স্কুলের বাইরে ছুরি হামলাকে কেন্দ্র করে ডাবলিনে দাঙ্গা

স্কুলের বাইরে ছুরি হামলাকে কেন্দ্র করে ডাবলিনে দাঙ্গা

ছবিঃ সংগৃহীত।

স্কুলের ঠিক বাইরেই ছুরি নিয়ে হামলা চালালো এক দুষ্কৃতকারী। হামলায় তিন শিশুসহ আহত হন চারজন। আর এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে দাঙ্গা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে আয়ারল্যান্ডের রাজধানী ডাবলিনে।

 

দোকানপাট লুট, বাস-গাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়া, পুলিশের ওপর হামলা। বাদ গেলো না কিছুই। বিক্ষোভকারীদের দাবি, শরণার্থী ও আশ্রয়প্রার্থীদের তাড়াতে হবে আয়ারল্যান্ড থেকে।

ঘটনার সূত্রপাত হয় স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার দুপুর দেড়টা নাগাদ। ডাবলিনের পার্নেল স্কোয়ারে একটি স্কুলের বাইরে শিশুসহ বেশ কয়েকজনের ওপর ছুরি নিয়ে হামলা চালায় এক ব্যক্তি। গুরুতর আহত হয় বেশ কয়েকজন। আহতদের মধ্যে রয়েছে শিশুও ৷ তবে তাদের আঘাত ছিল কম। আহত হন এক তরুণীও। তবে, জনসাধারণই ওই হামলাকারীকে নিরস্ত্র করে। সেই সময় হামলাকারীও আহত হয়।

 

পুলিশ শুধু জানিয়েছিল, আততায়ীর বয়স পঞ্চাশের ঘরে। কিন্তু, সোশ্যাল মিডিয়ায় সে কোন দেশের নাগরিক, এই নিয়ে গুজব ছড়িয়ে পড়ে। আর এরপরই ডাবলিনের ও’কনেল স্ট্রিটকে কেন্দ্র করে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে। রাস্তায় নেমে আসেন শরণার্থী বিরোধী বিক্ষোভকারীরা। শরণার্থীদের বের করে দাও’ বলে, স্লোগান দিতে থাকেন তারা। কেউ কেউ ‘আইরিশ লাইভস ম্যাটার’ লেখা পোস্টারও এনেছিলেন। দ্রুতই সহিংসতায় রূপ নেয় বিক্ষোভ। ড্যানিয়েল ও’কনেলের মূর্তির সামনে একটি ডবল ডেকার বাসে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। কাছাকাছি অবস্থিত বেশ কয়েকটি দোকান ও রেস্তোরাঁয় ভাঙচুর চালানো হয়। বেশ কয়েকটি দোকানে লুটপাটও করে বিক্ষোভকারীরা।

সহিংসাত রোধে প্রায় ৪০০ পুলিশ মোতায়েন করা হয় সেখাানে। এরপর পুলিশের সঙ্গেও সংঘর্ষে জড়য় বিক্ষোভকারীরা। পুলিশের একটি গাড়িও পুড়িয়ে দেওয়া হয়। পুলিশকে লক্ষ্য করে কাচের বোতল, পাথর, এমনকি আতশবাজি ছুড়তে শুরু করে বিক্ষোভকারীরা। প্রায় তিন ঘণ্টা পর, স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার রাত ৯টা নাগাদ বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয় পুলিশ। তবে, তারপরও উত্তেজনা কমেনি। বন্ধ রাখা হয়েছে ও’কনেল স্ট্রিটের যান চলাচল। সেখানে অবস্থিত একটি হাসপাতালেও মানুষকে না আসার পরামর্শ দিয়েছে আইরিশ পুলিশ।

দাঙ্গা পরিস্থিতি সৃষ্টির জন্য ‘অতি-ডানপন্থিদের’ দায়ী করেছেন পুলিশ কমিশনার ড্রু হ্যারিস। তিনি বলেছেন, এই দৃশ্য কলঙ্কজনক। এই চরম সহিংসতার পিছনে রয়েছে একটি অতি-ডানপন্থি মতাদর্শের সম্পূর্ণ উন্মাদ, গুন্ডা প্রকৃতির গোষ্ঠী। তারা ভুল তথ্য ছড়িয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করছে। আইরিশ বিচারমন্ত্রী হেলেন ম্যাকান্টি বলেছেন, একদল ঠগ, অপরাধী, বিভেদকামী এই ভয়ঙ্কর হামলাকে তাদের নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করছে। শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার জন্য পুলিশ সম্ভাব্য সব রকম শক্তিকে কাজে লাগাচ্ছে। এটা সহ্য করা হবে না।

ডাবলিনে এমন দাঙ্গা বা সহিংসতা প্রায় নজিরবিহীন। আইরিশ সংসদে কোনো অতি ডানপন্থি দল বা রাজনীতিবিদ নেই। তবে গত কয়েক বছরে সেই দেশে শরণার্থী বিরোধী ছোট ছোট বিক্ষোভের সংখ্যা ক্রমে বাড়ছে। আয়ারল্যান্ডের মোট জনসংখ্যা ৫৩ লাখ। ইউক্রেনে রুশ সামরিক অভিযান শুরুর পর থেকে প্রায় ১ লাখ ইউক্রেনীয় উদ্বাস্তু আয়ারল্যান্ডে আশ্রয় নিয়েছেন। ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের মধ্যে, এই দেশেই সবথেকে বেশি ইউক্রেনিয় নাগরিক আশ্রয় নিয়েছেন।