতো নির্বাচনের ডাক দেবে নির্বাচন কমিশন, সবাই সেখানে অংশ নেবেন। এমনটিই জনগণের প্রত্যাশা।আমরা এখনো বলি, তারা নির্বাচনে আসবেন, নির্বাচন ছাড়া সরকার পাল্টানোর আর কোনো সুযোগ নেই। কাজেই নির্বাচনে তাদের আসতে হবে, যদি সরকার পরিবর্তন করতে চায়।

যারা জ্বালাও-পোড়াও করছেন, তাদের খুঁজে খুঁজে বের করছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, এ বিষয়ে আমরা আইনগত ব্যবস্থা নিচ্ছি। এ দেশের জনগণও যথেষ্ট সজাগ হয়েছে। জনগণও তাদের ধরিয়ে দিচ্ছে। আমরা অনেক জায়গায় দেখেছি, যারা পেট্রোলের বোতল নিয়ে দৌড়াদৌড়ি করছেন, তাদের জনগণ ধরিয়ে দিচ্ছেন। জনগণ যখন ঘুরে দাঁড়াবে, তখন এগুলো অটোমেটিক (এমনি এমনি) বন্ধ হয়ে যাবে।

বিএনপির জ্যেষ্ঠ নেতারা কারাগারে, এ অবস্থা থাকলে তারা নির্বাচনে আসবেন কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নির্বাচনে আসবেন কি- আসবেন না, এটা তাদের এখতিয়ার। আমাদের কথা হচ্ছে, ২৮ অক্টোবরের সমাবেশ ঘিরে লঙ্কাকাণ্ডের আগে আমরা বিএনপির কোনো নেতা-কর্মীদের ধরিনি। সেখানে যখন নৃশংসতা ও বর্বরতা চলছে, তখন তারা মঞ্চে বসে ছিলেন। তারা তো দুঃখ প্রকাশ করতে পারতেন জাতির উদ্দেশ্যে যে আমাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে গিয়ে উচ্ছৃঙ্খল কিছু কর্মী এসব করেছে। এটা আমাদের কাম্য ছিল না।

কিন্তু দুঃখ প্রকাশের পরিবর্তে তারা অব্যাহত হরতালের ডাক দিয়েছেন। একজন বাসের হেল্পার শুয়ে ছিলেন, বাস পাহারা দিচ্ছিলেন, তাকেসহ পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে বাসটি।এতে কী প্রমাণ হয়? বিএনপির বড়ো বড়ো নেতারা কী দায় এড়াতে পারবেন?তারা বলতে পারতেন- তোমরা বাসে আগুন দিও না, তোমরা এই মানুষ হত্যা কর না।স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বিএনপি নেতাদের শুভবুদ্ধির উদয় হবে, তারা এসব থেকে বিরত থাকবে বলেই আশা করছি।

সূত্র : ইউএনবি